ফ্যাক্ট চেক

মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে নিউরোলজিস্টের ৫ পরামর্শ

Advertisement

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মতো মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়াও অত্যন্ত জরুরি। নিউরোলজিস্টরা বলছেন, কিছু সহজ পরিবর্তনেই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব। নতুন কিছু শেখা, শারীরিক সক্রিয়তা ও সামাজিক যোগাযোগ—এই অভ্যাসগুলো মস্তিষ্ককে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

মস্তিষ্কের যত্ন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের মস্তিষ্ক। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কগনিটিভ ক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। স্মৃতিভ্রংশ, মনোযোগ কমে যাওয়া, চিন্তার ধরণে পরিবর্তন—এসবই মস্তিষ্কের দুর্বলতার লক্ষণ হতে পারে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে প্রায় ৫৭ মিলিয়ন মানুষ ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশে ভুগছেন। তবে নিয়মিত জীবনযাপনে সচেতনতা ও কিছু অভ্যাস মেনে চললে এই ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন কিছু শেখা: মস্তিষ্কের ব্যায়াম

নতুন কোনো বিষয় শেখা মস্তিষ্কের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এটি শুধু জ্ঞান বাড়ায় না, মস্তিষ্কে নতুন নিউরাল কানেকশন তৈরি করে।

যেমন, একটি নতুন ভাষা শেখা, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, নতুন কোনো কোর্সে অংশগ্রহণ করা কিংবা কোডিং, আঁকাআঁকি, হস্তশিল্প ইত্যাদিতে মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে।

নিউরোলজিস্টদের মতে, শেখার অভ্যাস মস্তিষ্ককে নমনীয় ও সচল রাখে, যা দীর্ঘমেয়াদে স্মৃতিভ্রংশের ঝুঁকি হ্রাস করে।

তারা পরামর্শ দেন এমন কিছু বেছে নিতে যা আপনার কাছে আনন্দদায়ক, কারণ চাপ বা বিরক্তি থেকে শেখা মস্তিষ্কের জন্য ততটা কার্যকর নয়।

নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম: রক্ত চলাচল বাড়ায়

শরীরচর্চা শুধু পেশি শক্তিশালী করে না, এটি মস্তিষ্কেও সরাসরি প্রভাব ফেলে। শারীরিক পরিশ্রম মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বাড়ায়, যা অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত করে।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, সপ্তাহে অন্তত ৩ থেকে ৪ দিন উচ্চ হৃৎস্পন্দন সৃষ্টিকারী ব্যায়াম করলে মস্তিষ্ক দীর্ঘমেয়াদে ভালো থাকে।

এমনকি হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটাচলা বা ইয়োগাও উপকারি। গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে মাত্র ৪,০০০ ধাপ হাঁটার অভ্যাস স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

সামাজিক যোগাযোগ: নিঃসঙ্গতা মস্তিষ্কে ক্ষতি করে

মানব মস্তিষ্ক একটি ‘সোশ্যাল ব্রেইন’। প্রিয়জন, বন্ধু বা সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলে মস্তিষ্ক সক্রিয় ও সজীব থাকে।

গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, যারা নিঃসঙ্গতায় ভোগেন, তাদের হিপোক্যাম্পাস (স্মৃতি সংরক্ষণের কেন্দ্রীয় অঞ্চল) ছোট হয়ে যেতে পারে, যা আলঝেইমারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

নিউরোলজিস্টদের মতে, সামাজিক মেলামেশা হতে পারে গল্প করা, আড্ডা দেওয়া, পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো বা কোনো কমিউনিটি গ্রুপে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে।

তারা বলেন, যা করতে ভালো লাগে তা করুন, তবে সেটা অন্যদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেই করুন।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: মস্তিষ্কের জন্য অতীব জরুরি

উচ্চ রক্তচাপ শুধু হার্ট নয়, মস্তিষ্কের জন্যও বড় ঝুঁকি। এটি মস্তিষ্কের রক্তনালীর ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে সেরিব্রোভাসকুলার রোগ ও স্ট্রোক হতে পারে।

এই রোগগুলোর অনেক সময় ডিমেনশিয়ার সূচনা করে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৩০ বা ৪০ বছর বয়স থেকেই রক্তচাপ পর্যবেক্ষণ করা উচিত। প্রাথমিক অবস্থায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে ভবিষ্যতের জটিলতা অনেকাংশে এড়ানো যায়।

মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন: চাপ কমানো জরুরি

যদিও এটি অনেকেই অবহেলা করেন, তবে মানসিক চাপ মস্তিষ্কের অন্যতম শত্রু। দীর্ঘমেয়াদী স্ট্রেস নিউরনের ক্ষতি করতে পারে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস করে।

ধ্যান, শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম এবং সময়মতো বিশ্রাম নেওয়া—এই উপায়গুলো মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।

নিউরোলজিস্টদের মতে, প্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো, সপ্তাহে একদিন মানসিকভাবে রিফ্রেশ হওয়ার সময় রাখা এবং নিজের পছন্দের কাজ করার সুযোগ রাখা উচিত।

“নতুন অভ্যাস, দীর্ঘজীবী মস্তিষ্ক”

“মস্তিষ্কের সুস্থতা নিশ্চিত করতে আমাদের প্রতিদিন কিছু সচেতন সিদ্ধান্ত নিতে হবে,” বলেন নিউরো বিশেষজ্ঞ ডা. আফরোজা রহমান।

তিনি বলেন, “নতুন কিছু শেখা, শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা—এই অভ্যাসগুলো ডিমেনশিয়া প্রতিরোধে চমৎকার কাজ করে।”

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য এখন থেকেই সংরক্ষণ করুন

বয়স যতই বাড়ুক না কেন, মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়া শুরু করা উচিত এখনই।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত ঘুম, সামাজিক সংযোগ এবং মানসিক প্রশান্তি—এই উপাদানগুলো মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

নতুন কিছু শেখা বা দিনে ৩০ মিনিট হাঁটা—এই ছোট ছোট অভ্যাসই দীর্ঘমেয়াদে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—আমরা নিজের মস্তিষ্কের যত্নে কতটা সচেতন হয়ে উঠছি?

এম আর এম – ০৪২০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button