বিশ্ব

সেনাবাহিনীকে আসল যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশ দিলেন কিম

Advertisement

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন তার সেনাবাহিনীকে ‘প্রকৃত যুদ্ধের জন্য সর্বদা প্রস্তুত’ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে অনুষ্ঠিত একটি বড়সড় আর্টিলারি মহড়ার সময় তিনি সেনা সদস্যদের উদ্দেশ্যে এই আহ্বান জানান। কিম জং উনের এই বক্তব্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

কিমের বক্তব্য ও সামরিক মহড়ার বিবরণ

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিসিএনএ এবং কোরিয়া সেন্ট্রাল টেলিভিশনে প্রচারিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি আর্টিলারি ইউনিটের গোলাবর্ষণ প্রতিযোগিতা চলাকালীন কিম সেনাদের প্রতি ‘আসল যুদ্ধের’ মানসিকতা ধারণ করার নির্দেশ দেন। মহড়ায় সৈন্যদের সমুদ্রের দিকে ভারী গোলাবর্ষণ করতে দেখা যায়।

পর্যবেক্ষণ পোস্ট থেকে দূরবীন দিয়ে মহড়া পর্যবেক্ষণ করেন কিম। তার পাশে অবস্থান করছিলেন সামরিক বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। তবে এই মহড়াটি কোন এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

রাষ্ট্রীয় ভাষ্য অনুযায়ী, কিম বলেন, “আমাদের বাহিনীকে এমন সক্ষমতা অর্জন করতে হবে যাতে তারা যেকোনো যুদ্ধকালীন মুহূর্তে শত্রু পক্ষকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারে।”

কেন এই সময় বেছে নিলেন কিম?

কিম জং উনের এই মন্তব্য এমন এক সময়ে এলো, যখন উত্তর কোরিয়া আন্তর্জাতিকভাবে বেশ কিছু সামরিক সমালোচনার মুখে রয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে দেশটি রাশিয়াকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগে রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, উত্তর কোরিয়া গত বছর রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে সেনা, গোলাবারুদ, ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট সরবরাহ করেছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ইউক্রেনে লড়াই করতে গিয়ে কমপক্ষে ৬০০ উত্তর কোরিয়ান সেনা নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছেন।

এমন প্রেক্ষাপটে কিমের এই ‘প্রস্তুতির’ বার্তা নতুন কোনো সামরিক অভিপ্রায়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক জোরদার

সম্প্রতি রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে এক বৈঠকে কিম জং উন রাশিয়ার প্রতি পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দেন। তার আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি বিরল সফরে পিয়ংইয়ং যান এবং সেখানে দুই দেশের মধ্যে একটি সামরিক সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

এই চুক্তিতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা ও অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে, যা পশ্চিমা দেশগুলোর কৌশলগত উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্লেষকদের মত

বিশেষজ্ঞদের মতে, উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক সামরিক তৎপরতা কেবল আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক জন হ্যারিস বলেন, “কিমের বক্তব্য এবং সামরিক প্রস্তুতি কৌশলগত চাপ সৃষ্টির একটি অংশ। এটি মূলত পশ্চিমা দেশগুলোকে সতর্কবার্তা পাঠানোর কৌশল হতে পারে।”

এছাড়াও, দক্ষিণ কোরিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, কিম আসন্ন কোনও সামরিক সংঘর্ষের প্রস্তুতির চেয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছেন মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব তৈরির দিকে।

এই প্রস্তুতির অর্থ কী?

‘আসল যুদ্ধের প্রস্তুতি’ মানেই কি যুদ্ধ শুরু হবে? না কি এটি কেবল একটি রাজনৈতিক বার্তা?

উত্তর কোরিয়া দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। বিভিন্ন সময় পারমাণবিক পরীক্ষা ও ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে এই উত্তেজনা বাড়িয়েছে তারা। কিমের সাম্প্রতিক বার্তাও সেই ধারাবাহিকতারই অংশ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্য আন্তর্জাতিক চাপে থাকা কিম সরকারের জন্য একটি শক্ত অবস্থানের প্রকাশ। বিশেষ করে পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা, চাপ এবং সামরিক চুক্তিগুলোর প্রেক্ষাপটে এটি কৌশলগত চাল হতে পারে।

শেষ কথা 

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের এই বার্তা বিশ্ববাসীকে আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, শান্তি নিশ্চিত করতে হলে কূটনৈতিক আলোচনার পথ কখনোই থেমে যাওয়া উচিত নয়। সামরিক শক্তি প্রদর্শন যতই কৌশল হোক না কেন, তা কখনো দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। এখন দেখার বিষয়, এই বার্তার পর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কীভাবে গড়ে ওঠে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা কতটা প্রভাবিত হ

এম আর এম – ০৫১২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button