
বিশ্ব রাজনীতিতে উত্তেজনা আবারো নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। রাশিয়ার উসকানিমূলক হুমকির জবাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দুইটি পারমাণবিক ডুবোজাহাজ ‘উপযুক্ত স্থানে’ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। শুক্রবার নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যালে’ এ তথ্য প্রকাশ করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের ঘোষণা ও রাশিয়ার উত্তেজনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, সাবেক রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যদিও সাবমেরিনগুলি কোথায় মোতায়েন করা হবে, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। তবে ট্রাম্পের বক্তব্যের তাৎপর্য ছিল স্পষ্ট – মেদভেদেভের নির্বোধ মন্তব্য যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি না করে, সেই আশঙ্কায় তিনি সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে, গত মঙ্গলবার ট্রাম্প রাশিয়ার প্রতি কঠোর ভাষায় বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য রাশিয়ার কাছে মাত্র ১০-১২ দিন সময় বাকি আছে। এর সঙ্গে তিনি নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দেন। এই বক্তব্যের পর থেকেই রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান মেদভেদেভ ট্রাম্পকে কঠোর কটাক্ষ করছেন এবং উত্তেজনাপূর্ণ বিবৃতি দিয়েছেন।
পারমাণবিক সাবমেরিন কেন গুরুত্বপূর্ণ?
পারমাণবিক সাবমেরিন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং অদৃশ্য সামরিক শক্তি হিসেবে বিবেচিত। এগুলি মহাসাগরের গভীরে দীর্ঘদিন পর্যন্ত গোপনে অবস্থান করতে পারে এবং যেকোনো সময়ে পারমাণবিক অস্ত্র ছুড়তে সক্ষম। এই কারণে, পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েন করা মানে সামরিক উত্তেজনার উচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাশিয়ার হুমকির উত্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ, বিশ্ব পরিস্থিতিকে আরও উদ্বিগ্ন করে তুলবে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ও পশ্চিমাদের মধ্যে টানাপোড়েন ইতিমধ্যে বিশ্বজুড়ে অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও পেন্টাগনের চুপ
এ ঘটনায় মার্কিন নৌবাহিনী ও পেন্টাগন এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই সরকারি সূত্র থেকে কোনো মন্তব্য আসেনি। তবে পেন্টাগনের এড়িয়ে যাওয়াকে কিছু বিশ্লেষক ‘মৌখিক কূটনীতির অংশ’ হিসেবে দেখছেন।
রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের নতুন সংকট
এই ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের নতুন সংকটের সূচনা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ, কূটনৈতিক চাপ ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার অংশগ্রহণের কারণে পশ্চিমারা কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যা রাশিয়ার জন্য বিরাট চাপ সৃষ্টি করেছে।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ও দক্ষিণাঞ্চলে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে, যা বিশ্বজনীন শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি বলে অভিহিত হচ্ছে। ট্রাম্পের সাবমেরিন মোতায়েনের ঘোষণা এসব পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলবে বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
ইউক্রেন যুদ্ধ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা
২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর থেকেই ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হচ্ছে। ২০২২ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণ মাপের সামরিক অভিযান শুরু করে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করছে, আর রাশিয়া নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে।
এই যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় নিরাপত্তা স্থিতিশীলতা বিঘ্নিত হয়েছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিও ব্যাপক প্রভাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় পারমাণবিক অস্ত্র ও ডুবোজাহাজের মোতায়েন বিশ্বজুড়ে যুদ্ধের ভয়াবহতা বৃদ্ধি করতে পারে।
মার্কিন সাবমেরিন মোতায়েন: পরবর্তী ধাপ কী?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ শুধুমাত্র সামরিক সংকেত নয়, এটি রাজনৈতিক কূটনীতির অংশও হতে পারে। ট্রাম্পের এই ঘোষণায় রাশিয়া থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া আসতে পারে এবং তারা পারমাণবিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
ট্রাম্পের ভবিষ্যত পরিকল্পনা
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রাম্প সক্রিয়ভাবে বিশ্ব রাজনীতির প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখা যাচ্ছে। তিনি তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন সময় গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুগুলোতে সরাসরি বক্তব্য রাখেন। তার এই সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশও অনেকের মনে প্রশ্ন তৈরি করেছে—এর পেছনে কি শুধুই রাশিয়ার হুমকি প্রতিহত করাই উদ্দেশ্য, নাকি ভবিষ্যতে আরও বড় কোন পরিকল্পনা রয়েছে?
MAH – 12075 , Signalbd.com