বিশ্ব

টেক্সাসে বন্যায় নিহত ১১০, নিখোঁজ ১৭০ জন

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে আকস্মিক বন্যায় ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে নদীর তীরে ছুটি কাটাতে যাওয়া মানুষজনের অনেকে নিখোঁজ। নিহত হয়েছেন অন্তত ১১১ জন। দিনরাত চলছে উদ্ধার অভিযান, জীবিত উদ্ধারের আশাও ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।

বন্যার করুণ চিত্র

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে ভয়াবহ আকস্মিক বন্যায় নিখোঁজ হয়েছেন অন্তত ১৭০ জন। নিহতের সংখ্যা ইতোমধ্যে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১১ জনে। নদীর তীরে অবস্থিত ক্যাম্প মিস্টিক নামের একটি সামার ক্যাম্প থেকে অনেক শিশুকন্যা এবং নারী নিখোঁজ রয়েছেন। গুয়াদালুপে নদীর পানির উচ্চতা ২৯ ফুট বেড়ে যাওয়ায় ক্যাম্পের আশেপাশের এলাকা সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়েছে।

উদ্ধারকাজে সর্বাত্মক চেষ্টা

স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থা একযোগে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। উদ্ধার অভিযানে যুক্ত হয়েছে টেক্সাস ন্যাশনাল গার্ডের হেলিকপ্টার, ড্রোন, প্রশিক্ষিত ডুবুরি দল ও স্বেচ্ছাসেবীরা। শুধু কের কাউন্টিতেই মোতায়েন করা হয়েছে ২৫০ জনের বেশি উদ্ধারকর্মী।

টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, “একজন নিখোঁজ ব্যক্তিকেও খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের উদ্ধার তৎপরতা চলবে।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেছেন, নিখোঁজের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে এবং জনগণকে নিখোঁজদের বিষয়ে দ্রুত রিপোর্ট করতে আহ্বান জানিয়েছেন।

নিখোঁজদের মধ্যে কারা আছেন?

জানা গেছে, নিখোঁজদের মধ্যে রয়েছেন ক্যাম্প মিস্টিকের ৫ জন ক্যাম্পার এবং একজন নারী কাউন্সেলর। মেয়েদের জন্য এই গ্রীষ্মকালীন ক্যাম্পটি ছুটির দিনে পরিচালিত হতো। নিখোঁজদের একটি বড় অংশ শিশু ও নারী, যাঁরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে অংশ নিতে গিয়েছিলেন।

কের কাউন্টির শেরিফ ল্যারি লেইথা জানিয়েছেন, শুধু ওই কাউন্টিতেই ৮৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩০ জন শিশু এবং ৫৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক। এখনো উদ্ধার কাজ অব্যাহত রয়েছে।

বৃষ্টিপাত ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পূর্বাভাস

জাতীয় আবহাওয়া পরিষেবা জানিয়েছে, টেক্সাসের হিল কান্ট্রিতে ৫ থেকে ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা এই আকস্মিক বন্যার মূল কারণ। যদিও বন্যার পূর্বাভাস ছিল, কিন্তু এত দ্রুত এবং তীব্র জলোচ্ছ্বাস প্রশাসন ও সাধারণ মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বন্যা ১৯২১ সালের ভয়াবহ বন্যার পর টেক্সাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী মিষ্টি পানির বিপর্যয়।

প্রশ্ন উঠছে প্রস্তুতি ও সতর্কতা নিয়ে

এই দুর্ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসনের জরুরি প্রস্তুতি ব্যবস্থা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, বন্যার মাত্র দুই দিন আগে রাজ্য পর্যবেক্ষক দল ক্যাম্প মিস্টিক পরিদর্শন করে জানায়, ক্যাম্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পরিকল্পনা ও অবকাঠামো প্রস্তুত আছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা সেটিকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, তারা অনেকেই বন্যার বিষয়ে ফোনে কোনো সতর্কতা পাননি, কেউ কেউ দেরিতে বার্তা পেয়েছেন। কেউ গাছে উঠে প্রাণ বাঁচিয়েছেন, কেউ নদীর পানিতে ভেসে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও সহায়তা

এই মানবিক বিপর্যয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প টেক্সাসকে ‘মেজর ডিজাস্টার এরিয়া’ হিসেবে ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে একজন মেক্সিকান নাগরিকও রয়েছেন। তিনি সহানুভূতি প্রকাশের পাশাপাশি দ্রুত সাহায্য ও তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।

এছাড়া, হাউজিং অ্যান্ড আরবান ডেভেলপমেন্ট বিভাগ কের কাউন্টির এফএইচএ-সমর্থিত বাড়িগুলোর জন্য ৯০ দিনের ফোরক্লোজার স্থগিত করেছে।

বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিভঙ্গি

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, দুর্বল অবকাঠামো এবং জরুরি সতর্কবার্তার ঘাটতি এই ধরনের বিপর্যয়কে আরও ভয়াবহ করে তুলছে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এই ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলায় আরও উন্নত প্রযুক্তি ও স্থানীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা দরকার।

একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, “যদি আগে থেকেই কার্যকর সতর্কবার্তা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো, তাহলে প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কম হতো।”

সারসংক্ষেপ  

টেক্সাসে ঘটে যাওয়া এই করুণ বিপর্যয় শুধু একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি একটি বড় মানবিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে। নিখোঁজদের খোঁজে এখনো চলছে মরিয়া উদ্ধার অভিযান, কিন্তু সময় যত গড়াচ্ছে, জীবিত উদ্ধারের সম্ভাবনা ততই কমে আসছে। প্রশ্ন রয়ে যাচ্ছে—এই বিপর্যয় কি এড়ানো যেত না?

এম আর এম – ০২৪৫, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button