
গাজাভিত্তিক ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, স্বাধীন ও পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের সশস্ত্র প্রতিরোধ থামবে না। শনিবার (২ আগস্ট) এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, দখলদারিত্বের অবসান না হওয়া পর্যন্ত তাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে এবং তারা কোনো অস্ত্র সমর্পণ করবে না।
হামাসের বিবৃতির মূল বক্তব্য
হামাসের বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের জাতীয় অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন এবং গাজার অবরোধের অবসান না হওয়া পর্যন্ত সশস্ত্র প্রতিরোধ চালিয়ে যাবে তারা। সংগঠনটি আরও জানায়, দখলদারিত্ব চলতে থাকলে প্রতিরোধের পথই একমাত্র বৈধ পথ।
তাদের ভাষায়, “যতদিন ফিলিস্তিনি ভূমি মুক্ত না হবে এবং একটি পূর্ণ সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হবে, ততদিন প্রতিরোধ এবং সশস্ত্র আন্দোলন চলবে।”
সাম্প্রতিক আলোচনার পটভূমি
হামাসের এ ঘোষণা এসেছে এমন সময়ে, যখন গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে ইসরায়েল, হামাস ও মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর মধ্যে আলোচনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় সর্বশেষ আলোচনায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দেওয়া হলেও, তা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। হামাস দাবি করে, ইসরায়েল শান্তির কথা বললেও বাস্তবে কঠোর শর্ত চাপিয়ে দিয়ে চুক্তি বাধাগ্রস্ত করছে।
২০২৩ সালের যুদ্ধের সূত্রপাত
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর দখলদার ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। সেই থেকে এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধে গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ২২ মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং দেড় লাখেরও বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। হাজার হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে, অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে এবং মানবিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে।
মানবিক পরিস্থিতি আরও জটিল
জাতিসংঘের প্রতিবেদন বলছে, গাজার অধিকাংশ এলাকা এখন দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সেবার চরম সংকটে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। হামাস বলেছে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে তারা অস্ত্র সমর্পণ করে দখলদারদের হাতে আরও বিপর্যয় ঘটাতে রাজি নয়।
হামাসের অভিযোগ, ইসরায়েল যদি মানবিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে সত্যিই আগ্রহী হতো, তবে গাজার অবরোধ তুলে নিত এবং একটি কার্যকর শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য পদক্ষেপ নিত।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
হামাসের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকোফ দাবি করেছেন, সাম্প্রতিক আলোচনার সময় হামাস অস্ত্র সমর্পণ করার বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছিল। তবে হামাসের নতুন বিবৃতি সেই দাবি স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের একগুঁয়েমি ও আপস না করার মনোভাবের কারণে কোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব হচ্ছে না।
ফিলিস্তিনপন্থী বিভিন্ন সংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, দখলদারিত্ব বন্ধ না করলে এ ধরনের সংঘাত অব্যাহত থাকবে এবং সমাধানের পথে অগ্রগতি সম্ভব হবে না।
বিশেষজ্ঞদের বিশ্লেষণ
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাসের এই অবস্থান কোনো নতুন কিছু নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে তাদের মূল নীতির অংশ। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আন্তর্জাতিক চাপ যেমন বাড়ছে, তেমনি ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিও বিশ্বজুড়ে সমর্থন পাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মতে, “যদি ইসরায়েল একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়, তবে এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত সমাধানের পথ সুগম হতে পারে। কিন্তু উভয় পক্ষের কঠোর অবস্থান পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলছে।”
সারসংক্ষেপ
হামাসের নতুন ঘোষণা গাজা উপত্যকার চলমান সংঘাতকে আরও দীর্ঘায়িত করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, আসন্ন মাসগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক উদ্যোগ কোন পথে অগ্রসর হয় এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান কতটা সম্ভব হয়। বিশ্ববাসী শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রত্যাশায় রয়েছে, তবে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা সময়ই বলে দেবে।
এম আর এম – ০৬৫৬, Signalbd.com