
পারমাণবিক উত্তেজনার আবহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা নিয়ে অবশেষে মুখ খুলেছে রাশিয়া। ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘উল্লেখযোগ্য নয়’ দাবি করলেও পারমাণবিক ইস্যুতে ‘সতর্কতা’ বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে ক্রেমলিন।
সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা ও তা ঘিরে বিতর্ক
সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। তাঁর দাবি, রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ‘উসকানিমূলক’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছেন।
ট্রাম্প বলেন, তিনি দুটি মার্কিন পারমাণবিক সাবমেরিনকে ‘উপযুক্ত স্থানে’ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও তিনি এই সাবমেরিনগুলো কোথায় মোতায়েন করেছেন বা এগুলো পারমাণবিক শক্তিচালিত না পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী কিনা, সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানাননি। তবে এই ঘোষণার পরপরই রাশিয়া থেকে এসেছে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া।
রাশিয়ার প্রথম প্রতিক্রিয়া: গুরুত্ব দিতে নারাজ ক্রেমলিন
সোমবার (৪ আগস্ট) ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের জানান, ট্রাম্পের এই মন্তব্যকে রাশিয়া গুরুত্ব দিচ্ছে না। তিনি বলেন, “আমেরিকান সাবমেরিনগুলো যুদ্ধকালীন দায়িত্বেই থাকে। এ ধরনের মোতায়েন প্রক্রিয়া চলমানই থাকে। তাই এটিকে বিশেষ কিছু বলে মনে করছি না।”
তবে পেসকভ এ-ও উল্লেখ করেন যে, পারমাণবিক ইস্যুতে বিশ্বের সবাইকে অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত। তাঁর ভাষায়, “আমরা বিশ্বাস করি না যে এখানে পারমাণবিক উত্তেজনা বৃদ্ধির কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত আছে, তবে বিষয়টি অবশ্যই সংবেদনশীল এবং আবেগপ্রবণভাবে গ্রহণযোগ্য।”
ট্রাম্প-মেদভেদেভ বাকযুদ্ধ ও আলটিমেটাম
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে চলমান উত্তেজনা। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধের শান্তি আলোচনার অগ্রগতি না হওয়ায় ট্রাম্প প্রকাশ্যে রাশিয়াকে আলটিমেটাম দেন। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, যদি ৮ আগস্টের মধ্যে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি না আসে, তাহলে রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবেন।
এর জবাবে দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেন, ট্রাম্প ‘আলটিমেটামের খেলা’ খেলছেন, যা যুদ্ধের দিকে একটি স্পষ্ট পদক্ষেপ। এক পর্যায়ে তিনি ট্রাম্পকে ‘ঘুমকাতুরে জো’র পথ অনুসরণ না করার পরামর্শও দেন, ইঙ্গিতে বুঝিয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে।
সাবমেরিন মোতায়েনের বাস্তবতা ও সামরিক বিশ্লেষণ
ট্রাম্পের এই ঘোষণার সামরিক তাৎপর্য নিয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, এটি আসলে এক ধরনের কৌশলগত চাপ প্রয়োগের কৌশল। যুক্তরাষ্ট্র বহু আগে থেকেই বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে রাশিয়ার আশপাশে, তাদের পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করে রেখেছে। নতুন করে সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণার মানে আসলে একটি রাজনৈতিক বার্তা দেওয়া।
রাশিয়ার সিনিয়র আইনপ্রণেতা ভিক্তর ভোদোলাতস্কি মন্তব্য করেছেন, রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে এরইমধ্যে অনেক মার্কিন সাবমেরিন রয়েছে, তাই নতুন করে জবাব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি বনাম যুক্তরাষ্ট্র: তুলনামূলক চিত্র
বিশ্বের পারমাণবিক অস্ত্রের প্রায় ৮৭ শতাংশই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার হাতে। এর মধ্যে রাশিয়ার অস্ত্রাগারে প্রায় ১,৫৪৯টি কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে প্রায় ১,৪১৯টি। উভয় দেশই এই অস্ত্র মোতায়েন করেছে শতাধিক বোমারু বিমান ও সাবমেরিনে।
বিশ্বজুড়ে চলমান পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া একে অপরকে কৌশলগতভাবে চাপে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকেও সেই ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: উত্তেজনা নাকি রাজনৈতিক কৌশল?
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প মূলত প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে চাইছেন। রাশিয়ার প্রতি এই কঠোর অবস্থান গ্রহণ আসলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিরও কৌশল। বিশেষ করে তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার চাপ রয়েছে তাঁর ওপর।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই মুহূর্তে উভয় পক্ষই মৌখিক যুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকতে চাইছে। পারমাণবিক উত্তেজনায় গড়ানোর আশঙ্কা খুবই কম, কারণ তা হলে উভয় পক্ষের জন্যই ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।
পরবর্তী পদক্ষেপের দিকেই নজর
ট্রাম্পের পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন নিয়ে প্রথমবারের মতো প্রতিক্রিয়ায় এসেছে রাশিয়া। তবে উত্তেজনার মাত্রা এখনো সীমিত পর্যায়ে রয়েছে। আগামী ৮ আগস্টের ট্রাম্পের আলটিমেটাম ও রাশিয়ার সম্ভাব্য জবাবের দিকেই এখন নজর বিশ্ববাসীর। বিশ্লেষকদের মতে, পরবর্তী প্রতিক্রিয়াই নির্ধারণ করবে, উত্তেজনা কোন দিকে মোড় নেবে — শান্তিপূর্ণ সমঝোতার পথে, নাকি আরও জটিল দ্বন্দ্বের দিকে?
এম আর এম – ০৬৮৫, Signalbd.com