বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ানোর প্রচেষ্টা: ডলার বাজারে চাপ, নিলাম পদ্ধতি চালুর আলোচনা
বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের শর্ত পূরণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ডলার কেনা হচ্ছে। এর ফলে দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকা ডলারের দর বাড়ছে। বর্তমানে কোনো কোনো ব্যাংক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউস থেকে ১২৫ টাকা ৪০ পয়সা দামে ডলার কিনছে।
এদিকে রমজান সামনে রেখে আমদানি বৃদ্ধি এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ডলারের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কে থাকার প্রেক্ষাপটে ডলারের দর বৃদ্ধি এই চাপ আরও বাড়াতে পারে।
রিজার্ভ বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা
বাংলাদেশ ব্যাংক ডিসেম্বরের শেষে নিট রিজার্ভ ১৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। এ জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের উদ্বৃত্ত ডলার কেনা হচ্ছে। তবে ব্যাংক খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই ডলার কেনার ক্ষেত্রে কোনো চাপ সৃষ্টি করছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা জানান, ‘‘চাহিদা বৃদ্ধির ফলে ডলারের দর সামান্য বেড়েছে। তবে রিজার্ভ বাড়ানোর লক্ষ্যেই আমরা ডলার সংগ্রহ করছি।’’
ডলারের বাজার এবং নিলাম পদ্ধতির ভাবনা
আইএমএফের পক্ষ থেকে ডলারের দরের স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তারা মনে করছে, ডলারের দর আরও বাজারভিত্তিক হওয়া উচিত। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার লেনদেনে নিলাম পদ্ধতি চালুর বিষয়ে আলোচনা করছে। যদিও এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
রেমিট্যান্স এবং রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি
হুন্ডি কার্যক্রম দমন এবং নীতি সংশোধনের ফলে প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রেমিট্যান্সে ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং রপ্তানিতে ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফলে রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
রিজার্ভের বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার। ১১ ডিসেম্বর এটি ছিল ১৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। তবে আগামী এক বছরের দায় বাদ দিয়ে নিট রিজার্ভ বর্তমানে ১৫ বিলিয়ন ডলারের নিচে রয়েছে।
২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এরপর করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক চাপ এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়।
ডলারের চাহিদা এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া
দেশের খোলাবাজারে ডলারের দর ১২৫ টাকায় উঠেছে, যা আগে ১২৩-১২৪ টাকার মধ্যে ছিল। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশের এক্সচেঞ্জ হাউসেও ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকগুলোর বড় এলসি খোলার কারণেও চাহিদা বেড়েছে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ‘‘রমজান সামনে রেখে বড় এলসি খোলা হচ্ছে। একই সঙ্গে আগের বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে। এর ফলে ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।’’
নিলাম পদ্ধতির সম্ভাবনা
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বাজার আরও কার্যকর এবং বাজারভিত্তিক করতে নতুন পদ্ধতি নিয়ে ভাবছে। নিলাম পদ্ধতির মাধ্যমে ডলারের লেনদেন শুরু হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে লেনদেন স্বচ্ছ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।