বাংলাদেশ

বর্ষার শেষে বেপরোয়া ডেঙ্গু, আরও ৩ মৃত্যু

Advertisement

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। বর্ষার শেষ সময়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আগস্ট মাসের শুরুতেই আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন অনুযায়ী, নতুন মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে চলতি বছর ডেঙ্গুতে মোট প্রাণহানি দাঁড়িয়েছে ৯২ জনে। শুধু আগস্টের প্রথম ছয় দিনেই ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

ডেঙ্গুর বর্তমান চিত্র: বাড়ছে আক্রান্ত, বাড়ছে উদ্বেগ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪২৮ জন রোগী। এর মধ্যে ঢাকায় ২১৫ জন এবং ঢাকার বাইরে ২১৩ জন।

মারা যাওয়া তিনজনের মধ্যে একজন ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। বাকি দুজনের মধ্যে একজন চট্টগ্রাম বিভাগ এবং অন্যজন রাজশাহী বিভাগের বাসিন্দা।

ডেঙ্গুর অতীত চিত্র ও চলতি বছরের তুলনা

২০২৪ সালে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন। মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। সেটিই ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। আর ভর্তি রোগীর দিক থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ।

চলতি বছর এখনো পর্যন্ত সেই রেকর্ডের কাছাকাছি পৌঁছাতে না পারলেও বর্ষা শেষে যে হারে রোগী বাড়ছে, তা বিশেষজ্ঞদের চিন্তায় ফেলেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৪৭ হাজারের বেশি মানুষ।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা: বর্ষা শেষে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা শেষে পানি জমে থাকা জায়গাগুলোয় মশার প্রজনন বৃদ্ধি পায়। এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানি পছন্দ করে, আর ঠিক এ সময়েই তাদের সংখ্যা বাড়ে। ফলে ডেঙ্গুর বিস্তারও বাড়ে।

জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর একজন মহাপরিচালক বলেন, “বৃষ্টির পানি জমে থাকার ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে আরও বাড়তে পারে। এখনই প্রয়োজন স্থানীয় সরকার ও নাগরিকদের সম্মিলিত সচেতনতা।”

ডেঙ্গু রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কম, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছেন। তাছাড়া যেসব এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য নয়, সেখানে মৃত্যু হারও তুলনামূলক বেশি।

এছাড়াও, যেসব মানুষ দেরিতে চিকিৎসা গ্রহণ করেন বা প্রাথমিক উপসর্গকে অবহেলা করেন, তারা মারাত্মক জটিলতায় ভুগতে পারেন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী করণীয়?

সরকারি ও স্থানীয় পর্যায়ের উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়েও ডেঙ্গু প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি।

নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি:

  • বাড়ির আশেপাশে পানি জমে থাকতে না দেওয়া
  • ফুলের টব, পরিত্যক্ত টায়ার, প্লাস্টিক বা কন্টেইনারে পানি জমে আছে কিনা নিয়মিত দেখা
  • দিনে ও রাতে মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য মশারি বা রিপেলেন্ট ব্যবহার
  • উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া

উপসর্গ দেখা দিলে কী করবেন?

ডেঙ্গুর সাধারণ উপসর্গ হলো:

  • জ্বর (৩-৭ দিন ধরে থাকতে পারে)
  • মাথাব্যথা
  • চোখের পেছনে ব্যথা
  • শরীর ব্যথা, হাড় ও গাঁটে ব্যথা
  • ত্বকে র‍্যাশ
  • বমি বমি ভাব বা বমি

এই উপসর্গগুলোর মধ্যে একাধিক দেখা গেলে দেরি না করে কাছাকাছি হাসপাতালে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

বিশ্লেষকদের মতে, যদি দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোতে প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা প্রবল।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, পরিস্থিতি সামাল দিতে সারা দেশে হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে, এবং স্থানীয় সরকারকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এম আর এম – ০৭১৭, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button