বিশ্ব

গাজায় অনাহারে মৃত্যুর ঝুঁকিতে ১ লাখ শিশু: ‘৯ মাসে একটিও ডিম খাইনি’

Advertisement

ইসরায়েলের অবরোধ আর লাগাতার হামলার কারণে গাজা উপত্যকার মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। জাতিসংঘ ও স্থানীয় প্রশাসনের তথ্যে উঠে এসেছে, উপত্যকাটিতে দুই বছরের কম বয়সী অন্তত ১ লাখ শিশু বর্তমানে অনাহার ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। খাবার, পানি ও চিকিৎসার চরম অভাবে সাধারণ মানুষ দিশাহারা হয়ে পড়েছে।

অবরোধের কারণে খাদ্য সংকটের ভয়াবহতা

গত কয়েক মাস ধরে ইসরায়েলের কড়া অবরোধের কারণে গাজায় প্রবেশ করা খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রীর পরিমাণ অত্যন্ত সীমিত। মে মাসের শেষ থেকে সীমিত আকারে কিছু ত্রাণ ঢুকলেও তা মোট জনসংখ্যার চাহিদার তুলনায় অতি অল্প। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজার প্রতি তিনজন মানুষের একজন দিনের পর দিন খাবার ছাড়া কাটাচ্ছেন।

খাদ্যের এই সংকট সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে শিশুদের জীবনে। ফর্মুলা দুধের অভাবে অসংখ্য মা বাধ্য হয়ে শিশুদের শুধু পানি খাওয়াচ্ছেন। অপুষ্টির কারণে অনেক মায়ের দুধ শুকিয়ে গেছে, ফলে শিশুদের জন্য খাবার জোগানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

মায়েদের আর্তনাদ: “৯ মাসে একটিও ডিম খাইনি”

গাজার মায়েদের দুর্দশার এক মর্মস্পর্শী চিত্র তুলে ধরেন স্থানীয় এক নারী, জয়নব। তিনি বলেন, “এই অনাহারের মাঝেই আমি গর্ভবতী হয়ে পড়ি। সন্তান জন্ম দেওয়ার দিনটিতেও আমি খালি পেটে ছিলাম। গত ৯ মাসে একটি ডিমও খেয়েছি কি না, মনে পড়ে না। সন্তানকে কীভাবে বাঁচাবো, সেই চিন্তাতেই দিন কাটে।”

এই পরিস্থিতি গাজায় শিশুদের জন্য যে মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠেছে তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিবেদনেই।

মৃত্যুর মিছিল থামছে না

শুধু অপুষ্টি ও অনাহারের কারণে গত মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ১২৭ জন ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে ৮৫ জনের বেশি শিশু। এছাড়া ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। খাদ্যসংকট ও বোমা হামলার দ্বৈত চাপে গাজাবাসীর জীবন আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

রবিবারই আবারও অনাহারে মারা গেছেন আরও পাঁচজন ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে দুইজন শিশু। এই মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক মহলকে গভীর উদ্বেগে ফেলেছে।

আন্তর্জাতিক চাপ এবং সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা

বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার সংস্থা ও জাতিসংঘের চাপের মুখে ইসরায়েল সম্প্রতি কিছু এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার জন্য হামলা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে আল মাওয়াসি, দেইর আল-বালাহ এবং গাজা নগরীতে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্থলপথে ত্রাণ পৌঁছানোর সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এ সিদ্ধান্তে কতটা কার্যকরভাবে ত্রাণ পৌঁছাবে, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

ত্রাণ পৌঁছানো নিয়েও অনিশ্চয়তা

গাজায় আকাশপথে কিছু ত্রাণ পাঠানো হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। উত্তর গাজায় আকাশ থেকে ফেলা একটি ত্রাণ বাক্স ভুলবশত একটি তাঁবুর উপর পড়লে অন্তত ১১ জন আহত হন। অন্যদিকে, মিসর থেকে রাফা ক্রসিং দিয়ে কিছু ত্রাণ ট্রাক প্রবেশ শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের একটি ত্রাণবাহী জাহাজও গাজার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল, কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনী সেটিকে আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাধা দেয় এবং আরোহীদের আটক করে।

আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ

মানবাধিকার সংস্থাগুলো গাজার এই পরিস্থিতিকে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ইতিমধ্যে যৌথ বিবৃতিতে গাজায় হামলা বন্ধ এবং ত্রাণ প্রবাহ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, শিশুদের প্রাণ বাঁচাতে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ হবে। যুদ্ধবিরতির এই সীমিত উদ্যোগে সাময়িক স্বস্তি এলেও দীর্ঘমেয়াদে এই সংকট সমাধানের জন্য কার্যকর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আন্তর্জাতিক মহলও এখন গাজায় দীর্ঘস্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ খুঁজছে।

এম আর এম – ০৫৫২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button