জাতীয়

ধরন পাল্টে গেছে ডেঙ্গুর, দ্রুত জটিল হচ্ছে রোগীর অবস্থা: স্বাস্থ্য মহাপরিচালক

Advertisement


স্বাস্থ্য মহাপরিচালক জানালেন, এবারের ডেঙ্গু আগের চেয়ে ভিন্ন ও বেশি জটিল। অনেক রোগীর অবস্থা হঠাৎ করেই সংকটাপন্ন হয়ে পড়ছে। দ্রুত রোগ নির্ণয়ে বাড়ছে বিশেষ চিকিৎসা যন্ত্রের প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সচেতন না হলে ভয়াবহ পরিস্থিতি হতে পারে।

ডেঙ্গুর ধরনে পরিবর্তন: কী বললেন স্বাস্থ্য মহাপরিচালক

বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সভায় স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, “আগের মতো সাধারণ উপসর্গ নয়, এবার ডেঙ্গু রোগীরা হঠাৎ করেই শকে চলে যাচ্ছেন, রক্তপাত শুরু হচ্ছে, এমনকি অর্গান ফেলিওরের মতো জটিলতা দেখা দিচ্ছে।”

তিনি জানান, “ডেঙ্গু এখন আর আগের মতো সহজে সামাল দেওয়ার মতো নয়। তাই নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও দ্রুত রোগ নির্ণয় অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা ও নতুন চিকিৎসা সামগ্রী

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই সভায় উপস্থিত ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। সভায় ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় সহায়ক বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে—

  • ৮টি পোর্টেবল আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন
  • ২১টি বেডসাইড হেমাটোক্রিট মেশিন
  • ১,৬০০ পিস অন্যান্য ডেঙ্গু চিকিৎসা সামগ্রী

মহাপরিচালক বলেন, “এই যন্ত্রপাতি থাকলে রোগ নির্ণয় অনেক দ্রুত হয়, চিকিৎসকেরা ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, ফলে রোগীর জীবন বাঁচানো সহজ হয়।”

বরগুনা থেকে ঢাকায়: সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু

সাম্প্রতিক সময়ে বরগুনা জেলায় একটি ডেঙ্গু আউটব্রেক দেখা যায়, যা এখন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সারাদেশেই সংক্রমণ বাড়ছে। রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, “আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে, কিন্তু জনগণের সচেতনতা না থাকলে কৌশল কাজে আসবে না।”

পরিসংখ্যান যা বলছে

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৩,০০০ জন। এ সময়ের মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন ৫৬ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষার পর জমে থাকা পানি এবং আবহাওয়ার উচ্চ তাপমাত্রা মশার বংশবৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করছে, যা সংক্রমণকে আরও ভয়াবহ করে তুলছে।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

বিশেষজ্ঞদের মতে, এবার ডেঙ্গু অনেক সময় জ্বর ছাড়াও শুরু হতে পারে। মাথাব্যথা, তীব্র দুর্বলতা, পেটে ব্যথা, হেমারেজ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে।

একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক বলেন,
“ডেঙ্গু যদি একবার জটিল অবস্থায় পৌঁছে যায়, তাহলে সময় মতো চিকিৎসা না পেলে রোগীর প্রাণহানির ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।”

জনসচেতনতাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ

মশা জন্মানোর উৎস ধ্বংস করাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। বাড়ির আশপাশে জমে থাকা পানি পরিষ্কার রাখা, ফুলদানি, পুরনো টায়ার, এসির ট্রে ইত্যাদি নিয়মিত পরিষ্কার করা আবশ্যক।

স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন,
“সকলকে অনুরোধ করছি—জ্বর হলে ঘরে বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। শুরুতেই চিকিৎসা পেলে জটিলতা এড়ানো যায়।”

পরিস্থিতি কোথায় দাঁড়িয়ে?

সরকারি প্রস্তুতির পাশাপাশি প্রয়োজন জনগণের আন্তরিক অংশগ্রহণ। চিকিৎসা অবকাঠামো থাকলেও যদি সচেতনতা না বাড়ে, তবে পরিস্থিতি যে কোনো সময় ভয়াবহ মোড় নিতে পারে।

তাই প্রশ্ন হচ্ছে—জনসচেতনতা ও ব্যক্তিগত সতর্কতা কি সময় মতো বাড়ানো সম্ভব হবে?
সময়ই দিবে সে উত্তর।

ঘটনাটির সংক্ষিপ্ত সারাংশ 

চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে। তবে শুধু সংখ্যা নয়, এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ভিন্নধর্মী ও জটিল উপসর্গ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর জানিয়েছেন, রোগের ধরন বদলে যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা হঠাৎ করেই গুরুতর হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে নিবিড় পরিচর্যার চাহিদা ও চিকিৎসা চ্যালেঞ্জ।

এম আর এম – ০২৫১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button