বিশ্ব

নামাজরত অবস্থায় মাকে কুপিয়ে হত্যা, কিশোরী গ্রেপ্তার

Advertisement

ইন্দোনেশিয়ার বেংকুলু প্রদেশে ১৮ বছর বয়সী এক কিশোরীর হাতে নির্মমভাবে খুন হয়েছেন তার মা। নামাজের সময় হামলা চালিয়ে হত্যার পর, নিজেই গিয়ে অপরাধ স্বীকার করেছে ওই কিশোরী। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, মানসিক অসুস্থতা থেকেই এ ঘটনা ঘটেছে।

নামাজরত অবস্থায় মা খুন

ইন্দোনেশিয়ার বেংকুলু প্রদেশে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। ১৮ বছর বয়সী এক কিশোরী তার ৪৯ বছর বয়সী মা ইয়াতিকে নামাজের সময় কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সময় শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, মা জোহরের নামাজে মগ্ন থাকার সময় হঠাৎ করে মেয়েটি একটি ছুরি ও হামানদিস্তা নিয়ে তার ওপর আক্রমণ চালায়। এতে ইয়াতির মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর আঘাত লাগে এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ঘটনার পেছনের মানসিক অবস্থা

ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অভিযুক্ত কিশোরী এনআর মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। মাত্র কয়েকদিন আগেই সে বেংকুলুর সুপ্রাপতো মানসিক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। পরিবারের সদস্যরা তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তবে স্বাভাবিক আচরণের আড়ালে সে যে এমন ভয়ংকর সিদ্ধান্ত নিতে পারে তা কেউ কল্পনাও করেননি।

গাদিং সেম্পাকা পুলিশ স্টেশনের অপরাধ তদন্ত ইউনিটের প্রধান পরিদর্শক পুত্রা আগুং জানান, এনআর মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল এবং এটি পূর্ব পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নয় বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

প্রতিবেশীদের বক্তব্য ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া

ঘটনার পর এনআর সরাসরি তার এক প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়ে নিজেই স্বীকার করে, সে তার মাকে হত্যা করেছে। ওই প্রতিবেশী বলেন, “সে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলে—আমি আমার মাকে মেরে ফেলেছি। আমরা সবাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়িতে যাই এবং ইয়াতিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি।”

প্রতিবেশীরা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশে খবর দিলে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে এবং এনআরকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

পুলিশি পদক্ষেপ ও তদন্তের অগ্রগতি

এনআরকে বর্তমানে বেংকুলু পুলিশ সদর দফতরে নেওয়া হয়েছে এবং সেখানে তার মানসিক অবস্থা যাচাইয়ের জন্য বিশেষ মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ইয়াতির মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ভায়াঙ্গকারা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

এদিকে নিহত ইয়াতির আরও দুই সন্তান রয়েছে, যাদের সাময়িকভাবে প্রতিবেশীদের তত্ত্বাবধানে রাখা হয়েছে।

স্থানীয় প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক উদ্বেগ

স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে এই ঘটনার পর ব্যাপক উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সবাই ঘটনার নির্মমতা এবং আকস্মিকতায় হতবাক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি ঘিরে নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।

মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর দাবি উঠেছে অনেকের পক্ষ থেকে। স্থানীয় এক সামাজিক সংগঠনের সদস্য বলেন, “মানসিক রোগীদের জন্য যথাযথ তত্ত্বাবধান না থাকলে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটতেই পারে। পরিবার ও সমাজকে আরও সচেতন হতে হবে।”

বিশেষজ্ঞ মতামত: মানসিক স্বাস্থ্য ও অপরাধের সম্পর্ক

মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাবিহীন মানসিক রোগীরা অনেক সময় হঠাৎ করে সহিংস আচরণে লিপ্ত হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে পরিবারকে সর্বোচ্চ সতর্ক ও সচেতন থাকতে হয়।

একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ জানান, “যদি এনআর সত্যিই দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকে এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পায়, তাহলে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যেতেই পারে। তবে এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত প্রয়োজন।”

হৃদয়বিদারক ঘটনার পরবর্তী ধাপ

নামাজরত অবস্থায় একজন মাকে হত্যার মতো ঘটনা শুধু একটি পারিবারিক ট্র্যাজেডি নয়, বরং এটি সমাজের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাবের প্রতিচ্ছবিও। এনআর কী কারণে এমন নৃশংস কাজ করলো, তার বিস্তারিত জানা যাবে তদন্ত শেষ হলে। তবে এই ঘটনায় পরিবার, সমাজ এবং প্রশাসন—সবার জন্যই একটি জোরালো বার্তা রয়ে গেল।

এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কতটা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ।

এম আর এম – ০৬৮৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button