বিশ্ব

গাজায় দৈনিক গড়ে ২৮ শিশু হত্যা করছে ইসরাইল: ইউনিসেফ

Advertisement

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধ ও মানবিক সংকটে প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ মঙ্গলবার এক পোস্টে এই তথ্য প্রকাশ করে জানায়, অনাহার, অপুষ্টি এবং ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা হামলার সম্মিলিত ফলে গাজার শিশুরা আজ মৃত্যুপুরীতে বাস করছে।

গাজায় মানবিক বিপর্যয় নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ইউনিসেফ একে “একটি পুরো শ্রেণিকক্ষের মৃত্যুর সমান” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। সংস্থাটি বলছে, অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং পূর্ণমাত্রার ত্রাণ সরবরাহ ছাড়া শিশুদের বাঁচানো সম্ভব নয়।

ইউনিসেফের বিবৃতি: শিশুদের ভয়াবহ দুর্দশা

মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ প্রকাশিত ইউনিসেফের বার্তায় বলা হয়, “গাজায় শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে শুধু বোমা হামলায় নয়, তারা মরছে ক্ষুধায়, অপুষ্টিতে, পানি ও ওষুধের অভাবে।”

সংস্থাটি জানায়, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ১৮ হাজারের বেশি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় গড়ে একজন শিশু মারা যাচ্ছে। ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, প্রতিদিন গড়ে ২৮ শিশুর মৃত্যু মানে একটি পূর্ণ শ্রেণিকক্ষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া।

আগ্রাসনের পটভূমি ও মানবিক অবস্থা

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় তাদের সামরিক অভিযান শুরু করে। এর পর থেকে প্রায় দুই বছর ধরে চলছে বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও মানবিক সহায়তায় বাধা। গাজা উপত্যকার প্রায় ৭৫ শতাংশ অঞ্চল বর্তমানে ইসরায়েলি বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে।

এই দুই বছরে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার অর্ধেকই নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে অস্থায়ী শিবিরে বসবাস করছেন, যেখানে পানি, খাবার, ওষুধ – কিছুই পর্যাপ্ত নেই।

সম্প্রতি টাইমস অব ইসরাইলের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইসরায়েল গাজার সম্পূর্ণ দখলের পরিকল্পনা করছে। এতে মানবিক সংকট আরও গভীর হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও শারীরিক ক্ষতি

শুধু মৃত্যু নয়, যারা বেঁচে আছে তারাও ভয়ংকর মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ইউনিসেফ বলছে, অব্যাহত ভয়ভীতি, বোমার শব্দ এবং আপনজন হারানোর যন্ত্রণা শিশুদের মনোজগতে গভীর আঘাত হানছে।

এক ১০ বছর বয়সী শিশুর চুল ও ত্বক সাদাটে হয়ে যাওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেছে ইউনিসেফ, যা ‘ট্রমা-ইনডিউসড ডিপিগমেন্টেশন’ নামে পরিচিত। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন শারীরিক প্রতিক্রিয়া মানসিক ট্রমার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।

“গাজা এখন শিশুদের জন্য কবরস্থান”

আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের আঞ্চলিক পরিচালক আহমাদ আলহেনদাওয়ি বলেন, “গাজা এখন শিশুদের জন্য কবরস্থানে পরিণত হয়েছে। শিশুরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে যাচ্ছে। তারা ভাবতে শুরু করেছে, সারা পৃথিবী তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।”

এই কথার প্রতিধ্বনি করে ইউনিসেফও বলছে, “গাজার শিশুদের জন্য এখন খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ এবং নিরাপত্তা উপকরণ প্রয়োজন। তবে তার চেয়ে বেশি প্রয়োজন যুদ্ধবিরতি।”

পরিসংখ্যান: মৃত্যুর নির্মম গাণিতিক চিত্র

ইসরায়েলি হামলার পরিসংখ্যান এক ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে:

  • প্রতিদিন গড়ে ২৮ শিশু নিহত
  • এখন পর্যন্ত ১৮,০০০+ শিশু নিহত
  • প্রতি ঘণ্টায় মারা যাচ্ছে ১ জন শিশু
  • অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা ১৮৮ জন, এর মধ্যে ৯৪ জন শিশু

এই সংখ্যা বিশ্ব বিবেককে নাড়া দেয়ার মতো হলেও, এখনো কার্যকর কোনও পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যাশা

যদিও জাতিসংঘ ও কিছু পশ্চিমা দেশ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তবুও গাজায় সরাসরি সহায়তা পাঠানোয় বাধা রয়েছে। মানবিক করিডোর সীমিত, এবং ইসরায়েলি অবরোধের কারণে অনেক সহায়তা আটকে রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, শিশুদের রক্ষায় অবিলম্বে রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং বৈশ্বিক চাপ দরকার। মানবতার ভিত্তিতে এই যুদ্ধ থামানো ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই।

শেষ কথা 

গাজার শিশুদের প্রতিদিনের মৃত্যু যেন হয়ে উঠেছে এক চেপে রাখা সত্য। ইউনিসেফের হুঁশিয়ারি, পরিসংখ্যান, এবং বাস্তব চিত্র সবই বলছে—এটি আর কোনো যুদ্ধ নয়, এটি একটি মানবিক বিপর্যয়।

তবে পরিস্থিতি বদলাবে কি? নাকি গাজার শিশুরা মৃত্যুর এই গাণিতিক প্রবাহেই হারিয়ে যাবে চিরতরে?

এম আর এম – ০৭১২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button