বিশ্ব

নিউইয়র্ক মেয়র জোহরান মামদানির সমালোচনা নেতানিয়াহুর

Advertisement

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছেন। নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনী প্রচারণার প্রেক্ষাপটে মামদানির বিভিন্ন প্রস্তাবনা ও বক্তব্যকে নেতানিয়াহু ‘বোকামি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন, আগামী নভেম্বরে যদি মামদানি মেয়র নির্বাচিত হন, তবে এক মেয়াদের বেশি এই পদে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।

নেতানিয়াহুর সমালোচনা: মামদানির পরিকল্পনা ‘বাজে’ ও ‘বিভ্রান্তিকর’

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য এসেছে ‘দ্য ফুল সেন্ড পডকাস্টে’ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। সেখানে তিনি নিউইয়র্কের চলমান রাজনৈতিক পরিবেশ ও মামদানির প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেন। তাঁর মতে, মামদানির মেয়র পদপ্রার্থীর কিছু প্রস্তাব যেমন ‘পুলিশের অর্থায়ন বন্ধ করা’, ‘সমাজে বিশৃঙ্খলা বাড়ানো’ ইত্যাদি বাস্তবসম্মত নয় এবং এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে নিউইয়র্ক শহরের জনজীবনে বড় ক্ষতি হবে।

নেতানিয়াহু বলেন, “আপনি পুলিশ বিভাগ থেকে অর্থায়ন বন্ধ করতে চান? আপনি কি চান মানুষ দোকানে গিয়ে ডাকাতি করুক? আপনি কি মনে করেন এতে সমাজের উন্নতি হবে?” যদিও মামদানির বক্তব্য পুলিশ বিভাগ বন্ধ করার নয়, বরং তিনি পুলিশ বাহিনীর ভিতরে সম্পদ পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব দিয়েছেন যাতে পুলিশ সদস্যরা গুরুত্বপূর্ন অপরাধের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারেন।

‘ইহুদিবিদ্বেষ’ ও ইন্তিফাদা প্রসঙ্গে নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়া

সাক্ষাৎকারে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি ইসরায়েলবিরোধী বক্তব্য বা ইহুদিবিদ্বেষকে কঠোরভাবে সমালোচনা করি।” মামদানিকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ আখ্যা দেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়। জানা যায়, মামদানি ‘ইন্তিফাদা’ নামক ফিলিস্তিনি বিদ্রোহ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছেন, যা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ।

‘ইন্তিফাদা’ শব্দটি ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ ও বিদ্রোহের জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ আন্দোলন। এই বিষয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “মামদানির ‘ইন্তিফাদা’ শব্দটির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি উদ্বেগজনক।”

মামদানির কর নীতি ও অর্থনৈতিক প্রস্তাবের সমালোচনা

নিউইয়র্কের সবচেয়ে ধনী মানুষদের ওপর কর আরোপ করার পরিকল্পনা নিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, “আপনি কি সব ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিতে চান? কর বাড়িয়ে মানুষকে ঠেলে দিচ্ছেন দারিদ্র্যের দিকে?” তিনি মন্তব্য করেন, এ ধরনের পরিকল্পনা কেবলমাত্র একটি মেয়াদের জন্য প্রযোজ্য হবে এবং এর ফলে মামদানি আর মেয়র পদে টিকে থাকতে পারবেন না।

নিউইয়র্কে ইহুদিদের অবস্থান ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

নিউইয়র্ক শহরে প্রায় ১২ লাখ ইহুদি বাস করেন, যা এটিকে ইহুদি জনগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান কেন্দ্র বানিয়েছে। এই শহরের মেয়র পদপ্রার্থী হিসেবে মামদানির অবস্থান ও তার ইসরায়েল বিরোধী মনোভাব ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি ইসরায়েল ও তার সামরিক কর্মকাণ্ডের কড়া সমালোচক হিসেবে পরিচিত। তাঁর এক ঘোষণায় বলা হয়, যদি নেতানিয়াহু নিউইয়র্ক আসেন, তাকে গ্রেপ্তার করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

মামদানির প্রস্তাবনা ও নেতানিয়াহুর বক্তব্যের বিশ্লেষণ

জোহরান মামদানির প্রধান প্রস্তাবনাগুলোর মধ্যে রয়েছে:

  • পুলিশ বিভাগে অর্থায়নের পুনর্বিন্যাস ও পুনর্গঠন, যাতে তারা গুরুতর অপরাধের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে পারে।
  • শহরের ধনী মানুষদের ওপর কর আরোপ, যা শহরের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমতা বজায় রাখার উদ্দেশ্য।
  • পুলিশের আধুনিকায়ন এবং কর্মী সংখ্যা বজায় রাখার পরিকল্পনা।

অন্যদিকে, নেতানিয়াহু এই প্রস্তাবনাগুলোকে ‘অবাস্তব’ ও ‘সমাজের জন্য ক্ষতিকর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি মনে করেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে নিউইয়র্কে আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক পরিবেশ নষ্ট হবে।

নিউইয়র্কের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সামনের নির্বাচন

২০২৫ সালের নভেম্বরে নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে জোহরান মামদানির পাশাপাশি অন্যান্য শক্তিশালী প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মামদানির প্রস্তাব ও বক্তব্য অনেকেই সমর্থন করছেন, বিশেষ করে শহরের নিম্নবিত্ত ও তরুণ সমাজ। তবে ইসরায়েল ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাব নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইসরায়েল ও নিউইয়র্কের সম্পর্ক

নিউইয়র্কের ইহুদি জনগোষ্ঠীর বিশাল উপস্থিতি এবং তাদের রাজনৈতিক প্রভাব আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক জোরদার করতে এই সম্প্রদায়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এই নির্বাচনের ফলাফল কেবল স্থানীয় নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলতে পারে।

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কড়া ভাষায় মামদানির সমালোচনা ও তার মেয়র পদে এক মেয়াদে সীমাবদ্ধ থাকার দাবি নিউইয়র্কের নির্বাচনী মঞ্চে উত্তেজনা বাড়িয়েছে। এই বিতর্ক শুধু নিউইয়র্কের নয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতিরও এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সারসংক্ষেপ:

  • ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিউইয়র্কের মেয়র পদপ্রার্থী জোহরান মামদানির পরিকল্পনা তীব্র সমালোচনা করেছেন।
  • মামদানির প্রস্তাবনা যেমন পুলিশের অর্থায়ন পুনর্বিন্যাস, ধনী মানুষের ওপর কর আরোপ, ইসরায়েলবিরোধী মনোভাব ইত্যাদি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।
  • নেতানিয়াহু বলেছেন, মামদানি মেয়র নির্বাচিত হলেও এক মেয়াদের বেশি টিকে থাকবেন না।
  • নিউইয়র্ক শহরের বড় ইহুদি সম্প্রদায় এই নির্বাচনের প্রভাবকে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করছে।

কীভাবে নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব পাচ্ছে, মামদানির প্রস্তাবনাগুলো কীভাবে সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে শহরে প্রভাব ফেলবে, এবং নেতানিয়াহুর সমালোচনার পেছনে রাজনৈতিক বাস্তবতা—এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে থাকুন সিগনালবিডিতে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button