
ভারত–ইসরাইল প্রতিরক্ষা সহযোগিতায় নতুন অধ্যায়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন ‘হামাস’ কর্তৃক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে, ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং সম্প্রতি এক কঠোর ও স্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলছেন, ওই বর্বর সন্ত্রাসী হামলাকে ভারত স্পষ্টভাবে সন্ত্রাসবাদের অপরাধ হিসেবে অভিহিত করে এবং সেই ঘটনার সব বন্দীদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি করেছেন।
৭ অক্টোবরের হামলা: ইতিহাস ও পটভূমি
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, মধ্যপ্রাচ্যের ইসরাইল ভূখণ্ডে হামাস নামক ফিলিস্তিনি সংগঠন একটি বিস্তৃত সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এই হামলায় শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং অসংখ্য মানুষ আহত হয়। এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনাকে আরো বৃদ্ধি করে। ফিলিস্তিনি এবং ইসরাইলি সংঘাতের এক নতুন মাত্রা সৃষ্টি করে এই ঘটনার কারণে পুরো বিশ্ব নড়ে চড়ে বসে।
ভারতের প্রতিরক্ষা সচিবের কড়া মনোভাব
ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং, যিনি দিল্লিতে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আমির বারামের সঙ্গে এক দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, সেখানেই তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আমরা এই সন্ত্রাসী হামলাকে অকপটে সন্ত্রাসবাদের একটি জঘন্য উদাহরণ হিসেবে দেখি। ভারত এমন সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করে।”
রাজেশ কুমার সিংয়ের ভাষ্য অনুযায়ী, ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, এটি কৌশলগত আস্থা ও পারস্পরিক সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। দুই দেশের সম্পর্ক আগামীতে আরো দৃঢ় ও গভীর হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ভারত–ইসরাইল সম্পর্কের ইতিহাস ও সমসাময়িক অবস্থা
ভারত ও ইসরাইলের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৯২ সালে। এরপর থেকে দু’দেশের সম্পর্ক ধীরে ধীরে সব দিকেই উন্নত হয়েছে, বিশেষত প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি এবং বিজ্ঞান–প্রযুক্তি ক্ষেত্রে। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা গত কয়েক দশকে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়েছে।
ইসরাইলের উন্নত সামরিক প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে অনেক বেশি সাহায্য করেছে। পাশাপাশি, ভারতের বাজার ও জনবল ইসরাইলের পক্ষে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব। এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাধ্যমে দুই দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি
ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় ও নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। দেশে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়। দেশের অভ্যন্তরে যেমন সন্ত্রাস মোকাবিলা করা হয়, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেয়।
প্রতিরক্ষা সচিবের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, ভারত ইসরাইলের প্রতি তাদের সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। এমন সহযোগিতা দুই দেশের জনগণের জন্য নিরাপদ ভবিষ্যৎ গঠনে সহায়ক হবে।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক আমির বারাম ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক
দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ওই দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (অব.) মেজর জেনারেল আমির বারাম এবং তার প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠক ছিল দুই দেশের প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা এবং কৌশলগত সহযোগিতা প্রসারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
এতে অংশগ্রহণকারীরা উভয় দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করার প্রস্তাব ও আলোচনা করেন। বিশেষ করে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত কার্যক্রম এবং উন্নত সামরিক প্রযুক্তির বিনিময় বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়।
সন্ত্রাসবাদের প্রভাব এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা
মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় সন্ত্রাসবাদের প্রভাব খুবই নেতিবাচক। হামাসসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কার্যক্রম এই অঞ্চলের জনজীবনে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য এটি এক বড় চ্যালেঞ্জ।
ভারত, যেটি নিজেও সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় বড় বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে, সেই কারণেই এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সমর্থনে বিশ্বাসী। ভারতের কঠোর অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
ভারত ও ইসরাইল শুধু নিজেদের মধ্যে নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যৌথ উদ্যোগ নেবে। তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়, সামরিক প্রশিক্ষণ, এবং প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি উন্নয়নে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি পাবে।
এর পাশাপাশি, দুই দেশ মানবিক সাহায্য, পুনর্বাসন কার্যক্রম এবং সামরিক শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে একে অপরকে সহায়তা করবে। এ ধরনের সমন্বিত প্রচেষ্টা মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ও নিরাপত্তাকে নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা
৭ অক্টোবরের হামলার পর বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের নেতারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। অনেক দেশ একযোগে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
তবে, মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘর্ষের দীর্ঘ ইতিহাস এবং রাজনৈতিক বাস্তবতা এ ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করে। ভারতসহ বেশ কিছু দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও, তারা একই সাথে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার ওপর গুরুত্ব দেয়।
শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য যৌথ প্রচেষ্টা অপরিহার্য
৭ অক্টোবরের সন্ত্রাসী হামলা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা ও শান্তির পথে বড় বাধা। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ভারত ও ইসরাইলের মধ্যকার প্রতিরক্ষা ও কৌশলগত সহযোগিতা নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি পালন করে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি ও উন্নয়নের পথে এক নতুন অধ্যায় শুরু হবে। এই প্রেক্ষাপটে, ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিংয়ের বক্তব্য কেবল দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ককে নয়, বিশ্ব শান্তির প্রতি ভারতের প্রতিশ্রুতিকেও প্রকাশ করে।