গাজার পুরোটাই দখলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেতানিয়াহুর, ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমে খবর

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন বলে দাবি করেছে একাধিক ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ ও আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গতকাল সোমবার জেরুজালেম পোস্ট, চ্যানেল ১২, ওয়াইনেট এবং আই২৪নিউজসহ একাধিক ইসরায়েলি গণমাধ্যম নেতানিয়াহুর এই সিদ্ধান্তের খবর প্রকাশ করে। এতে বলা হয়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী গাজার প্রতিটি অংশে অভিযান চালাবে এবং হামাসের নিয়ন্ত্রিত এলাকা পুনর্দখলে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করবে।
নেতানিয়াহুর ঘোষণার বিস্তারিত
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর দপ্তরের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র চ্যানেল ১২-এর প্রধান রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমিত সেগাকে জানায়, “সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই নেওয়া হয়ে গেছে। গাজার প্রতিটি অঞ্চলেই অভিযান চলবে।”
এতে আরও বলা হয়, হামাস যদি আত্মসমর্পণ না করে, তাহলে তারা আর কোনো জিম্মিকে মুক্তি দেবে না। অন্যদিকে, ইসরায়েলও পিছু হটবে না। তাই এই মুহূর্তে পদক্ষেপ না নিলে গাজায় থাকা জিম্মিদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যমের এমন খবরে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে তারা এ সিদ্ধান্ত রুখে দিতে জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছে।
দীর্ঘদিন ধরে চলা গাজা যুদ্ধ
প্রায় দুই বছর ধরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সামরিক অভিযান চলছে। ২০২৩ সালে শুরু হওয়া এই সহিংসতা হাজার হাজার প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এ পর্যন্ত ৬০ হাজার ৯৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ১৮ হাজার ৪৩০ জন শিশু।
এদিকে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানায়, এখনো হামাসের হাতে অন্তত ৪৯ জন ইসরায়েলি জিম্মি অবস্থায় রয়েছেন, যাদের মধ্যে ধারণা করা হচ্ছে ২৭ জন হয়তো আর জীবিত নেই।
সিদ্ধান্তের প্রভাব ও বৈদেশিক প্রতিক্রিয়া
নেতানিয়াহুর ঘোষণায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। ফিলিস্তিনের বিদেশমন্ত্রক এটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের মারাত্মক দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করেছে। আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আরব লীগ ইসরায়েলের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
একইসাথে মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। গাজায় ইতোমধ্যেই খাদ্য সংকট, পানি ও চিকিৎসা সংকটে জনজীবন বিপর্যস্ত। ইসরায়েলি হামলায় গত সোমবার একদিনেই ৭৪ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৩৬ জন ত্রাণ সংগ্রহে গিয়েছিলেন।
অভ্যন্তরীণ চাপ ও রাজনীতি
ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও নেতানিয়াহু তীব্র রাজনৈতিক চাপে রয়েছেন। দেশের জনগণের একাংশ হামাসের হাতে থাকা জিম্মিদের দ্রুত মুক্ত করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে। সম্প্রতি জিম্মি রম ব্রাস্লাভস্কি ও এভিয়াটার ডেভিডের দুর্বল শারীরিক অবস্থার ভিডিও প্রকাশ্যে আসায় এ চাপ আরও বেড়েছে।
গতকালের মন্ত্রিসভার বৈঠকে নেতানিয়াহু বলেন, “আমাদের সবাইকে যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য একসঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। শত্রুর পরাজয়, জিম্মিদের মুক্ত করা এবং ইসরায়েলের জন্য গাজা যেন আর কোনো হুমকি না থাকে—এই তিনটি লক্ষ্য অর্জন করতেই হবে।”
বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষণ: সিদ্ধান্তের ভবিষ্যৎ প্রভাব
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নেতানিয়াহুর এই ঘোষণা একটি কৌশলগত মোড়। তবে এতে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও বাড়বে। যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা এখন অনিশ্চয়তার মুখে।
হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা ওসামা হামদান যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোকে ইসরায়েলি নৃশংসতা উপেক্ষার অভিযোগ করে বলেন, “নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমি এবং অহংকারই জিম্মিদের জীবন হুমকিতে ফেলছে।”
বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক চাপ বাড়তে থাকলেও নেতানিয়াহুর সরকার আপাতত পিছু হটার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না। এটি আরও দীর্ঘ সময় ধরে চলা সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সারসংক্ষেপ
নেতানিয়াহুর ‘গাজার পূর্ণ দখলের’ পরিকল্পনা মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। যুদ্ধের এই ধাপে গাজার অসহায় জনগণ যেন মানবিক সংকটের চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।
তবে পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে, তা নির্ভর করছে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যতে ইসরায়েল–হামাস আলোচনার ওপর।
এম আর এম – ০৭১১, Signalbd.com