ফ্যাক্ট চেক

দুর্ঘটনা ও আগুনে পুড়ে নিহতদের জন্য রয়েছে শহিদি মর্যাদা

Advertisement

 শুধু যুদ্ধে শহিদ হওয়া নয়, ইসলাম মতে আগুনে পুড়ে, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে কিংবা মহামারিতে মৃত্যু হলেও পাওয়া যায় শহিদের মর্যাদা। হাদিসে এই মৃত্যুদের রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব।

ইসলাম কীভাবে শহিদের মর্যাদা সংজ্ঞায়িত করে?

ইসলাম ধর্মে শহিদি মৃত্যু অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটি বিষয়। সাধারণভাবে অনেকেই মনে করেন, শুধু যুদ্ধক্ষেত্রে শহিদ হওয়াকেই ইসলাম শহিদি মৃত্যু হিসেবে চিহ্নিত করে। তবে কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে জানা যায়, ইসলামে শহিদ হওয়ার আরও কিছু নির্দিষ্ট অবস্থা রয়েছে, যেখানে ব্যক্তি যুদ্ধ ছাড়া অন্য কোনো দুর্ঘটনায় মারা গেলেও তিনি শহিদের মর্যাদা লাভ করতে পারেন।

হাদিসে বর্ণিত শহিদের প্রকারভেদ

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে…” (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৮৫)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন হাদিসে শহিদদের একাধিক ধরণের কথা উল্লেখ করেছেন।

সহিহ বুখারিতে বর্ণিত এক হাদিসে (হাদিস: ২৬৩৩-২৬৩৪) রাসুল (সা.) বলেন:
“পাঁচ ধরনের মৃত্যুকে শহিদি মৃত্যু বলা হয়—
১. মহামারিতে মৃত ব্যক্তি
২. পেটের ব্যাধিতে মৃত ব্যক্তি
৩. পানিতে ডুবে মারা যাওয়া
৪. ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত্যু
৫. যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে নিহত হন”

এছাড়াও, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি, সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করা নারীদেরও শহিদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। (সূত্র: সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৩১১১)

আগুনে পুড়ে ও ধসে পড়ে নিহত হওয়াদের মর্যাদা

বর্তমানে নানা দুর্ঘটনায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন—আগুনে পুড়ে যাওয়া, ভবন ধসে চাপা পড়া কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু। ইসলাম এ ধরনের মৃত্যুকেও অবহেলা করেনি। বরং এদের মর্যাদা ও আত্মত্যাগের মূল্য দিয়েছে।

আগুনে পুড়ে যাওয়া ব্যক্তির মৃত্যু:

হাদিস অনুযায়ী, আগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহিদ। কারণ আগুনের যন্ত্রণা সহ্য করে মৃত্যুবরণ এক ধরণের আত্মত্যাগ ও কষ্টের পরিণতি, যা ইসলামে আলাদা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে।

ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত্যু:

ভবন ধসে চাপা পড়ে যারা মারা যান, যেমনটি আমরা দেখেছি সাম্প্রতিক সময়ের কয়েকটি দুর্ঘটনায়—তাদের মৃত্যুকেও হাদিসে শহিদি মৃত্যু হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।

শহিদের মর্যাদার গুরুত্ব ও প্রতিদান

শহিদ হওয়া মানে শুধু মৃত্যুবরণ নয়, বরং আল্লাহর বিশেষ রহমত ও পুরস্কার লাভ করা। হাদিসে শহিদের মর্যাদা সম্পর্কে বলা হয়েছে:

  • শহিদকে কবরের আজাব দেয়া হয় না
  • কেয়ামতের দিন তার জন্য জান্নাত নিশ্চিত থাকে
  • তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় (সংশ্লিষ্ট হাদিস: তিরমিজি)

তবে বিশেষজ্ঞ আলেমগণ বলেন, এখানে ‘নিয়ত’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ব্যক্তি যদি নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে বা অন্যকে রক্ষা করতে গিয়ে আগুনে পুড়ে মারা যান বা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মারা যান—তবে তাঁর মৃত্যুকে শহিদি মর্যাদার মধ্যে গণ্য করা হবে।

পূর্বেও এমন বহু উদাহরণ রয়েছে

বাংলাদেশে কিংবা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আগুন বা দুর্ঘটনায় নিহত বহু মানুষকে ইসলামি স্কলাররা শহিদ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন।

যেমন রানা প্লাজা ধসে যারা নিহত হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ভবন ধসে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। সেসব ক্ষেত্রে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে তাঁদের মৃত্যুকে শহিদি মৃত্যু হিসেবে গণ্য করা হয়।

এছাড়া অগ্নিকাণ্ডে উদ্ধার করতে গিয়ে যারা নিজের জীবন উৎসর্গ করেন, যেমন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা—তাঁদের ক্ষেত্রেও এই মর্যাদা প্রযোজ্য হতে পারে, বিশেষ করে যদি তাঁদের মৃত্যু আত্মত্যাগের চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত হয়।

ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে সচেতনতার প্রয়োজন

অনেকেই দুর্ঘটনায় নিহতদের কেবল ‘দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু’ বলে ভাবেন, অথচ ইসলাম এদের অনেকের জন্য শহিদির মর্যাদা নির্ধারণ করেছে। তাই এসব বিষয়ে সঠিক জ্ঞান থাকা জরুরি।

বিশেষ করে আজকের আধুনিক সময়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। সমাজে এসব মৃত্যুকে যথাযথভাবে সম্মান ও দোয়ার মাধ্যমে স্মরণ করা প্রয়োজন। মৃত্যুর পর পরেই শহিদের মর্যাদা কেউ দাবি করতে না পারলেও, কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিষয়গুলো যাচাই করে সম্মান জানানো একটি সুন্দর ধর্মীয় আচরণ।

“আগুনে পুড়ে, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে কিংবা সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাওয়া নারীদের শহিদি মর্যাদা আল্লাহ দিয়েছেন”—হাদিস: সুনানে আবু দাউদ (৩১১১)

সারসংক্ষেপ 

শহিদি মৃত্যু শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। আগুনে পুড়ে, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে কিংবা মহামারিতে যারা প্রাণ হারান, ইসলাম তাঁদেরকেও শহিদের মর্যাদা দেয়।

এটি কেবল মৃত্যুর একটি ধর্মীয় মর্যাদাই নয়, বরং এদের আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি আলোকিত দৃষ্টিভঙ্গি। আজকের সমাজে, যখন দুর্ঘটনা ও আগুনে প্রাণ হারানো একটি সাধারণ বাস্তবতা হয়ে উঠেছে, তখন এই শহিদি মর্যাদা আমাদেরকে মৃতদের প্রতি সম্মান ও দোয়া জানাতে শেখায়।

এম আর এম – ০৪৪৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button