
এক সময়কার আলোচিত চিকিৎসক ডা. সাবরিনা আরিফ চৌধুরী সম্প্রতি সাবেক ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত হেনস্তার অভিযোগ এনেছেন। বলেছেন, আন-অফিসিয়ালি ফোন করে তলব করা হতো তাকে, যা ছিল নিয়ম বহির্ভূত এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
হারুনের ‘আন-অফিসিয়াল’ ফোন কল
সম্প্রতি একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ডা. সাবরিনা বলেন, “হারুন সাহেব তিনবার আমাকে ফোন করে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলতে বলেছেন। কখনোই কোনো অফিসিয়াল লেটার পাঠানো হয়নি। বলতেন, একটু আসেন, কথা আছে। অথচ আমি তখন মামলার প্রধান আসামিও না, কোনো চেয়ারম্যান বা কর্তৃপক্ষও না। কেন আমাকে ডাকা হচ্ছিল, বুঝতাম না।”
তার ভাষ্য অনুযায়ী, “আমি বাইরে থাকাকালীন তিনি ফোন করতেন, কিন্তু আমার পরিবার আমাকে বারবার সাবধান করত। তারা বলত, অফিশিয়ালি ডাকলে যেও, অন্যভাবে না। ফলে, প্রথম দিকে আমি তার ডাকে সাড়া দিইনি।”
পরিকল্পিত নাটকীয় গ্রেপ্তার?
ডা. সাবরিনা দাবি করেন, “একদিন আমাকে ডিবি অফিসে ডাকেন হারুন। সাংবাদিকরা আগেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্ন করা হয়—আমি কোন মেডিক্যালে পড়েছি, কততম বিসিএস। এরপরই নাটকীয়ভাবে আমাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। অথচ কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।”
তিনি বলেন, “সেখানে সাংবাদিকদের আগে থেকেই ডেকে রাখা হয়েছিল। এতে বোঝা যায় পুরো ঘটনাটি সাজানো ছিল। আর এটাই ছিল তার পরিকল্পনার অংশ।”
মামলার পেছনে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’
সাবরিনা দাবি করেন, “তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করতেই আমাকে টার্গেট করা হয়েছিল। ভুয়া করোনা সনদ মামলায় আমি মূল আসামি না হয়েও আমাকে জড়িয়ে দেওয়া হয়। সরকারের কিছু ব্যর্থতা ঢাকতেই এই নাটক তৈরি করা হয়।”
তিনি আরও বলেন, “৪৩ জন সাক্ষীর একজনও বলেনি, আমি তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছি বা কিছুতে সই করেছি। সবাই বলেছে তারা মিডিয়াতে আমাকে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখেছে। এই মিডিয়াই ছিল তাদের প্রধান ‘প্রমাণ’, আর সেই মিডিয়া প্রভাবিত হচ্ছিল হারুনের হাত ধরে।”
কারাগারে কাটানো তিন বছর
২০২০ সালের ২৩ জুন গ্রেপ্তার হন ডা. সাবরিনা। এরপর দীর্ঘ তিন বছর কারাবাসের পর ২০২৩ সালের ৫ জুন জামিনে মুক্তি পান। ওই সময়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “জেল থেকে বের হওয়ার পরও ডিবি হারুন আমার ওপর নজরদারি চালিয়ে গেছেন। এমনকি আমার একটি বই ‘সমকামিতা’ সংক্রান্ত বলে বাজেয়াপ্ত করতে চেয়েছিলেন, যদিও সেটার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।”
‘হারুন ছিলেন ক্ষমতার প্রতীক’
সাবরিনার বক্তব্য অনুযায়ী, “হারুন যখন ক্ষমতায় ছিলেন, কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলত না। সাংবাদিকরাও ভয়ে থাকত। এখন সে পদে নেই, তাই সাহস করে বলছি।”
তিনি বলেন, “এক সাংবাদিক একবার তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কেন আপনাকে নিয়ে এত গসিপ? তিনি জবাবে বলেছিলেন, বড় অপরাধীদের ধরার জন্য অনেকে তাকে অপছন্দ করে। সে সময় আমার নাম বলেননি ঠিকই, কিন্তু ইঙ্গিতটা আমার দিকেই ছিল, আমি নিশ্চিত।”
‘এটি ছিল ব্যক্তিগত প্রতিহিংসা’
ডা. সাবরিনা মনে করেন, “পুরো গ্রেপ্তার, মামলা, মিডিয়া ট্রায়াল — সবকিছুই ছিল পরিকল্পিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। হারুন শুধু একজন কর্মকর্তা ছিলেন না, তিনি ছিলেন নিজস্ব অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রধান চরিত্র।”
“হারুন সাহেব আমাকে তিনবার আন-অফিশিয়ালি ফোন করেছিলেন। উনি বলতেন, একটু আসেন কথা আছে। কিন্তু কেন ডাকছেন, সেটা বলতেন না।” — ডা. সাবরিনা
সারসংক্ষেপ
এক সময়কার বিতর্কিত চিকিৎসক এবং জেকেজি হেলথকেয়ার কেলেঙ্কারির অন্যতম আলোচিত মুখ ডা. সাবরিনা এবার সরাসরি মুখ খুললেন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে। এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেন, তাকে কখনোই অফিসিয়াল চিঠি দিয়ে তলব করা হয়নি, বরং ডিবি হারুন তাকে ব্যক্তিগতভাবে ফোন করে ডাকতেন — যা ছিল সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত।
সাবরিনা বর্তমানে মুক্ত জীবন যাপন করছেন, আবারও জনসেবামূলক কার্যক্রমে জড়িত হচ্ছেন। কিন্তু তার অতীতের অভিজ্ঞতা তার ওপর গভীর ছাপ রেখে গেছে। সাবেক ডিবিপ্রধান হারুনের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তাহলে তা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন তোলে না, বরং এটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি উৎকট দৃষ্টান্ত হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায় — এই অভিযোগের ভিত্তিতে কি কোনো তদন্ত হবে? নাকি এটি আবারও সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাবে অন্য অনেক ঘটনার মতো?
এম আর এম – ০৩৫৯, Signalbd.com