সেতু ভেঙে নদীতে পড়ল যানবাহন, ১০ জন নিহত

ভারতের গুজরাট রাজ্যের ভদোদরা এলাকায় মহিসাগর নদীর ওপর নির্মিত পুরনো একটি সেতু ভোরের দিকে ধসে পড়ে। এতে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং কমপক্ষে ৯ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার সময় নদীতে বেশ কিছু যানবাহন পড়ে যায়, যার মধ্যে ছিল ট্রাক, ইকো ভ্যান, পিকআপ ভ্যান এবং অটোরিকশা। দুর্ঘটনাস্থলে তৎপর উদ্ধারকর্মীরা আহতদের উদ্ধারে কাজ করে যাচ্ছেন।
দুর্ঘটনার বিবরণ ও সেতুর গুরুত্ব
সেতুটি ভদোদরার পাদ্রার মুজপুরকে আনন্দ জেলার গম্ভীরার সঙ্গে এবং মধ্য গুজরাটকে সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করতো। এই সেতুটি প্রায় ৪৩ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল এবং গত বছর মেরামত করা হয়েছিল।
স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে জানা গেছে, সেতুটি ভেঙে পড়ার সময় দুটি মোটরসাইকেল সেতুতে ছিল, তবে তাদের অবস্থান এখনও নিশ্চিত হয়নি। সেতু ধসের ঘটনায় নদীর একাংশে একটি ট্যাংকার ঝুলন্ত অবস্থায় পড়েছিল এবং নদীতে একটি ভ্যান উল্টে গিয়েছিল। উদ্ধার অভিযান চলাকালীন একটি মহিলা ভ্যানে আটকা পড়ে ছেলের জন্য সাহায্য চেয়ে কাঁদছিলেন, যা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
উদ্ধার অভিযান ও আহতদের অবস্থা
ভদোদরার জেলা কালেক্টর অনিল ধামেলিয়া জানান, এখন পর্যন্ত পাঁচজন আহতকে উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে চারজনের আঘাত গুরুতর নয়। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এনডিআরএফ ও ফায়ার সার্ভিস দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। এনডিআরএফের ভদোদরা ৬ ব্যাটালিয়ন একটি বিশেষ ডুবুরি দল নিয়োজিত করেছে।
অবস্থানটি খুব গভীর নয়, তাই উদ্ধার কাজের সম্ভাবনা ভালো বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসন ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ তদন্ত শুরু করেছে।
প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
আনন্দ জেলার কালেক্টর প্রবীণ চৌধুরী জানান, উদ্ধারকাজ ভদোদরা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে হচ্ছে। তারা আনন্দ জেলা থেকে তিনটি ফায়ার সার্ভিস দল পাঠিয়েছে এবং প্রয়োজন হলে আরও সহায়তা পাঠানো হবে।
অঙ্কলাভ আসনের কংগ্রেস এমএলএ অমিত চাবদা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ঘটনার ছবি ও ভিডিও শেয়ার করে লিখেছেন, “একাধিক যানবাহন নদীতে পড়ে গেছে। বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের দ্রুত উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং ট্রাফিক অন্য পথে ঘুরিয়ে দিতে হবে।”
সেতু ধসের পেছনের কারণ ও ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
৪৩ বছরের পুরনো সেতুটি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হলেও এটি গত বছরই মেরামত করা হয়েছিল। তবে সেতুর এই আকস্মিক ধসের প্রকৃত কারণ তদন্তের পর স্পষ্ট হবে। সড়ক ও সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীরা ইতোমধ্যেই ঘটনাস্থলে গেছেন এবং তদন্ত শুরু করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরনো সেতু ও অবকাঠামো ব্যবস্থার নিয়মিত ও কার্যকর রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তি ও শক্তিশালী নির্মাণ পদ্ধতির মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন দূর্ঘটনা রোধে উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
বাংলাদেশের জন্য সতর্কবার্তা
পাড়ি দেওয়া বাংলাদেশসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য গুজরাটের এই সেতু ধসের ঘটনা একটি সতর্কবার্তা। নদী ও সেতুর অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। বিশেষ করে বাংলাদেশে যেখানে নদীসঙ্গত যোগাযোগের গুরুত্ব অনেক বেশি, সেখানে সময়োপযোগী মেরামত, পর্যাপ্ত তত্ত্বাবধান ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য।
সামগ্রিক পর্যালোচনা
- স্থান: ভদোদরা, গুজরাট, ভারত
- ঘটনা: ৪৩ বছর পুরনো মহিসাগর নদীর সেতু ধসে পড়া
- তারিখ ও সময়: ৯ জুলাই ২০২৫, ভোর
- মৃতের সংখ্যা: ১০+ (সংশয় রয়েছে আরও বাড়তে পারে)
- আহত: ৯+
- যানবাহন: ২টি ট্রাক, ১টি ইকো ভ্যান, ১টি পিকআপ ভ্যান, ১টি অটোরিকশা, ২টি মোটরসাইকেল (অবস্থান অনিশ্চিত)
- প্রতিক্রিয়া: উদ্ধারকাজ চলছে, তদন্ত শুরু, স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা
- ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: সেতুর ব্যাপক তদন্ত, নতুন নকশা ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ
গুজরাটের ভদোদরায় ৪৩ বছর পুরনো সেতু ধসে পড়ার এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রাণহানির পাশাপাশি অবকাঠামো নিরাপত্তার বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছে। সময়োপযোগী রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। এদিকে উদ্ধারকর্মীরা প্রাণ ও সম্পদের রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যায়, দ্রুত উদ্ধার ও তদন্ত শেষে ভবিষ্যতের জন্য শক্তিশালী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।