আঞ্চলিক

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ, হামলা ও কারফিউ: ১৪ জন আটক, অর্ধশতাধিক আহত

Advertisement

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জুলাই পদযাত্রা নিয়ে গতকাল ১৬ জুলাই দিনভর চলা হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ ১৪ জনকে আটক করেছে। যদিও এখনো কোনো মামলা দায়ের হয়নি। গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সংঘর্ষের পেছনের ঘটনা ও পরিস্থিতি

জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জ শহরে গতকাল নানা ধরণের সহিংস ঘটনা ঘটে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিক্ষিপ্তভাবে হামলা চালায়। এতে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। পুলিশের সঙ্গে এই হামলাকারীদের সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং কমপক্ষে ৯ জন গুলিবিদ্ধ হয়। এছাড়া প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে কেউ কেউ গুরুতর আহত বলে জানা গেছে।

সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের পর গোপালগঞ্জ শহরে জরুরি ভিত্তিতে কারফিউ জারি করা হয়। আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত কারফিউ বলবৎ থাকবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। শহরে অতীত দিনের মতো শান্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

আটককৃতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে

ওসি মির মো. সাজেদুর রহমান জানিয়েছেন, গতকাল রাত তিনটার দিকে যৌথ বাহিনী ১৪ জনকে আটক করে তাদের সদর থানায় হস্তান্তর করে। “আটককৃতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখনো মামলার প্রস্তুতি চলছে,” তিনি জানান।

শহরের বর্তমান অবস্থা: ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে জীবন

গতকালের ভয়াবহ রাত পেরিয়ে আজ সকাল থেকে গোপালগঞ্জ শহরে তুলনামূলক শান্তি বিরাজ করছে। তবে সকালের দিকে শহর ছিল থমথমে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে সড়ক ও বাজারে লোকজনের উপস্থিতি বেড়েছে। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সড়ক থেকে ইট, বাঁশ ও কাঠের টুকরা সরিয়ে নিতে ব্যস্ত ছিলেন। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাজারের দোকানপাট কিছুটা খোলা হলেও অনেক দোকান এখনও বন্ধ রয়েছে।

গোপালগঞ্জে কারফিউ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা

গোপালগঞ্জ শহরে গতকাল থেকে কারফিউ শুরু হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে টহল দিচ্ছে। জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফেরাতে সকল বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। পুলিশ ও বিজিবি শহরের নিরাপত্তা জোরদার করেছে।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, কারফিউ কার্যক্রম আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত বজায় থাকবে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা ও এর প্রভাব

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে নির্বাচনী এলাকায় পদযাত্রা, মিছিল ও সভার সময় সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে। গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনাটি এই উত্তেজনার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।

এর আগেও দেশের বিভিন্ন জেলায় রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। রাজনৈতিক মতবিরোধ সন্ত্রাসের মাত্রা বৃদ্ধি করলে দেশের শান্তি ও উন্নয়ন ব্যাহত হয়। তাই সবাইকে শান্তিপূর্ণ পথে মত প্রকাশের আহ্বান জানানো হচ্ছে।

গোপালগঞ্জে আগের সহিংসতার ইতিহাস

গোপালগঞ্জ জেলা দীর্ঘদিন ধরেই রাজনৈতিক অস্থিরতার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক বিরোধের কারণে সংঘর্ষ, বিক্ষোভ ও সহিংসতা ঘটেছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সময়ে এই ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে।

গত কয়েক বছরে গোপালগঞ্জে পুলিশের কঠোর পদক্ষেপ ও স্থানীয় নেতৃত্বের মধ্যস্থতায় কিছুটা শান্তি বজায় থাকার চেষ্টা করা হলেও, সাম্প্রতিক ঘটনা প্রমাণ করে শান্তি নিশ্চিত করা এখনও কঠিন।

নাগরিকদের নিরাপত্তা ও প্রশাসনের দায়িত্ব

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান, সাম্প্রতিক সহিংসতা ও সংঘর্ষে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়েছে। শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও কর্মজীবী মানুষ আজকের দিনেও নিরাপদ বোধ করছেন না। বাজারে কেনাকাটা, অফিসে যাতায়াত ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত কার্যকরী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে সকল রাজনৈতিক দলকে সংযম ও দায়িত্বশীল হতে হবে।

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনায় ১৪ জন আটক এবং অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর নতুন করে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। শহরে কারফিউ জারি রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন কাজ করছে।

দেশের শান্তি ও উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক মতবিরোধ নিষ্পত্তি সংলাপ ও আইনের শাসন। গোপালগঞ্জসহ দেশের সকল অঞ্চলে যেন সাধারণ মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেজন্য সকলের সচেতনতা ও সহমর্মিতা জরুরি।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button