শিক্ষা

নবীজি (সঃ) যা বলেছেন, তাওবাকারীর প্রশংসার বর্ণনা শুনুন

Advertisement

তাওবার প্রশংসা ও নবীজির বাণী
মানুষ কখনোই পাপ ও গুনাহ থেকে মুক্ত নয়। শয়তান মানবজাতির চিরশত্রু, যিনি মানুষকে সর্বদা অবৈধ পথে চালিত করার চেষ্টা করেন। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট করেছেন, শয়তানের পথ থেকে বিরত থাকতে হবে এবং সদাচার পালন করতে হবে। কিন্তু মানুষের ফিতরাত অনুযায়ী ভুল হয়ে যাওয়াটা স্বাভাবিক, তবে গুনাহের পর অনুতপ্ত হওয়া এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া প্রত্যেক মুসলমানের নৈতিক দায়িত্ব।

রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজেও প্রতিদিন সাতাত্তরবারেরও বেশি ইস্তিগফার করতেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজির কথায়, “আল্লাহর শপথ, আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তরবারেরও অধিক তাওবা করি।” (সহিহ্ বুখারি: ৬৩০৭)। এটি প্রমাণ করে, পাপ হওয়ার পরও সৎ ও নেক ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে নিজেকে পরিশোধিত করতে পারেন।

মানুষ গুনাহগার, কিন্তু তাওবার মাধ্যমে উত্তম হওয়া সম্ভব
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন, “মানুষ স্বাভাবতই গুনাহগার। আর গুনাহগারদের মধ্যে যারা তাওবা করে, তারাই সবচেয়ে উত্তম।” (তিরমিজি: ২৪৯৯)। এই বাণী আমাদের শিখায়, গুনাহ হওয়া মানেই শেষ কথা নয়; যথাযথ তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হতে পারে এবং তার মর্যাদা ফিরে পেতে পারে।

আল্লাহর ‘গাফফার’ নামের অর্থ ও গুরুত্ব

আল্লাহ তাআলার নামগুলোর মধ্যে একটি বিশেষ নাম হলো ‘গাফফার’, যার অর্থ হল অপরাধী বান্দাদের ক্ষমা করা। আল্লাহ পছন্দ করেন যারা পাপ করেও তাড়াতাড়ি ক্ষমা চায় ও মন পরিবর্তন করে। তাই পাপের পর তাড়াতাড়ি ক্ষমা চাওয়া এবং ভালো কাজ করার মাধ্যমে আত্মাকে পরিশোধন করা অত্যন্ত জরুরি।

কোরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই নেক আমল মন্দ কর্মগুলোকে মিটিয়ে দেয়।” (সুরা হুদ: ১১৪) অর্থাৎ, আল্লাহর প্রতি সত্যিকার বিশ্বাস ও তাওবার পাশাপাশি নেক আমল করলে পুরোনো পাপ মুছে যায়।

গুনাহ ও তার পৃথিবীর উপর প্রভাব

পাপের কারণে আল্লাহর কাছ থেকে নানা ধরনের শাস্তি বা বিপর্যয় পৃথিবীতে নেমে আসতে পারে। যেমন:

  • বৃষ্টি বন্ধ হওয়া
  • ফসল নষ্ট হওয়া
  • নদী-নালা শুকিয়ে যাওয়া
  • রিজিকের সংকট বৃদ্ধি
  • বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা

গুনাহের কারণে এই বিপদগুলো মানুষের ওপর এসে পড়তে পারে, যা সমাজ ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তবে ইস্তিগফার ও তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর দয়া ও রহমত লাভ করে এসব বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। নবীজি বলেছেন, বেশি পরিমাণে ইস্তিগফার করলে আল্লাহ আমাদের পাপ মাফ করবেন এবং বিভিন্ন নিয়ামত দান করবেন—যেমন বৃষ্টি, ভালো ফসল, ধন-সম্পদ, সন্তানসন্ততি ইত্যাদি।

কোরআনে আল্লাহর আশ্বাস: ক্ষমাপ্রার্থনা ও বরকত

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন:
“আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও; তিনি তো ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তানসন্ততিতে সমৃদ্ধ করবেন। তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং প্রবাহিত করবেন নদী-নালা।” (সুরা নুহ: ১০-১২)

এখানে স্পষ্ট যে, আল্লাহর কাছে তাওবা ও ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমে জীবনের সকল সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব। আল্লাহ দয়ালু এবং তাঁর দরবারে ফিরে আসা বান্দাদের কখনো নিরাশ করেন না।

তাওবার প্রক্রিয়া: কীভাবে সফলভাবে তাওবা করা যায়?

১. গুনাহ স্বীকার করা
প্রথম ধাপ হলো নিজের ভুল ও গুনাহ স্বীকার করা। কেউই নিজের গুনাহকে অস্বীকার করে সফল হতে পারে না।

২. আসল অনুতপ্ত হওয়া
সত্যিকারের তাওবার জন্য হৃদয় থেকে অনুতপ্ত হতে হবে, অর্থাৎ পাপের জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে হবে।

৩. পুনরায় গুনাহ না করার সংকল্প
আসন্ন সময়েও সেই গুনাহ এড়ানোর দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা প্রয়োজন।

৪. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
নিয়ত করে আল্লাহর দরবারে গিয়েশোধ ও ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।

৫. নেক আমল করা
তাওবার পর নেক আমল অবলম্বন করা, যেমন নামাজ পড়া, দান দেওয়া, ইত্যাদি, যা পাপ মিটাতে সহায়তা করে।

ইসলাম ও তাওবার গুরুত্ব

ইসলাম এমন এক ধর্ম যা ক্ষমার বার্তা দেয়। মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য অনেক বড় বড় ক্ষমা ও রহমতের দ্বার খুলে রেখেছেন। নবীজি (সা.) নিজেও বার বার তাওবা করেছেন—এটি আমাদের জন্য এক দৃষ্টান্ত।

গুনাহ হওয়ার পর হতাশ না হয়ে বরং আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার শিক্ষা দিচ্ছে ইসলাম। তাওবা শুধু ব্যক্তিগত জীবনের জন্য নয়, সমগ্র সমাজের কল্যাণের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ গুনাহ বেড়ে গেলে সমাজে দুর্ভোগ ও অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে।

সমাজ ও প্রকৃতির জন্য তাওবার গুরুত্ব

গুনাহ সমাজ ও প্রকৃতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। যেমন:

  • দুর্নীতি ও অন্যায় সমাজে বৃদ্ধি পায়।
  • পরিবেশ দূষণ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে।
  • সমাজে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।

তাওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে এইসব নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আল্লাহর রহমত আসার ফলে সমাজে শান্তি ফিরে আসে, প্রকৃতি ভালো থাকে, আর মানুষের জীবন সমৃদ্ধ হয়।

নবীজির বাণী ও তাওবার অনুশীলন

নবীজি (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, “যে ব্যক্তি প্রতিদিন তাওবা করে, আল্লাহ তাকে বিশেষ ভাবে ভালোবাসেন।” এই বাণী আমাদের প্রেরণা দেয় নিয়মিত ইস্তিগফার ও তাওবা করার জন্য।

বিশ্বের নানা মুসলিম দেশেও মানুষ আজকাল তাওবার গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছে। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাসে অনেকেই ইস্তিগফার ও তাওবার মাধ্যমে নিজেকে পরিশোধিত করে।

তাওবা হল গুনাহ থেকে মুক্তি, আল্লাহর কাছে ফিরে আসার পথ এবং জীবনকে শান্তিময় ও সমৃদ্ধ করার মাধ্যম। নবীজির বাণী ও কোরআনের শিক্ষায় আমরা বুঝতে পারি, তাওবার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত লাভ করা সম্ভব। সমাজ ও ব্যক্তি জীবনের উন্নতির জন্য প্রতিদিন ইস্তিগফার করা উচিত।

তাই আসুন, আমরা সবাই নিজেদের ভুল স্বীকার করি, তাওবা করি, এবং আল্লাহর দয়ায় নিজেকে নতুন করে সাজাই—একটি সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ জীবন গড়ার জন্য।

 MAH – 12095 ,  Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button