
ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে সংঘটিত ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানে অসীম সাহসিকতা ও মানবিকতার স্বাক্ষর রাখেন সেনাসদস্যরা। তাদের এই অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেছেন।
ঘটনার বিস্তারিত ও সম্মাননা অনুষ্ঠান
বৃহস্পতিবার সেনা সদর দফতরে এক বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণকারী সেনাসদস্যদের হাতে সম্মাননা সনদ তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বলা হয়, ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও সেনাসদস্যরা দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহত ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, অভিভাবক ও অন্যান্য ব্যক্তিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। তাদের এই মানবিক ভূমিকা দেশের জন্য গৌরব বয়ে এনেছে।
সেনা সূত্র জানায়, এই সম্মাননা শুধু তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য একটি অনুপ্রেরণা, যাতে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য দায়িত্বশীলতা ও মানবিকতার আদর্শ অনুসরণ করতে পারে।
দুর্ঘটনা
কয়েক দিন আগে ঢাকার অদূরে অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে প্রশিক্ষণরত একটি হালকা বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার মুহূর্তে স্কুল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতি থাকায় ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়। দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের যৌথ উদ্যোগে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়।
এই ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তবে সেনাবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে সবাই রক্ষা পান।
সেনাসদস্যদের ভূমিকা
দুর্ঘটনার পর মুহূর্তের মধ্যে সেনাসদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। তারা আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে হাসপাতালে স্থানান্তর করেন, ঘটনাস্থল ঘিরে রাখেন এবং সাধারণ মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। সেনাসদস্যদের এই কাজের ফলে উদ্ধার কার্যক্রম খুব অল্প সময়ে শেষ করা সম্ভব হয় এবং আতঙ্কিত অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের শান্ত করা যায়।
অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, “আমাদের সৈনিকদের এই সাহসিকতা, দায়িত্ববোধ এবং মানবিক আচরণ সেনাবাহিনীর গৌরবময় ঐতিহ্যের প্রতিফলন। এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতে তাদের আরও উৎসাহিত করবে।”
দুর্ঘটনার প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই দুর্ঘটনার প্রভাব শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় সমাজের ওপর গভীরভাবে পড়েছে। দুর্ঘটনার পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার দাবি উঠেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও জানিয়েছে, ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশেপাশে যেকোনো বিমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।
অন্যদিকে, সেনাবাহিনীর দ্রুত পদক্ষেপ এবং সক্রিয় ভূমিকায় সাধারণ মানুষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সেনাসদস্যদের প্রশংসা ছড়িয়ে পড়েছে।
পরিসংখ্যান ও অতীত অভিজ্ঞতা
বাংলাদেশে এর আগে ২০১৮ সালে কক্সবাজারে বিমান প্রশিক্ষণকালে ছোট আকারের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়েছিল। সেই ঘটনায়ও সেনাবাহিনী দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১০ বছরে বাংলাদেশে প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা কয়েকবার ঘটেছে, তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে এ ধরনের দুর্ঘটনা এবারই প্রথম।
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কার্যক্রমের সঠিক সমন্বয় এবং সেনাবাহিনীর দক্ষতার কারণে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনেক কমানো সম্ভব হয়েছে। তারা মনে করেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে কঠোর নিরাপত্তা নীতি, নিয়মিত মহড়া এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন অত্যন্ত জরুরি।
সারসংক্ষেপ
ঢাকার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে। দুর্ঘটনার মুহূর্ত থেকে শুরু করে উদ্ধার কার্যক্রম পর্যন্ত সেনাবাহিনীর সদস্যরা যে সাহসিকতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তা প্রশংসিত হয়েছে সর্বত্র। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে সেনা সদর দফতরে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের এই ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঘটে যাওয়া এই বিমান দুর্ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিল যে, দুর্যোগ মুহূর্তে সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেনাসদস্যদের স্বীকৃতি শুধু তাদের অবদানের মূল্যায়ন নয়, বরং দেশের সবার জন্য এক প্রেরণার বার্তা। এখন দেখার বিষয়, ভবিষ্যতে এই ঘটনার পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিমান নিরাপত্তা কতটা জোরদার করা হয়।
এম আর এম – ০৬২১, Signalbd.com