বিনোদন

হঠাৎ যুক্তরাষ্ট্রে লস অ্যাঞ্জেলে উড়াল দিলেন একঝাঁক তারকা

Advertisement

প্রতিবছর জুলাই মাস আসে সঙ্গে নিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এক বিশেষ আনন্দের বার্তা। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিত এলাকায় অনুষ্ঠিত হয় বিশাল বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক উৎসব — ‘আনন্দমেলা’। এই উৎসব প্রবাসী সমাজের সংস্কৃতি, ঐক্য ও মাতৃভূমি প্রেমের এক অনন্য প্রকাশভঙ্গি।

২০২৫ সালের এই আনন্দমেলা অনুষ্ঠিত হবে ১৯ ও ২০ জুলাই, যেখানে দেশ-বিদেশের বহু তারকা অংশ নেবেন এবং তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা দিয়ে প্রবাসীদের মন জয় করবেন। এবারের আনন্দমেলা বেশ কিছু নতুন ও জনপ্রিয় তারকাকে নিয়ে আরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

‘আনন্দমেলা’: প্রবাসী বাংলাদেশিদের মিলনমেলা

যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাসরত বাংলাদেশিরা তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ও উৎসবকে জীবন্ত রাখতে ‘আনন্দমেলা’ আয়োজন করে আসছেন বহু বছর ধরে। এই আয়োজন শুধু একটি সাংস্কৃতিক মেলা নয়, এটি প্রবাসীদের কাছে তাদের শিকড়ের সঙ্গে আবদ্ধ থাকার এক গভীর অনুভূতি।

মেলার প্রধান আয়োজক মুহাম্মদ আলী জানান, “আমাদের মেলার উদ্দেশ্য প্রবাসী সমাজের মাঝে আনন্দ ও মিলনের পরিবেশ তৈরি করা। এটি একটি নন-প্রফিট উদ্যোগ, যেখানে আমরা সবাই মিলেমিশে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করি।”

এক ঝাঁক তারকা নিয়ে সাজছে ‘আনন্দমেলা’

এই বছর ‘আনন্দমেলা’তে অংশ নিচ্ছেন অনেক জনপ্রিয় ও পরিচিত মুখ। লস অ্যাঞ্জেলেসের মঞ্চ মাতাবেন গায়ক প্রীতম হাসান, যিনি এবারই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র থেকে এই মেলায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। এছাড়াও থাকছেন প্রতীক হাসান, কিশোর দাস, আর্নিক, আবু নাঈম।

অভিনেত্রী পারসা ইভানা, মৌসুমী মৌ, নীল হুরে জাহান, এবং চিত্রনায়ক জায়েদ খানও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি নৃত্যশিল্পী আলিফ ও গায়িকা ইচ্ছার পারফরম্যান্সও উৎসবের রঙ তুলবে।

প্রীতম হাসানের উৎসবের বাণী

প্রীতম হাসান বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন কনসার্ট ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছি। এবার ‘আনন্দমেলা’তে পারফর্ম করার জন্য খুবই উচ্ছ্বসিত। প্রবাসীরা বছরের পর বছর ধরে এই আয়োজন করে আসছেন, তাদের সঙ্গে একযোগে গাওয়া আমার জন্য গৌরবের।”

তারকাদের এই আগমন শুধু মেলার জমকালো পরিবেশ তৈরি করবে না, এটি প্রবাসীদের হৃদয়ে তাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা আরও গভীর করবে।

‘আনন্দমেলা’র ঐতিহ্য ও গুরুত্ব

‘আনন্দমেলা’ মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য এক বিশেষ মিলনমেলা, যেখানে তারা তাঁদের সংস্কৃতি, ভাষা, গান, নৃত্য ও ঐতিহ্যের এক অনন্য সংমিশ্রণ উপভোগ করেন।

এর আগেও এই মেলায় অংশগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিল্পীরা যেমন মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরী, আরিফিন শুভ, পূর্ণিমা, অপু বিশ্বাস, তাহসান ও এস আই টুটুল। তারা মঞ্চে এসে প্রবাসীদের আনন্দে ভাসিয়ে দিয়েছেন তাদের জনপ্রিয় গান ও অভিনয় দিয়ে।

প্রবাসীদের জন্য ‘আনন্দমেলা’ মানে অনেক কিছু

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিরা দূরে থেকেও মাতৃভূমির সঙ্গে সেতুবন্ধন রাখতে ‘আনন্দমেলা’কে অত্যন্ত গুরুত্ব দেন। এটি তাদের কাছে শুধু সাংস্কৃতিক আয়োজন নয়, এটি আত্মপরিচয় ও জাতীয় ঐক্যের উৎস।

এই আয়োজনের মাধ্যমে প্রবাসীরা নিজেদের সন্তানদেরও জানাতে পারেন বাঙালি সংস্কৃতির মহিমা, যার মধ্যে রয়েছে বাংলার ভাষা, গান, নাচ ও সাহিত্যের অনন্য ছোঁয়া।

লস অ্যাঞ্জেলেস: ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিত

লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের একটি নির্দিষ্ট এলাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘লিটল বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে বাংলাদেশি রেস্তোরাঁ, দোকানপাট, কমিউনিটি সেন্টার যা প্রবাসীদের মাতৃভূমির ঘ্রাণ এনে দেয়।

‘আনন্দমেলা’ এই ‘লিটল বাংলাদেশ’কে দুই দিন ধরে এক ভিন্ন মাত্রায় রাঙিয়ে তোলে। এখানে পাওয়া যায় দেশীয় খাবার থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী পোশাক, বই, হস্তশিল্পের নানা রঙ।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ‘আনন্দমেলা’র গুরুত্ব

গত কয়েক দশকে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা নিজ নিজ দেশের সংস্কৃতির সঙ্গে তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য একত্রিত হওয়ার অনন্য উদ্যোগ নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ‘আনন্দমেলা’ এরকম একটি অনন্য প্ল্যাটফর্ম যেখানে সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়, নতুন প্রজন্ম তাদের শিকড়কে চিনতে পারে।

এ ধরনের উৎসব সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংহতি বৃদ্ধি করে এবং প্রবাসী সমাজকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।

প্রস্তুতি ও আয়োজনের বিশদ

এই বছরের ‘আনন্দমেলা’র প্রস্তুতি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টার ও ভলেন্টিয়াররা মেলায় অংশগ্রহণকারী শিল্পী ও দর্শকদের জন্য পূর্ণ আয়োজন করেছেন।

বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে শিশুদের জন্য খেলাধুলা ও শিক্ষামূলক কর্মশালা, যাতে পুরো পরিবার উৎসবটি উপভোগ করতে পারে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রত্যাশা

‘আনন্দমেলা’ আয়োজকরা জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে এই আয়োজনকে আরও বড় মাপে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক তারকাদের আমন্ত্রণ ও বাংলাদেশি শিল্পীদের আন্তর্জাতিক পরিচিতি বৃদ্ধির মাধ্যমে মেলাটি আরও বিস্তৃত হবে।

মেলার মাধ্যমে প্রবাসীরা শুধু আনন্দই পায় না, বরং বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘আনন্দমেলা’ কেবল একটি উৎসব নয়, এটি তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতীক। এই উৎসব তাঁদের মাতৃভূমির সঙ্গে আবেগময় বন্ধনকে মজবুত করে, নতুন প্রজন্মকে শেখায় দেশের গর্ব ও সংস্কৃতি।

১৯ ও ২০ জুলাই লস অ্যাঞ্জেলেসের ‘লিটল বাংলাদেশ’ এলাকা মাতাবে একঝাঁক তারকার গান আর নাচের কোলাহল, যা সারা বছর প্রবাসীদের মনকে উজ্জীবিত করবে।

এই আনন্দমেলায় অংশ নিতে আগ্রহী সকলেই প্রস্তুত থাকুন, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তই ভরা থাকবে এক মহাসঙ্গীত ও সংস্কৃতির মিলনে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button