কর্মসংস্থান

স্বামী-স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানায় প্রাথমিক শিক্ষকদের বদলির আবেদন শুরু

Advertisement

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা এখন থেকে স্বামী বা স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলির জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনায় এ সুবিধা চালু হয়েছে, যা শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।

২০ জুলাই থেকে শুরু হওয়া অনলাইন আবেদনের সময়সীমা চলবে আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত।

অনলাইনে বদলির আবেদন: কীভাবে চলবে প্রক্রিয়া

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, অনলাইনের মাধ্যমে বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন শিক্ষকরা। আবেদনপত্রে সর্বোচ্চ তিনটি বিদ্যালয় পছন্দক্রম অনুযায়ী উল্লেখ করা যাবে।

যে শিক্ষকরা বদলির জন্য আবেদন করবেন, তারা আবেদন সাবমিট করার পর তা আর বাতিল করার সুযোগ পাবেন না। অর্থাৎ পছন্দক্রম অনুযায়ী বদলি চূড়ান্ত হলে পরে আর তা পরিবর্তন বা বাতিলের সুযোগ থাকবে না।

বদলির ধাপ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ভূমিকা

এই বদলি কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট থাকবেন প্রধান শিক্ষক, উপজেলা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, বিভাগীয় উপপরিচালক এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক।

তারা আবেদন যাচাই-বাছাই ও অনুমোদনের কাজ করবেন। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হবে ৩১ আগস্টের মধ্যে।

বদলির ধরন: একাধিক পর্যায়ে আবেদন

নতুন এ নীতিমালায় শিক্ষকরা আন্তঃউপজেলা (একই জেলার মধ্যে), আন্তঃজেলা (একই বিভাগের মধ্যে) এবং আন্তঃবিভাগে (এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে) বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

তবে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বিদ্যালয়গুলো এই প্রক্রিয়ার বাইরে থাকবে। অর্থাৎ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের এই সুযোগ প্রযোজ্য হবে না।

বদলির নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই

২০২৩ সালের ১০ অক্টোবর জারিকৃত ‘সমন্বিত অনলাইন বদলি নির্দেশিকা’ অনুসারেই আবেদন যাচাই হবে। যাচাইকারী কর্মকর্তারা এই নির্দেশিকার আলোকে আবেদনকারীর কাগজপত্র পরীক্ষা করবেন।

যদি কোনো কর্মকর্তা অসতর্কভাবে বা ভুলভাবে যাচাই করেন, তাহলে তা পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকবে না। এটি স্পষ্টভাবে নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে, যাতে অনিয়ম রোধ করা যায়।

দীর্ঘদিনের দাবি পূরণে পদক্ষেপ

শিক্ষকদের স্বামী-স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলির সুযোগ দেওয়ার দাবি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। বহু শিক্ষক পরিবার থেকে দূরে কর্মরত থাকায় মানসিক ও সামাজিক চাপের মধ্যে পড়তেন।

এই সুবিধা চালুর মাধ্যমে একদিকে যেমন পারিবারিক জীবন সহজ হবে, অন্যদিকে শিক্ষকরা আরও মনোযোগ সহকারে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে মনে করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

প্রভাব: শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক দিক

এই বদলি প্রক্রিয়ার ফলে শিক্ষকরা পরিবার-সংলগ্ন এলাকায় কর্মরত থাকার সুযোগ পাবেন। এতে পারিবারিক বন্ধন যেমন সুদৃঢ় হবে, তেমনি শিক্ষকরা মানসিকভাবে স্বস্তিতে থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য আরও ভালো পাঠদান নিশ্চিত করতে পারবেন।

বিশেষ করে যেসব পরিবারে উভয় স্বামী-স্ত্রী শিক্ষক, তাদের জন্য এই বদলি সুবিধা অত্যন্ত কার্যকর হতে যাচ্ছে।

সতর্কতা ও নির্দেশনার মূল পয়েন্ট

১. শিক্ষকরা সর্বোচ্চ তিনটি বিদ্যালয় পছন্দক্রমে উল্লেখ করতে পারবেন।
২. বদলি আদেশ হলে তা আর বাতিলযোগ্য হবে না।
৩. যাচাইকারী কর্মকর্তাদের আবেদন কঠোরভাবে নির্দেশিকা অনুযায়ী যাচাই করতে হবে।
৪. সিটি করপোরেশন এলাকার বিদ্যালয়গুলো এই প্রক্রিয়ার বাইরে থাকবে।

বিশেষজ্ঞ মত: দীর্ঘমেয়াদী সুফল আশা

শিক্ষাবিদদের মতে, এই নীতিমালার বাস্তবায়ন হলে শিক্ষকরা নিজ এলাকায় থেকে পড়াতে পারবেন, যা শিক্ষার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

একজন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেছেন, “শিক্ষকদের মনস্তাত্ত্বিক স্বস্তি ও পারিবারিক স্থিতিশীলতা শিক্ষা পরিবেশকে আরও উন্নত করবে।”

এক ইতিবাচক পরিবর্তনের সূচনা

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষকদের স্বামী বা স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানায় বদলি সুবিধা চালু হওয়া নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

এই সুযোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষক সমাজের দীর্ঘদিনের চাহিদা পূরণ হলো। এখন অপেক্ষা প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার এবং শিক্ষকদের জন্য এটি একটি বাস্তব স্বস্তিতে পরিণত হওয়ার।

এম আর এম – ০৪৩২, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button