
দেশের ৪৮ থেকে ৬৪ জেলায় ফ্রিল্যান্সিং শিক্ষা সম্প্রসারণের উদ্যোগ
বাংলাদেশের শিক্ষিত যুব নারী ও পুরুষদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ প্রদানের উদ্যোগ নিয়ে সরকার ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের ৪৮টি জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ চলছে এবং সরকার চাচ্ছে আরও ১৬টি জেলায় একই ধরনের প্রশিক্ষণ দিতে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রকল্পের পটভূমি ও উদ্দেশ্য
২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত ১৬ জেলার পরীক্ষামূলক প্রকল্প চালানো হয়, যার মোট ব্যয় ছিল প্রায় ৪৭.৫ কোটি টাকা। এতে মোট ৬,৪০০ জন প্রশিক্ষণার্থী ফ্রিল্যান্সিং দক্ষতায় শিক্ষিত হন। প্রকল্পে অংশগ্রহণকারীদের ৬৪% আয়ের সঙ্গে যুক্ত, এবং ২১% বিভিন্ন চাকরিতে নিয়োজিত রয়েছে। তারা প্রায় ৪.০৭ লাখ USD (আনুমানিক ৫১৭ কোটি টাকা) আয় করেন। এ সফলতা দেখে জাতীয় পর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
নতুন প্রকল্পের মূল তথ্য
‘৪৮ জেলায় ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ-ভিত্তিক কর্মসংস্থান’ শীর্ষক নতুন প্রকল্পটিতে ২৮,৮০০ জন প্রশিক্ষণার্থী জড়িত থাকবেন। প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। প্রকল্প শুরু হবে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত (৩ বছর মেয়াদি)। ই-লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং লিমিটেড এই প্রকল্পের ভিত্তিতে কাজ চালান এবং ৪৮ জেলায় প্রশিক্ষণের দায়িত্ব পায়।
সম্প্রসারণ ও মেয়াদ বৃদ্ধি
বর্তমান সময়ে ৪৮ জেলায় প্রশিক্ষণ চলছে, সম্প্রতি সরকার অগ্রগতি দেখে যোগ করতে চায় আরও ১৬ জেলা। এই বিষয়ে ২০২৫ সালের ১১ মার্চ স্টিয়ারিং কমিটির (PSC) বৈঠক, ৩০ এপ্রিল ও ২২ মে পিআইসি ও পিএসসি যৌথ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মেয়াদ বাড়ানো ও নতুন জেলা যুক্ত করার পরিকল্পনা। চূড়ান্ত পরিকল্পনা অনুযায়ী, মেয়াদ বাড়ানো হবে ২০২৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, অর্থাৎ মূল মেয়াদ (২০২৬) থেকে এক বছর বৃদ্ধি করা হবে।
বাজেট বৃদ্ধি ও ব্যয়ের বিশ্লেষণ
মেয়াদ বর্ধনের ফলে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে প্রায় ২৫%, যা আনুমানিক ৭৫ কোটি টাকা অতিরিক্ত যোগ হবে। ফলে মোট ব্যয় দাঁড়াবে ৩৭৫ কোটি টাকা।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও সুযোগ–সুবিধা
প্রতিটি জেলায় ২৫টি কম্পিউটার ও হাইস্পিড ইন্টারনেট-সংবলিত দুটি ল্যাব স্থাপন করা হবে। প্রতিটি ল্যাবে ২৫ জন প্রশিক্ষণার্থী প্রশিক্ষণ নেবেন। মেয়াদ ৭৫ দিন (মোট ৬০০ ঘণ্টা) প্রতিটি ব্যাচে নির্ধারিত। শিক্ষাগত যোগ্যতা: কমপক্ষে উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) পাশ; বয়সসীমা ১৮‑৩৫ বছর। নির্বাচনের পদ্ধতি: অনলাইনে আবেদন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা।
প্রশিক্ষণ চলাকালে দিনপ্রতি ২০০ টাকা নগদ ভাতা ও ৩০০ টাকা খাবারের ভাতা দেওয়া হচ্ছে।
সরকারের বক্তব্য ও বাস্তবায়ন
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক গাজী মো. সাইফুজ্জামান ২৪ মে যুব ও ক্রীড়া সচিব মো. মাহবুব-উল-আলমকে পাঠানো চিঠিতে মেয়াদ ও জেলা বৃদ্ধির প্রস্তাব দেন। ২৭ জুলাই প্রথম আলোকে সচিব জানান, “বাকি ১৬ জেলায়ও অনেকে প্রশিক্ষণ নিতে আগ্রহী; দ্রুত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”
প্রশিক্ষণের ফলাফল ও অর্থনৈতিক প্রভাব
২৩ থেকে ২৪ সালে ১৬ জেলার পরীক্ষামূলক প্রকল্পে ৬৪% প্রশিক্ষণার্থী আয়ের সঙ্গে যুক্ত, ২১% চাকরিতে নিয়োজিত, এবং USD ~4.07 লাখ (প্রায় ৫১৭ কোটি টাকা) বৈদেশিক উপার্জন করেন। বাংলাদেশে ফ্রিল্যান্সারদের অংশগ্রহণ বিশ্ব freelancing কমিউনিটির প্রায় ১৪%, এবং এরপরেই রয়েছে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র।
স্লিম রায়হান (সানেম) এর মত অনুযায়ী, “এই উদ্যোগ ভালো, তবে প্রশিক্ষণ শেষ করা যুবকরা আদৌ কাজে লাগাতে পারছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ জরুরি।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন ভবিষ্যতে একই ধরনের উদ্যোগের মনিটরিং সিস্টেম উন্নত করার, এবং প্রশিক্ষণ শেষে সফলতার ট্যাক্সোনোমি তৈরি করার কথা ভাবছে। বিশ্বব্যাপী freelancing এর বাজার দ্রুত বাড়ছে — ২০২৬ সালের মধ্যে এটি $10 বিলিয়ন শিল্পে পরিণত হতে পারে।
সরকারের এই প্রশিক্ষণ প্রকল্প শুধুমাত্র চাকরি নয়, বরং বিশ্ববাজারে ডিজিটালভাবে আত্মকর্মসংস্থান করানোর শক্ত ভিত্তি। মেয়াদ ও জেলায় বিস্তারের মাধ্যমে ২৮,৮০০ যুব প্রশিক্ষণার্থীকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে যোগদানের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানভাবেই ব্যয় বেড়ে ৩৭৫ কোটি টাকা হলেও ফিরে আসবে বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যমে যোগান, আর সামাজিক উন্নয়ন ও যুবশক্তির ক্ষমতায়নেও অগ্রণী ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে freelancing ক্ষেত্রে খাতায় নাম লেখাতে চাই, আর এই প্রকল্প সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণের পথে অন্যতম চাবিকাঠি।
MAH – 12168 , Signalbd.com