অর্থনীতি

ট্রাম্পের ঘোষণা: পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দিয়েছেন, যেখানে তিনি জানিয়েছেন, তার প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে একটি বড় বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছেছে। এছাড়া অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা চলমান রয়েছে এবং তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, দ্রুত এগুলো চূড়ান্ত করতে পারবেন। এই নতুন চুক্তি ও আলোচনা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি নতুন দিক নির্দেশ করবে বলে মনে করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের পাকিস্তান-বাণিজ্য চুক্তি: কী রয়েছে চুক্তির মূল বিষয়?

ট্রাম্প বুধবার তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে জানিয়েছিলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে হওয়া এই বাণিজ্য চুক্তির মূল আকর্ষণ দেশটির বিশাল তেলসম্পদ যৌথভাবে উন্নয়নের পরিকল্পনা। তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র এবং পাকিস্তান মিলিয়ে একটি তেল কোম্পানি নির্বাচন করছে, যারা এ অংশীদারিত্বে নেতৃত্ব দেবে। এমনকি তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে পাকিস্তানের তেল ভারতে রপ্তানি করতে পারে, যা অঞ্চলের অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য ইতিবাচক সংকেত।

বাণিজ্য চুক্তির গুরুত্ব ও সম্ভাবনা

পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য চুক্তি শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক জটিল। যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে পারে।

ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা

একই দিনে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে দক্ষিণ কোরিয়ার বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানানো হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার ওপর বর্তমানে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে, যা তারা কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ট্রাম্প এই প্রস্তাব শুনতে আগ্রহী এবং আশা প্রকাশ করেছেন, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে।

এর আগে ট্রাম্প জানান, যুক্তরাজ্য, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ইতোমধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তবে বেশকিছু চুক্তি এখনও আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য ও শুল্ক

এই একই দিনে ট্রাম্প ভারত থেকে আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “ভারতের শুল্ক বিশ্বের অন্যতম উচ্চ এবং দেশটি কঠিন ও অযৌক্তিক বাণিজ্য বাধা আরোপ করেছে।” ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে এই নতুন পদক্ষেপের ফলে ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব বা আলোচনা আরো তীব্র হতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনায় নতুন টুইস্ট

ট্রাম্প জানিয়েছেন, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা ভালোই চলছে এবং আশা করছেন একটি ন্যায্য ও যথাযথ চুক্তি হবে। যদিও চীনের জন্য পূর্বনির্ধারিত সময়সীমা ১ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা বাণিজ্য আলোচনায় ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাণিজ্য চুক্তি ও আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে আমদানি শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা করছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন গতিশীলতা এনে দেবে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত হওয়ায়, এই অঞ্চল থেকে আমদানিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এর ফলে স্থানীয় বাজারেও বিভিন্ন পণ্যের দাম কমে যেতে পারে এবং বিনিয়োগ বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য নীতি ও তার প্রভাব

ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক আরোপ ও কমানোর নীতি বিশ্ব বাণিজ্যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছে। যেখানে একদিকে আমেরিকা শুল্ক দিয়ে আমদানিকে নিয়ন্ত্রণ করছে, অন্যদিকে চুক্তির মাধ্যমে সহযোগিতা বাড়াচ্ছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো ও দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেয়ার পাশাপাশি নতুন বাজারও সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এই বাণিজ্য চুক্তি একটি বড় স্টেপ। কারণ পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক দেশ। তাদের তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদের যৌথ উন্নয়ন দুই দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

একই সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়া, চীন ও ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনার চূড়ান্ত সফলতা বিশ্ব বাণিজ্যে নতুন ধারা সৃষ্টি করবে।

অতিরিক্ত তথ্য ও পরবর্তী ধাপ

  • ট্রাম্পের শুল্ক নীতি ১ আগস্টের মধ্যে দেশগুলোর সঙ্গে চূড়ান্ত বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেয়। যারা তা করতে ব্যর্থ হবে, তাদের ওপর শুল্ক বাড়ানো হবে।
  • ভারত থেকে আমদানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর পাশাপাশি, ট্রাম্প ভারতকে বাণিজ্য বাধা সরানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
  • চীনের সঙ্গে আলোচনা তাড়াতাড়ি সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে, যাতে বাণিজ্য দ্বন্দ্ব কমে যায়।
  • যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করা দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, জাপান ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের এই বাণিজ্য উদ্যোগগুলো আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে। পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি, ভারত ও চীনসহ অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে চলমান আলোচনা, এবং আমদানিতে শুল্ক নীতি সব মিলিয়ে বিশ্বের বাণিজ্য চিত্রে পরিবর্তন আনবে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বজায় রাখতে ও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ট্রাম্প প্রশাসন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আগামী ১ আগস্টের মধ্যে এ বিষয়ে বিস্তারিত চুক্তি ও ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে নতুন রূপ দেবে।

 MAH – 12048, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button