অর্থনীতি

আইএমএফ থেকে নতুন ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ: চতুর্থ কিস্তিতে সাড়ে ৬৪ কোটি ডলার

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় চতুর্থ কিস্তিতে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার পেতে যাচ্ছে। একই সঙ্গে নতুন করে আরও ৭৫ কোটি ডলার ঋণ পেতে যাচ্ছে দেশটি। আইএমএফ-এর সঙ্গে এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের একটি ঐকমত্যে পৌঁছেছে।

আইএমএফ মিশনের ফলাফল

গত ৩ ডিসেম্বর থেকে আইএমএফ গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফর করে। এই সফরের উদ্দেশ্য ছিল ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং নতুন ঋণের বিষয়ে আলোচনা। মিশন শেষে বুধবার আইএমএফ একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায় যে, উভয় বিষয়ে একটি চূড়ান্ত ঐকমত্য হয়েছে।

আইএমএফ-এর নির্বাহী বোর্ডের আগামী সভায় চতুর্থ কিস্তি এবং নতুন ঋণের বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হবে। এই অনুমোদনের পর চতুর্থ কিস্তির ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ বাংলাদেশে ছাড় করা হবে।

ঋণ কর্মসূচির বর্তমান অগ্রগতি

২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফ-এর সঙ্গে বাংলাদেশের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়। এরই মধ্যে তিনটি কিস্তিতে বাংলাদেশ ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ২০২৬ সালের মধ্যে পুরো অর্থ বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের পাশাপাশি, আইএমএফ-এর সঙ্গে নতুন করে ৭৫ কোটি ডলার ঋণের বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।

আইএমএফ-এর শর্ত ও বাস্তবায়ন

আইএমএফ-এর ঋণ কর্মসূচির শর্ত হিসেবে বাংলাদেশকে বেশ কয়েকটি কাঠামোগত এবং আর্থিক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে রাজস্ব আদায় বাড়ানো, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন।

আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশ এ শর্তগুলো বাস্তবায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। বিশেষত, রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নতুন ভ্যাট নীতিমালা ও কর সংগ্রহের আধুনিকীকরণ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।

নতুন ঋণের গুরুত্ব

নতুন ৭৫ কোটি ডলারের ঋণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই ঋণটি অবকাঠামো উন্নয়ন, রপ্তানি খাতের সম্প্রসারণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ঋণ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

আইএমএফ-এর ঋণ শর্ত বাস্তবায়ন সহজ নয়। এর মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সংস্কারে জনমত তৈরি, দুর্নীতি দমন, এবং সরকারি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং রপ্তানি আয় বাড়ানো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফ-এর এই ঋণ সঠিকভাবে ব্যবহার করা গেলে বাংলাদেশের অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে। তবে ঋণের টাকা অপচয় বা অদক্ষ ব্যবস্থাপনা হলে বিপরীত প্রভাব পড়তে পারে।

আইএমএফ থেকে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ কিস্তি এবং নতুন ৭৫ কোটি ডলার ঋণ বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক সিগন্যাল। এটি দেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে গতিশীল করতে সাহায্য করবে। তবে এই ঋণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং শর্ত পূরণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button