অর্থনীতি

কাপ্তাইয়ে বেড়েছে পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন, ২১৮ মেগাওয়াট ছাড়ালো

Advertisement

বাংলাদেশের পাহাড়ি জেলা রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনে লক্ষ্যণীয় বৃদ্ধি দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন ধরে অবিরাম বৃষ্টি এবং পাহাড়ি ঢল কাপ্তাই হ্রদে পানি সংযোজনের ফলে গত সোমবার (১৪ জুলাই) রাত ৮টা পর্যন্ত এই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে।

পানি বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইতিবাচক প্রভাব

কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান জানান, ১, ২, ও ৩ নম্বর ইউনিট থেকে প্রতিটি থেকে ৪৬ মেগাওয়াট করে মোট ১৩৮ মেগাওয়াট এবং ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিট থেকে প্রতিটি থেকে ৪০ মেগাওয়াট করে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এর ফলে কেন্দ্রটির মোট উৎপাদন ক্ষমতার প্রায় পূর্ণমাত্রা কার্যকর হয়েছে।

তিনি আরও জানান, এর আগে গত ৯ জুলাই (বুধবার) রাত ৮টার দিকে ৫টি ইউনিট একসঙ্গে চালু করে মোট ২১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। এরপর থেকে ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতে কাপ্তাই লেকের পানি অনেকটাই বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

কাপ্তাই হ্রদের পানি পর্যবেক্ষণ ও প্রভাব

কাপ্তাই লেকের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ১০৮ ফুট মিনাস সি লেভেল। তবে গতকাল রাত ৮টার সময় লেকের পানি ছিল ৯৮.৬৭ ফুট মিনাস সি লেভেলে, যা রুলকার্ভের তুলনায় যথেষ্ট বেশি, কারণ নির্ধারিত লেভেল ছিল মাত্র ৮৬.০৮ ফুট। এর ফলে পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পানি সরবরাহ ভালো থাকার কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রবল সুবিধা হয়েছে।

বিদ্যুৎ উৎপাদন ও জাতীয় গ্রিডে সংযোগ

এই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৩০ মেগাওয়াট। যদিও ৫টি ইউনিট একযোগে চালু করার অভিজ্ঞতা আগের দিন পর্যন্ত হয়নি, তবে চলতি বছরের ২ জুন থেকে চারটি ইউনিট সচল ছিল। এবার প্রথমবার ৫টি ইউনিট একসঙ্গে চালু হয়ে গত সপ্তাহ থেকে উৎপাদন কার্যক্রম নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে।

উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে সংযোগ করা হচ্ছে, যা দেশের বিদ্যুৎ জোগান এবং সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করেছে। কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকৌশলীরা জানান, নিয়মিত বৃষ্টিপাত বজায় থাকলে উৎপাদন এইমাত্রায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র: বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় বিশেষ অবদান

কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের অন্যতম প্রধান বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ১৯৬২ সালে এটি চালু হয় এবং এর মূল কাজ হচ্ছে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই হ্রদের পানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন। দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

বছরে গড়ে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এই কেন্দ্র। এখান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ চট্টগ্রাম, ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। বৃষ্টিপাত এবং পর্যাপ্ত পানির সঞ্চয়ে এই কেন্দ্র দেশের বিদ্যুৎ সঙ্কট মোকাবেলায় বড় ভূমিকা পালন করে।

টানা বৃষ্টিপাতের কারণ ও প্রভাব

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলসহ সারাদেশে অবিরাম ভারী বৃষ্টি হয়েছে। যা কাপ্তাই হ্রদে পানি বৃদ্ধির প্রধান কারণ। দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে।

এই বৃষ্টিপাত শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর কারণই নয়, বরং কৃষি, জলবায়ু ও পরিবেশেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধস, বন্যা ঝুঁকি যেমন থাকে, তেমনই পানি সরবরাহ বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সহায়তা করে।

কাপ্তাই কেন্দ্রের আধুনিকীকরণ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সরকার এবং বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ কাপ্তাই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আধুনিকীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। নতুন টার্বাইন ও জেনারেটর যুক্ত করে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। পাশাপাশি পানি ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন করে কেন্দ্রটির স্থায়িত্ব বাড়ানো হচ্ছে।

বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কথায়, ভবিষ্যতে এই কেন্দ্র থেকে আরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। যা দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সমন্বিত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও দেশের উন্নয়ন

বাংলাদেশ বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আত্মনির্ভরতার পথে রয়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানির পাশাপাশি পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম উৎস। কাপ্তাই কেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধিতে দেশের বিদ্যুৎ সেক্টরে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বিদ্যুৎ সাশ্রয় ও উৎপাদনে উন্নতি দেশের শিল্পায়ন, গ্রামীণ বিদ্যুৎ সম্প্রসারণ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এই কারণে কাপ্তাই পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্তমান অবস্থান ও সাম্প্রতিক উন্নয়নগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button