ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার দিকে রওনা হয়েছে লাল-সবুজের পতাকা বুকে ধারণ করা বাংলাদেশি ত্রাণবাহী বহর। কায়রো থেকে যাত্রা শুরু করা এই বহর যেন মানবতা, সংহতি ও সহানুভূতির প্রতীক হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বের চোখে।
মানবিক কাফেলার বিস্তারিত
মিশরের রাজধানী কায়রো থেকে ৫ আগস্ট ভোরে গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ১১তম দফার এই ত্রাণবহর। মিশরের শীর্ষ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আল-আযহারের অধীনস্থ ‘বাইতুয যাকাত অ্যান্ড সাদাকাত ফাউন্ডেশন’-এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। গ্র্যান্ড ইমাম ড. আহমদ আত-তায়্যিব আল-হাসসানীর দিকনির্দেশনায় এই বিশাল কাফেলাটি গঠিত হয়েছে।
এই দফায় প্রায় ৭৫টি দেশের অনুদানে সংগৃহীত ১ হাজার টন ত্রাণসামগ্রী বহন করছে এই কাফেলা। এতে অংশ নিয়েছে অন্তত ৪৫টি লরি, যার মধ্যে ১৫টি লরিতে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গর্বের সঙ্গে উড্ডীন রয়েছে।
এই বহরে রয়েছে জরুরি খাদ্যসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানীয় জল, ওষুধ ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম। ত্রাণসামগ্রী গুলো যুদ্ধক্লান্ত গাজার সাধারণ মানুষের জন্য একপ্রকার জীবনরক্ষাকারী সহায়তা।
বাংলাদেশের অংশগ্রহণকারীরা কারা
বাংলাদেশ থেকে এই কাফেলায় অংশ নিয়েছে একাধিক সংগঠন। ওয়ার্ল্ড ওয়ান উম্মাহ ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ-ফিলিস্তিন মৈত্রী সংস্থা, বি.এম শাবাব ফাউন্ডেশন, হালিমা নূর ফ্যামিলি, ঢাকা আরসিন গেট শাহী জামে মসজিদ ও আল ইহসান নেটওয়ার্ক—এই সংগঠনগুলো প্রত্যেকে আলাদা করে লরি পাঠিয়েছে গাজায়।
বিশেষ করে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ভুমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাঁরা পিছন থেকে অক্লান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছেন এই মহতী উদ্যোগকে সফল করে তুলতে।
আগেও গিয়েছে বাংলাদেশি ত্রাণ
এটাই প্রথম নয়, এর আগেও বাংলাদেশি সংগঠনগুলো গাজায় ত্রাণ পাঠিয়েছে। ষষ্ঠ দফায় ৮টি এবং সপ্তম দফায় ৩৫টি লরি গাজার পথে পাঠানো হয়েছিল। প্রতিবারই বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শক্তিশালী বার্তা গেছে—ফিলিস্তিনের পাশে আছে বাংলাদেশ।
এই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশের জনগণের মানবিকতা ও মুসলিম উম্মাহর প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচায়ক।
বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া ও গৌরব
এই ধরনের মানবিক উদ্যোগ শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, গোটা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করেছে। বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে লাল-সবুজ পতাকা দেখা গেছে গাজার রাস্তায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত শিশুদের হাতে বাংলাদেশের দেওয়া খাবার।
বিশ্বের অনেক দেশ যেখানে এখনো নিরব বা দ্বিধাগ্রস্ত, সেখানে বাংলাদেশি সংগঠনগুলো সরাসরি মাঠে কাজ করছে—এটা নিঃসন্দেহে গর্বের।
সংখ্যা ও বাস্তবতা: পরিসংখ্যান যা বলছে
১১তম দফার এই কাফেলায় বাংলাদেশের অন্তত ১৫টি লরি অংশ নিচ্ছে, যা প্রায় ৩০০ টনের সমপরিমাণ ত্রাণসামগ্রী বহন করছে। এর মধ্যে অধিকাংশই খাদ্য ও পানি। ত্রাণ বিতরণ হবে গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশে বিভক্তভাবে, যেখানে মানুষ বেঁচে থাকার জন্য প্রতিদিন যুদ্ধ করছে।
এই কাফেলায় যে ৭৫টি দেশের অনুদান রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের অনুপাত উল্লেখযোগ্য। শুধুমাত্র সরকারি পর্যায় নয়, প্রবাসী বাংলাদেশিরাও চ্যারিটি ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন।
একটি দেশ কীভাবে বদলে দেয় প্রেক্ষাপট
একটি ছোট দেশ হয়েও বাংলাদেশ যেভাবে গাজার পাশে দাঁড়িয়েছে, তা নিঃসন্দেহে আন্তর্জাতিক মানবিক উদ্যোগের এক অনন্য উদাহরণ। পশ্চিমা বিশ্ব যেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক সময় ধীরে প্রতিক্রিয়া দেয়, সেখানে বাংলাদেশি সংগঠনগুলো দ্রুত, সরাসরি এবং সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্ত বার্তা। বাংলাদেশ শুধু উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ নয়, বরং মানবিকতার ক্ষেত্রেও একটি শক্তিশালী নাম হয়ে উঠছে।
পথচলা থেমে যাবে না
লাল-সবুজের ত্রাণবহর গাজার পথে রওনা দিয়ে শুধু ত্রাণ নয়, পৌঁছে দিচ্ছে একটি বার্তা—বিপদের সময় পাশে থাকার। এই সহযোগিতা যেন থেমে না যায়, বরং আরও বিস্তৃত হয়।
মানবিক সংকটে জাতি হিসেবে যেভাবে বাংলাদেশের মানুষ এগিয়ে এসেছে, তা ভবিষ্যতের জন্য এক সাহসিকতার পাঠ। প্রশ্ন রয়ে যায়—এই উদাহরণ কি অন্যান্য দেশকেও মানবতার পথে উদ্বুদ্ধ করবে?
এম আর এম – ০৭১৬, Signalbd.com



