বিশ্ব

নেতানিয়াহুর গাজায় জিম্মিদের জন্য রেড ক্রসের আবেদন

Advertisement

গাজার বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের নিরাপদ ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আন্তর্জাতিক রেড ক্রস (ICRC)-কে জরুরি আবেদন জানিয়েছেন। নেতানিয়াহু হামাসকে যুদ্ধবিরতি চুক্তি না মেনে চলার জন্য দোষারোপ করে গাজার জিম্মিদের খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের ভয়াবহ অবস্থা

সম্প্রতি হামাস ও প্যালেস্টাইন ইসলামিক জিহাদ এক ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে দুই ইসরায়েলি বন্দির শারীরিক অবস্থার অবনতি স্পষ্ট দেখা গেছে। এ ভিডিওর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। ভিডিওতে দুই কৃশকায় জিম্মিকে এতটাই দুর্বল অবস্থায় দেখানো হয়েছে, যা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

তেলআবিবে ব্যাপক বিক্ষোভ

স্থানীয় সময় ২ আগস্ট সন্ধ্যায় তেলআবিব শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে ‘যুদ্ধ বন্ধ করুন’ এবং ‘কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে নেতানিয়াহুকে দ্রুত জিম্মিদের মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নিতে চাপ দিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা গাজার বন্দিদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারকে জোরালো অনুরোধ জানায়।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরন ভিডিওগুলোর ‘অসহনীয়’ ব্যাখ্যা দিয়েছেন। অন্যদিকে, জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস বলেছেন, “এই ভয়াবহ চিত্র প্রমাণ করে যে, গাজার ভবিষ্যত কোনোভাবে হামাসের নিয়ন্ত্রণে থাকা উচিত নয়।” আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও নানান দেশের সরকার এই পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান চাইছে।

রেড ক্রসের ভূমিকা ও নেতানিয়াহুর আবেদন

রেড ক্রস গাজার পরিস্থিতিকে ‘বিভৎস’ হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং তাদের আঞ্চলিক প্রধান জুলিয়েন লেরিসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জিম্মিদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। নেতানিয়াহুর অফিস জানায়, তিনি খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য রেড ক্রসের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

গাজায় দুর্ভিক্ষের অভিযোগ ও হামাসের দাবি

জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তা সংস্থা সতর্ক করেছে যে, গাজায় দুর্ভিক্ষের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু নেতানিয়াহু এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে হামাস দাবি করেছে, তারা মানবিক সাহায্য পৌঁছাতে রেড ক্রসের আবেদনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে, যদি গাজার জন্য মানবিক করিডোর খুলে দেওয়া হয়।

গাজার সংকট: যুদ্ধের মাঝেও মানবিক সাহায্যের চ্যালেঞ্জ

গাজা দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক ও সামরিক সংঘর্ষের কারণে মানবিক সংকটে রয়েছে। খাদ্য, ওষুধ, পানি ও অন্যান্য মৌলিক সেবার অভাব সাধারণ মানুষের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এই অবস্থায় বন্দি থাকা ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের জন্য অবিলম্বে নিরাপদ সহায়তা পৌঁছে দেওয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অধীনে অপরিহার্য।

গাজা সংকটের পেছনের ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতি

গাজা ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের একটি ছোট অঞ্চল, যেখানে প্রায় দুই মিলিয়ন মানুষ বাস করেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের দীর্ঘ ইতিহাসের এক অঙ্গ হিসেবে, গাজা প্রায়শই সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। ২০০৭ সালে হামাস গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর থেকে ইসরায়েল ও গাজার মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ তীব্র হয়েছে। এতে করে গাজার মানুষজন ব্যাপক মানবিক সংকটে পতিত হয়েছে।

বর্তমানে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে। গাজার অবরোধ ও সামরিক অভিযানের ফলে গাজার সাধারণ মানুষের জীবন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি পক্ষের দাবি, হামাস সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালায় এবং গাজার নিরাপত্তা ব্যাহত করে। অন্যদিকে, হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী ইসরায়েলের অবরোধ ও সামরিক হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মানবাধিকার সংস্থার ভূমিকা

গাজার মানবিক সংকট সমাধানে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তারা খাদ্য, ওষুধ, চিকিৎসা ও অন্যান্য জরুরি সাহায্য গাজার মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে অবরোধ ও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এসব কার্যক্রম অনেক সময় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) গাজার হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাব ও স্বাস্থ্যসেবার ক্রমশ সংকট সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছে। UNICEF শিশুদের জন্য নিরাপদ পানি ও খাদ্য সরবরাহে সমস্যা রয়েছে বলে জানায়।

নেতানিয়াহুর আবেদন: কি বলছে ভবিষ্যত?

নেতানিয়াহুর রেড ক্রসের কাছে আবেদন ইঙ্গিত দেয় যে, গাজার জিম্মিদের প্রতি ইসরায়েলের কিছুটা মানবিক মনোভাব রয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চুক্তি ছাড়া মানবিক সাহায্য কার্যক্রমের যথার্থ বাস্তবায়ন কঠিন বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজার সংকটের মূল মূলে পৌঁছানো ছাড়া কোনো অস্থায়ী সমাধান কার্যকর হবে না। মানবিক সাহায্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক সমাধানও জরুরি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর জন্য আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে।

গাজার মানুষের জন্য মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা ও ভবিষ্যৎ পথ

গাজার সাধারণ মানুষের জীবন রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অব্যাহত সাহায্য জরুরি। মানবিক করিডোর খোলা, খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ বৃদ্ধি, এবং নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেয়া এখন সময়ের দাবি। একই সাথে, দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান আনতে হবে।

নেতানিয়াহুর আবেদন ও রেড ক্রসের ভূমিকা এই সংকট মোকাবেলায় এক ইতিবাচক সূচনা হতে পারে। তবে এটি কার্যকর হতে হলে গাজার সব পক্ষের সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োজন।

সারসংক্ষেপ

  • ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজার বন্দি জিম্মিদের জন্য রেড ক্রসের কাছে সাহায্যের আবেদন করেছেন।
  • হামাসের প্রকাশিত ভিডিওতে জিম্মিদের দুর্দশার চিত্র আন্তর্জাতিক শোক ও নিন্দার কারণ হয়েছে।
  • তেলআবিবে ব্যাপক বিক্ষোভে জিম্মিদের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।
  • ফ্রান্স ও জার্মানি সহ আন্তর্জাতিক নেতারা ভিডিওর নিন্দা করেছেন।
  • রেড ক্রস ‘বিভৎস’ পরিস্থিতি উল্লেখ করে মানবিক সাহায্যের জরুরি আহ্বান জানিয়েছে।
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের কথা জাতিসংঘ জানালেও নেতানিয়াহু তা অস্বীকার করেছেন।
  • হামাস মানবিক করিডোর খোলা থাকলে সাহায্য নিতে প্রস্তুত।
  • গাজার সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও স্থায়ী শান্তি আলোচনার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করা হচ্ছে।

MAH – 12124 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button