ইসরায়েলি আগ্রাসনের জেরে গাজা উপত্যকা এক জীবন্ত মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। শনিবার ভোর থেকেই বিমান হামলা ও গ্রেনাড বিস্ফোরণে কমপক্ষে ৪১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা অজানা, কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ও ফিলিস্তিনি সূত্রে জানা গেছে, জীবনের ঝুঁকি নিয়েও ত্রাণের জন্য তীব্র চাপে থাকা সাধারণ মানুষকে নিশানা করে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে ইসরায়েলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ)। খাবার ও চিকিৎসাসামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তারা, কিন্তু ফায়ারিংয়ে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন।
বাস্তুহারা ও শিশুসহ নিরীহদের ওপর বিমান হামলা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের নতুন অধ্যায়
ইসরায়েলি বিমান বাহিনী গাজার বাস্তুহারা মানুষের আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করা একটি বাড়ি এবং একটি স্কুলকেও টার্গেট করেছে। এ হামলায় অন্তত তিন শিশু নিহত হয়েছেন। বহু পরিবার বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে, কিন্তু তাদের নিরাপত্তার দাবিকে তারা নস্যাৎ করেছে।
পশ্চিম তীরের জেনিনে ১৩ বছর বয়সী কিশোরকে হত্যার চাঞ্চল্য
গাজার পাশাপাশি পশ্চিম তীরেও পরিস্থিতি ভয়াবহ। জেনিন শহরে ইসরায়েলি বাহিনী ১৩ বছর বয়সী এক কিশোরকে গুলিবিদ্ধ করে হত্যা করেছে। এই ঘটনায় ফিলিস্তিনি সমাজে গভীর শোক ও রোষের ঝড় বয়ে গেছে।
গৃহপালিত পশু হত্যায় বেড়েছে দুঃখ-অভাব, একশর বেশি ভেড়া নির্মমভাবে হত্যা
পশ্চিম তীরের গ্রামীণ এলাকায় ইসরায়েলি দখলদাররা ফিলিস্তিনিদের গৃহপালিত পশুর ওপর নৃশংস হামলা চালিয়েছে। খবর পাওয়া গেছে, একশর বেশি ভেড়া হত্যা করা হয়েছে। এটি শুধু প্রাণিকেই ক্ষতি করেনি, ফিলিস্তিনিদের জীবিকাতেও মারাত্মক ক্ষতি করেছে।
খাদ্যের অভাবে এক বছরের শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু
গাজার দেইর আল বালায় খাদ্যের অভাব ও চিকিৎসার ঘাটতির কারণে এক বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। দীর্ঘদিন চলা অবরোধ ও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে পর্যাপ্ত খাদ্য ও চিকিৎসা পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়েছে।
আন্তর্জাতিক সমালোচনা ও মানবাধিকার সংগঠনের উদ্বেগ
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ও দেশগুলো এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘসহ বহু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও নিরীহ বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।
গাজা সংকট: ইতিহাস ও বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়
গাজা উপত্যকা দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু। ২০০৭ সাল থেকে হামাস নিয়ন্ত্রিত এই অঞ্চলে ইসরায়েলি অবরোধ ও নিয়মিত সামরিক অভিযান চলে আসছে, যার ফলে স্থানীয় জনগণের জীবনমান দিন দিন নিম্নমুখী হচ্ছে। বিদ্যমান অবরোধ, ত্রাণ জটিলতা, বিদ্যুৎ ও পানি সংকটের কারণে গাজার মানুষ দারিদ্র্য ও অসহায়তায় ঘেরা।
ভবিষ্যতের জন্য করণীয়
বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে জরুরি আবেদন, যাতে অবিলম্বে গাজায় মানবিক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়, ত্রাণসামগ্রী অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা হয় এবং দুই পক্ষের মধ্যে শান্তি আলোচনার নতুন পথ খোলা হয়। মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করাই একমাত্র সমাধান।



