বিশ্ব

ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় ধ্বংসস্তূপের পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টন

Advertisement

গাজার ৯২ শতাংশ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ইসরায়েলি আগ্রাসনে। ভয়াবহ এই ধ্বংসযজ্ঞের ফলে গাজা উপত্যকায় জমেছে প্রায় ৫ কোটি টন ধ্বংসাবশেষ। এতে গড়েছে মানবিক বিপর্যয়, বাস্তুচ্যুত হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ।

আগ্রাসনের তাণ্ডবে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর লাগাতার বিমান হামলা, স্থল অভিযান এবং বুলডোজার দিয়ে ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়ার কারণে গাজা উপত্যকা এখন এক বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, এই আগ্রাসনে গাজার প্রায় ৯২ শতাংশ বসতবাড়ি ধ্বংস হয়েছে, যার ফলে সেখানে জমে আছে প্রায় ৫ কোটি টন ধ্বংসাবশেষ। এই বিপুল পরিমাণ ধ্বংসস্তূপ সরাতে লেগে যাবে কয়েক দশক।

ইসরায়েলের কৌশলগত ধ্বংসযজ্ঞ

গাজায় শুধু সামরিক বাহিনী নয়, ইসরায়েল তাদের বেসরকারি ঠিকাদারদেরও কাজে লাগাচ্ছে এই ধ্বংসযজ্ঞে। বিভিন্ন ভারী যন্ত্রপাতি, বিশেষ করে বুলডোজার ব্যবহার করে একের পর এক আবাসিক ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, ধর্মীয় উপাসনালয় ধ্বংস করছে তারা। মিডল ইস্ট আই এর তথ্য অনুযায়ী, এসব ঠিকাদারদের প্রতিদিন দেওয়া হচ্ছে প্রায় ১৫০০ ডলার করে। একেকটি বহুতল ভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার বিনিময়ে ঠিকাদারদের দেওয়া হচ্ছে হাজার ডলারেরও বেশি পারিশ্রমিক।

অনলাইন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ বাড়াতে তৎপর হয়ে উঠেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। এই উদ্যোগে অংশ নেওয়ার শর্ত হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কাছে আধুনিক ও শক্তিশালী যন্ত্রপাতি থাকতে হবে।

গণহত্যার ভয়াবহ চিত্র ও মানবিক বিপর্যয়

ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে গাজায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৫৮ হাজার ৮০০ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে আরও ১ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। এদের অনেকেই এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। প্রতিদিন নতুন করে ত্রাণ নিতে গিয়ে নিহত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ।

গাজা সরকারের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি বাহিনী ১ লাখ ২৫ হাজার টন বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে, যার ফলে উপত্যকার ৮৮ শতাংশ ভূখণ্ড ধ্বংস হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, প্রায় ২ লাখ ৮৮ হাজার পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে, যাদের মধ্যে অনেকেই এখন আশ্রয়শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

পরিসংখ্যান ও তুলনা: এক নজরে ধ্বংসের পরিমাণ

  • ৯২% ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণ ধ্বংস
  • জমে থাকা ধ্বংসাবশেষের পরিমাণ: প্রায় ৫০ মিলিয়ন টন
  • ৮৮% ভূখণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি
  • ২২৩,০০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস
  • ১৩০,০০০ বসবাসের অনুপযোগী
  • ৬২ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি
  • ৬৫০ দিনের আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত
  • ৯৫০০ জন এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে

স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অবকাঠামো ধ্বংসের চিত্র

ইসরায়েলি বাহিনী গাজার ৩৮টি হাসপাতাল, ৯৬টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও ১৪৪টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংস করেছে। ১৫৬টি স্কুল পুরোপুরি এবং ৩৮২টি আংশিকভাবে ধ্বংস হয়েছে। এছাড়াও গাজার ৮৩৩টি মসজিদ, ৩টি গির্জা এবং ৪০টি কবরস্থান আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়েছে।

একাধিক গণকবর তৈরি করেছে ইসরায়েলি বাহিনী, তুলে নিয়েছে প্রায় ২ হাজার ৪২০টি মৃতদেহ। এসব ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে, এ হামলা শুধু সামরিক নয়, বরং একটি পরিকল্পিত জাতিগত নিধনকেও নির্দেশ করে।

দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ও পুনর্গঠনের চ্যালেঞ্জ

গাজায় গড়ে ওঠা এই ৫ কোটি টন ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করতেই লেগে যেতে পারে কয়েক দশক। এর জন্য প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থ, সময় ও আন্তর্জাতিক সহায়তা। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সহায়তার আশাও দুরূহ হয়ে পড়েছে, কারণ ইসরায়েল ক্রমাগতভাবে আন্তর্জাতিক ত্রাণ কার্যক্রমেও বাধা দিচ্ছে।

গাজায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস হওয়ায় সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭১ হাজারের বেশি মানুষ। শিশুদের অপুষ্টি, আশ্রয়হীনতার কারণে শীতজনিত মৃত্যু—সব মিলিয়ে গাজা এখন এক মানবিক বিপর্যয়ের নাম।

কোন দিকে যাচ্ছে গাজার ভবিষ্যৎ?

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েলের এই অব্যাহত আগ্রাসন শুধু গাজাকেই ধ্বংস করছে না, গোটা মানবতার জন্যই হুমকি হয়ে উঠছে। ধ্বংসস্তূপ সরানো, পুনর্গঠন ও বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসন—সবই এখন এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক মহলের হস্তক্ষেপ ছাড়া গাজার ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকারের দিকে এগোচ্ছে।

এম আর এম – ০৪২৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button