অর্থনীতি

বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর

Advertisement

বাংলাদেশ সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে এক ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে আগামী পাঁচ বছর প্রতিবারে ৭ লাখ টন করে উচ্চমানের গম আমদানি করবে বাংলাদেশ। এই চুক্তি দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিমানের উন্নয়নে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

বিস্তারিত সংবাদ: যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি নিয়ে সমঝোতা স্মারক

রোববার সচিবালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর ও ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ কে সওয়ার স্বাক্ষর করেন।

খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির মান উন্নয়নের জন্য এই চুক্তি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এতে গমের নিরাপদ ও প্রতিযোগিতামূলক দাম নিশ্চিত হবে, যা দেশের খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।

পাঁচ বছর মেয়াদী গম আমদানির গুরুত্ব ও প্রভাব

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ক্রমবর্ধমান এবং খাদ্য চাহিদা ত্বরান্বিত হওয়ায় দেশটির খাদ্য নিরাপত্তা সুরক্ষায় গম আমদানির একটি বড় অংশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই নতুন চুক্তির মাধ্যমে দেশটি যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি বছর ৭ লাখ টন উচ্চমানের গম পাবে, যা স্থানীয় বাজারে গমের প্রাপ্যতা বৃদ্ধি করবে ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম বড় গম উৎপাদক ও রপ্তানিকারক দেশ। তাই বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরাসরি গম আমদানির চুক্তি দেশের খাদ্য বাজারে স্থায়িত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।

কী বললেন সংশ্লিষ্টরা?

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, “এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যিক আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং খাদ্য সরবরাহে নতুন গতি আসবে। উভয় দেশের জনগণ এতে সরাসরি উপকৃত হবে।”

খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। তিনি এই চুক্তি দুই দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় সহযোগিতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বর্ণনা করেন।

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গমের গুরুত্ব

বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য গম একটি অপরিহার্য খাদ্য শস্য। দেশীয় উৎপাদন যথেষ্ট নয়, তাই আমদানি ছাড়া চাহিদা পূরণ অসম্ভব। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, খাদ্য সংকট এড়াতে আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো হলেও গম আমদানি অব্যাহত থাকবে যাতে বাজারে চাহিদা মেটানো যায়।

এই নতুন চুক্তির ফলে গম আমদানির খরচ কমে আসবে এবং তা পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। বিশেষ করে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ ও ন্যায্যমূল্যের চাহিদা পূরণে এ চুক্তি সহায়ক হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের গম আমদানির বাজার ও গুণগত মান

যুক্তরাষ্ট্রের গম বিশ্বমানের উচ্চ গুণগতমানের হিসেবে স্বীকৃত। কৃষি প্রযুক্তি ও আধুনিক প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে উৎপাদিত এই গমে রয়েছে পুষ্টি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিভিন্ন মানদণ্ড।

বাংলাদেশ এই গম আমদানি করে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন ছাড়াও খাদ্যের পুষ্টিমান বৃদ্ধিতে গুরুত্ব দেবে। বিশেষ করে বেকারি শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও অন্যান্য খাদ্যশিল্পের জন্য উচ্চমানের গম আমদানির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত

গম আমদানির এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে। দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার পাশাপাশি খাদ্য শিল্প ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর সম্ভাবনাও বাড়বে।

এ ধরনের চুক্তি বাংলাদেশকে গ্লোবাল মার্কেটে আরও সংযুক্ত করবে এবং খাদ্য সুরক্ষায় আত্মনির্ভরশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও চ্যালেঞ্জ

খাদ্য মন্ত্রণালয় ভবিষ্যতে গম আমদানির পাশাপাশি দেশীয় গম উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও কাজ করছে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, সেচ ব্যবস্থা উন্নয়ন এবং কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে গমের আবাদ বৃদ্ধি করা হবে।

তবে বিশ্ববাজারে গমের মূল্য ওঠানামা, পরিবহন খরচ এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই সরকার বাজারের স্থিতিশীলতা ও আমদানি চেইন ম্যানেজমেন্ট আরও শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছে।

সারসংক্ষেপ

  • বাংলাদেশ আগামী পাঁচ বছর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরে ৭ লাখ টন গম আমদানি করবে।
  • চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর ও ইউএস হুইট অ্যাসোসিয়েশনের মধ্যে।
  • গম আমদানি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
  • যুক্তরাষ্ট্রের গুণগতমানসম্পন্ন গম আমদানির ফলে খাদ্য বাজার স্থিতিশীল হবে।
  • বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও কৃষিক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

কীভাবে গম আমদানির এই চুক্তি বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তায় প্রভাব ফেলবে?

বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে খাদ্যের পর্যাপ্ততা নিশ্চিত করা জরুরি। গম আমদানির মাধ্যমে দেশে খাদ্যের ঘাটতি পূরণ সম্ভব হবে, বিশেষ করে উচ্চ গুণগতমানের খাদ্যপণ্য উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য এই শস্য।

সরকারের দীর্ঘমেয়াদী খাদ্য নিরাপত্তা নীতি বাস্তবায়নে এই ধরনের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে গম আমদানির চুক্তি দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, যা বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button