
রাজধানীর পল্লবীতে এক নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে চাঁদা না দেওয়ায় হামলা ও গুলির ঘটনা ঘটেছে। ৩০-৪০ জন সশস্ত্র ব্যক্তি একযোগে হামলা চালিয়ে একজন কর্মকর্তাকে গুলিবিদ্ধ করে। ঘটনার পেছনে রয়েছে পুরোনো চাঁদাবাজির অভিযোগ। পুলিশ বলছে, তদন্ত চলছে, মামলা প্রক্রিয়াধীন।
ঘটনাস্থলের বিবরণ: পল্লবীতে নির্মাণ অফিসে সশস্ত্র হামলা
শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে রাজধানীর পল্লবীর আলব্দিরটেক এলাকায় অবস্থিত ‘এ কে বিল্ডার্স’ নামে একটি আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ৩০-৪০ জন অস্ত্রধারী ব্যক্তি একযোগে হামলা চালিয়ে অফিসে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় এবং চারটি গুলি করে। গুলিতে গুরতর আহত হন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম, যাকে দ্রুত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
চাঁদাবাজির অভিযোগ: ৫ কোটি টাকার দাবিতে আগেও হামলা
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মো. কাইউম আলী খানের ছেলে আমিমুল এহসান জানান, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে জামিল নামের এক ব্যক্তি তাঁর বাবার কাছে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন।
তিনি বলেন, “চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ২৭ জুন এবং ৪ জুলাই দু’দফায় আমাদের অফিসে হামলা চালানো হয়। সিসিটিভি ক্যামেরা ও অফিসের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসপত্র নিয়ে যায় তারা। সর্বশেষ শুক্রবার বিকেলে আবারও সশস্ত্র হামলা চালায়। এ বার তারা গুলি করে একজনকে আহত করেছে।”
পুলিশি অবস্থান: মামলা প্রক্রিয়াধীন, তদন্ত চলছে
পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিউল ইসলাম বলেন, “ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত এবং বড় ধরনের চাঁদাবাজির অংশ। মামলা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।”
পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) সালেহ মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, “আহত শরিফুল ইসলাম এখনো হাসপাতালে ভর্তি। তার কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর মামলা হবে। যারা জড়িত, তাদের শনাক্তে কাজ চলছে।”
অতীত ঘটনা ও সাধারণ ডায়েরি (জিডি): আগে থেকেই হুমকির শিকার
জানা গেছে, এ কে বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষ ১১ জুলাই (বৃহস্পতিবার) পল্লবী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
জিডিতে চেয়ারম্যান কাইউম আলী খান উল্লেখ করেন, “২৭ জুন প্রথমবার হামলা করা হয়, এরপর ৪ জুলাই ফের হামলা চালায় অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা। তারা আমাদের জীবননাশের হুমকিও দেয়।”
তিনি বলেন, “আমরা পুলিশের কাছে বারবার নিরাপত্তা চেয়েছি। কিন্তু তার আগেই আবারও হামলার শিকার হলাম।”
পুরান ঢাকার ভাঙারি ব্যবসায়ীর হত্যা ও সংশ্লিষ্টতা
এই ঘটনার ঠিক দুই দিন আগে পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রকাশ্যে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
পরিবারের দাবি, নিহত লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ মাসে ২ লাখ টাকা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় তাকে হত্যা করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় একইভাবে চাঁদাবাজ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠছে, যা অজানা নয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে।
বাড়ছে সন্ত্রাস, কমছে নিরাপত্তা?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীর ব্যস্ত এলাকায় দিনের আলোয় এমন সন্ত্রাসী হামলা আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম. আর. হাসান বলেন, “এই ধরনের ঘটনা জনগণের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করে। এটি শুধু একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং ব্যবসায়িক পরিবেশ ও বিনিয়োগের জন্যও হুমকি।”
হামলার বিচার ও প্রতিরোধ কবে?
বারবার চাঁদা দাবি এবং এর পরিণতিতে ভয়াবহ হামলার ঘটনা সাধারণ মানুষের জন্য উদ্বেগজনক।
তদন্ত কতদূর এগোয় এবং অপরাধীদের কত দ্রুত আইনের আওতায় আনা হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
“তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে দ্রুত বিচার ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করাই সবচেয়ে জরুরি।”
এম আর এম – ০৩০০, Signalbd.com