আঞ্চলিক

দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাক ও পুলিশের গাড়িতে বাসের ধাক্কায় ২ জন নিহত

Advertisement

রংপুর পীরগঞ্জ: ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের বিশমাইল এলাকায় গত বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই জন নিহত এবং পুলিশ সদস্যসহ সাত জন আহত হয়েছেন। দুর্ঘটনাটি ঘটে তখন, যখন ঢাকা থেকে রংপুরগামী একটি মালবাহী ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, এবং ট্রাকটিকে সরিয়ে নিতে বড়দরগা হাইওয়ে থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল।

আশরাফুল আলম ও আলমগীর হোসেন নামে দুই যাত্রী বাসের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মারা যান। আহত হয়েছেন বড়দরগা হাইওয়ে থানার ডিউটিরত কনস্টেবল মিজানুর রহমান, সার্জেন্ট পলাশ চন্দ্র পালসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য এবং বাসের যাত্রী শাহাদাত। আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মিঠাপুকুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত কনস্টেবল মিজানুর রহমানকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার জাতীয় পঙ্গু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

দুর্ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

বড়দরগা হাইওয়ে থানার ওসি ওমর ফারুক জানান, “রাতে এক ট্রাক রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল, তখন আমাদের টিম সেখানে গিয়ে ট্রাকটি সরানোর চেষ্টা করছিল। এ সময় পেছন থেকে জামালপুর থেকে পঞ্চগড়গামী অরিন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস তীব্র গতিতে ট্রাক ও পুলিশের টহল গাড়িতে ধাক্কা দেয়। এতে বাসের দুই যাত্রী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান এবং পুলিশের গাড়ি সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”

ওসি আরও জানান, “দুর্ঘটনার ফলে আহতদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাস ও ট্রাক পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

নিহতদের পরিচয় ও প্রাথমিক তথ্য

নিহত আলমগীর হোসেন টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বলদি আটা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন এবং অপর নিহত আশরাফুল আলম জামালপুর সদরের হাজীপাড়া-বজ্রাপুর এলাকার একজন স্থানীয়। এই দুর্ঘটনা তাদের পরিবারের জন্য এক দুঃসংবাদ হিসেবে এসেছে।

সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট ও নিরাপত্তা ইস্যু

বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়মিতই ঘটে এবং এতে বহু মানুষ প্রতিদিন প্রাণ হারায় বা আহত হয়। বিশেষ করে, মহাসড়কগুলিতে যানবাহনের নিয়ন্ত্রণহীন গতি, ট্রাফিক আইন অমান্য এবং রাস্তার অবস্থা দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এই দুর্ঘটনাটি আবারও আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোকে আরো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে এই ধরনের দুর্ঘটনা কমানো যায়। সড়ক নিরাপত্তা সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য চালক, যাত্রী ও পথচারীদেরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।

রংপুরে অন্যান্য সড়ক দুর্ঘটনার সাম্প্রতিক খবর

গত বছরও রংপুর অঞ্চলে বিভিন্ন সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ আহত এবং নিহত হয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনার কারণে আহত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে যানবাহনের অতিরিক্ত গতি, নিয়ম ভঙ্গ এবং অপরিকল্পিত যান চলাচল।

নিরাপদ সড়কের জন্য করণীয়

১. ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলা: যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের অবশ্যই ট্রাফিক নিয়ম মানতে হবে। গতি সীমা অতিক্রম করা যাবে না।

২. নিয়মিত যানবাহন পরীক্ষা: যানবাহনগুলোকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও মেরামতের আওতায় রাখা দরকার।

৩. সতর্কতা অবলম্বন: পথচারী, চালক ও যাত্রীদের সড়ক পারাপারের সময় ও যাত্রার সময় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

৪. সরকারি উদ্যোগ: সরকারের পক্ষ থেকে আরও উন্নত সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ, যেমন সড়ক সংস্কার, পুলিশ টহল বাড়ানো, নিরাপদ যান চলাচল নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

৫. জনসচেতনতা: স্কুল, কলেজ, কর্মস্থল ও বিভিন্ন মাধ্যমে সড়ক নিরাপত্তা সম্পর্কে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি।

ট্রাক ও বাসের সংঘর্ষের কারণ ও প্রতিকার

বেশিরভাগ সময় ট্রাক গুলো মহাসড়কের পাশে দাঁড়ালে নিরাপত্তার যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। যথাযথ সিগন্যাল বা হাইজ্যাক লাইট ব্যবহার না করা হলে অন্যান্য যানবাহন চালকদের জন্য বিপদ ডেকে আনে। এ ছাড়া যাত্রীবাহী বাসের চালকরা অনেক সময় অতিরিক্ত গতি বা অবহেলা প্রদর্শন করে থাকে।

এ কারণে, মহাসড়কগুলোতে দাঁড়ানো যানবাহনগুলো অবশ্যই চোখে পড়ার মতো সিগন্যাল দিতে হবে এবং পুলিশকে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন

আহত ব্যক্তিদের দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি। গুরুতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকার মতো বড় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হচ্ছে, যা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। এছাড়াও, আহতদের পুনর্বাসন ও মানসিক চিকিৎসা দেয়া উচিত যাতে তারা দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারেন।

সড়ক দুর্ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকা ও তদন্ত

পুলিশ দুর্ঘটনার তদন্ত দ্রুত ও নিরপেক্ষভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

রংপুরের বিশমাইল এলাকায় ঘটে যাওয়া এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আবারও সড়ক নিরাপত্তার গুরুত্বকে সামনে এনেছে। নিরাপদ যাত্রার জন্য প্রত্যেকের দায়িত্ব থাকা উচিত সচেতন হওয়া ও নিয়ম মেনে চলা। বিশেষ করে পুলিশ, পরিবহন কর্তৃপক্ষ ও চালকদের সতর্কতা ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

আমরা প্রত্যাশা করি, এই দুর্ঘটনা যেন পুনরায় না ঘটে, এজন্য সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থা ও সাধারণ মানুষ একসাথে কাজ করবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button