মানুষ সৃষ্টিগতভাবে ভুল করে। বারবার গুনাহ করে ফেলা, আবার অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসা—এটাই মানবচরিত্র। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তওবার পর আবারও গুনাহ হয়ে গেলে কী করণীয়? আল্লাহ কি সেই বান্দাকে ক্ষমা করবেন? ইসলামের দৃষ্টিতে এই প্রশ্নটির উত্তর অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও করুণাময়।
তওবা মানে কী এবং কেন তা এত গুরুত্বপূর্ণ?
তওবা শব্দের অর্থ ফিরে আসা। ইসলামি পরিভাষায়, আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কাজ ছেড়ে তাঁর সন্তুষ্টির দিকে ফিরে যাওয়াকেই তওবা বলা হয়। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে বলেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ২২২)
তওবা আল্লাহর রহমতের অন্যতম প্রধান দরজা। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ডেকে বলেন—“হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর সীমালঙ্ঘন করেছো, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।” (সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩)
বারবার গুনাহ করে ফেললে কি তওবা কবুল হয়?
মানুষ অনেক সময় তওবা করার পরও আবারো গুনাহ করে ফেলে। তখন মনে প্রশ্ন জাগে—আমার তওবা কি আর কবুল হবে? হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি একাধিকবার গুনাহ করে প্রতিবার তওবা করলে আল্লাহ প্রতিবারই ক্ষমা করেন। (সহিহ বুখারি: ৬৯৯৮)
আল্লাহ এমনও বলেছেন, যদি কোনো বান্দা প্রতিদিন ৭০ বারও গুনাহ করে ও প্রতিবার অনুতপ্ত হয়ে ফিরে আসে, তবে তা ‘ইসরার’ (অবিচলভাবে গুনাহে লিপ্ত থাকা) হিসেবে গণ্য হবে না।
তওবা কবুলের শর্তগুলো কী?
তওবা কবুল হওয়ার জন্য ইসলামে তিনটি মৌলিক শর্ত রয়েছে:
- গুনাহ ত্যাগ করা: ওই কাজ সম্পূর্ণরূপে ছেড়ে দেওয়া।
- অনুতপ্ত হওয়া: অন্তরে সত্যিকারের অনুশোচনা থাকা।
- দৃঢ় প্রতিজ্ঞা: ভবিষ্যতে ওই গুনাহ আর না করার দৃঢ় সংকল্প করা।
যদি এই তিনটি শর্ত পূরণ করে তওবা করা হয়, তবে আল্লাহর দরজায় সে তওবা কবুল হওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকে।
আল্লাহর রহমত কতটা প্রশস্ত?
আল্লাহর একটি নাম হলো ‘আত্তাওয়াব’, অর্থাৎ যিনি বারবার তওবা কবুল করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এক হাদিসে বলেন,
“আল্লাহ তাওবাকারী বান্দার প্রতি সেই ব্যক্তির চেয়েও বেশি খুশি হন, যে মরুভূমিতে তার হারানো উট ফিরে পায়।” (সহিহ বুখারি: ৫৮৭০)
অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমা এতটাই উদার যে বান্দার সামান্য অনুশোচনাতেও তিনি খুশি হন ও ক্ষমা করে দেন।
শয়তানের ধোঁকা থেকে সাবধান
গুনাহের পরে শয়তান বান্দাকে হতাশ করতে চায়। সে মনে করিয়ে দেয়, “তুমি তো বারবার পাপ করেছ, তোমার আর ক্ষমা নেই।” অথচ এটা আল্লাহর রহমতের বিরুদ্ধে কুফরীর শামিল। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:
“আল্লাহর রহমত থেকে কেবল গোমরাহরাই নিরাশ হয়।” (সূরা হিজর, আয়াত: ৫৬)
তাই যতবার গুনাহ হবে, ততবারই অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে আসা উচিত।
নবীজির (সা.) জীবনে তওবার গুরুত্ব
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে ছিলেন নিষ্পাপ, তবুও প্রতিদিন অন্তত ৭০ বার তওবা করতেন। হাদিসে এসেছে,
“আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে সত্তর বার তওবা করি।” (সহিহ বুখারি: ৫৮৬৮)
এই হাদিস প্রমাণ করে যে, তওবা শুধু পাপীদের জন্য নয়, বরং এটি ধারাবাহিক আত্মশুদ্ধির একটি মাধ্যম।
গুনাহের পুনরাবৃত্তি হলেও হতাশ হওয়া যাবে না
এক ব্যক্তি আল্লাহর কাছে বারবার তওবা করেও যদি আবার গুনাহে লিপ্ত হয়, তাহলে করণীয় হলো—আবার তওবা করা। প্রতিবার আন্তরিক অনুশোচনার সাথে তওবা করলে আল্লাহ ক্ষমা করেন। হাদিসে এসেছে,
“আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা জানে যে, তার একজন রব আছে, যিনি গুনাহ মাফ করেন… তাই আমি তাকে ক্ষমা করলাম।” (সহিহ বুখারি: ৬৯৯৮)
তওবার মাধ্যমে পাপ নেকিতে পরিণত হয়
তওবার সৌন্দর্য হলো, খাঁটি অনুশোচনায় আল্লাহ শুধু পাপ মাফই করেন না, বরং সেই পাপকে নেকিতে পরিণত করে দেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
“যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, আল্লাহ তার মন্দ কাজগুলোকে ভালো কাজে পরিণত করে দেবেন।” (সূরা ফুরকান, আয়াত: ৭০)
কখনো হাল ছাড়বেন না
মানুষ পাপ করবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পাপের পরে অনুশোচনায় ফিরে আসাটাই একজন প্রকৃত মুমিনের পরিচয়। যতবার গুনাহ হবে, ততবার তওবা করুন। আল্লাহ কখনো ক্লান্ত হন না, বরং বান্দার প্রত্যাবর্তনে তিনি আরও বেশি খুশি হন।
এম আর এম – ০৪৩৩, Signalbd.com



