আঞ্চলিক

চট্টগ্রামে প্রথম দুই ব্যক্তির শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত

Advertisement

চট্টগ্রামে প্রথমবারের মতো স্থানীয়ভাবে দুই ব্যক্তির শরীরে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। নগরীর একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষার মাধ্যমে সোমবার রাতে এই ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর জনস্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে, বিশেষত গর্ভবতী নারীদের মধ্যে।

কীভাবে ভাইরাস শনাক্ত হলো?

চট্টগ্রামের বহুল পরিচিত একটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এপিক হেলথ কেয়ার-এ দুই রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার ফলাফলে তাদের শরীরে জিকা ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. জাহাঙ্গীর আলম জানান, “আমরা বিষয়টি আইইডিসিআর-কে জানিয়েছি এবং এখন তাদের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছি।”

শরীরে ভাইরাস পাওয়া যাওয়া দু’জনের নাম— মো. জাবেদ (৪২) এবং রিফাত আরা (৪২)। তাদের দু’জনকেই চট্টগ্রামের অভিজ্ঞ মেডিসিন বিশেষজ্ঞরা ব্যক্তিগত চেম্বার থেকে এপিক হেলথ কেয়ারে পরীক্ষার জন্য পাঠান।

উপসর্গ ও চিকিৎসা: কী জানা যাচ্ছে?

আক্রান্ত দুই রোগীর উপসর্গ ছিল অনেকটাই ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া রোগের মতো।

  • পুরুষ রোগীর উপসর্গ: জ্বর, সারা শরীরে ব্যথা ও ত্বকে লালচে দাগ
  • নারী রোগীর উপসর্গ: জ্বর, হাত-পা ব্যথা এবং কিছুটা ফুলে যাওয়া

চিকিৎসকদের মতে, জিকা ভাইরাসে সাধারণত প্রাণঘাতী ঝুঁকি থাকে না। তবে এটি গর্ভবতী নারীদের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ গর্ভস্থ শিশুর শারীরিক গঠন বা নিউরোলজিক্যাল সমস্যা তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশে জিকার ইতিহাস

বাংলাদেশে প্রথম জিকা ভাইরাস শনাক্ত হয় ২০১৪ সালে। তবে এটি সীমিত পর্যায়ে ছিল এবং কোনও বড় আকারে ছড়ায়নি। এরপর ২০১৬ সালে আরও কিছু sporadic case পাওয়া গেলেও, এবার চট্টগ্রামে স্থানীয়ভাবে ভাইরাসটির উপস্থিতি জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হয়ে উঠেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ভাইরাস এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় — ঠিক যেভাবে ডেঙ্গু এবং চিকুনগুনিয়া ছড়ায়। তাই এসব রোগ প্রতিরোধে যে ধরনের সতর্কতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়, সেগুলোর উপর জোর দেয়া এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ।

আইইডিসিআরের ভূমিকা ও পরবর্তী পদক্ষেপ

চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে, আইইডিসিআর এই দুটি রোগীর নমুনা পুনরায় পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একাধিক ভাইরাস শনাক্তে ব্যবহৃত একটি কিটের মাধ্যমে এই পরীক্ষাগুলো হয়েছে — যেখানে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা একসাথে শনাক্ত করা যায়।

আইইডিসিআর-এর চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলের পরেই সরকারিভাবে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সেই অনুযায়ী সংক্রমণ প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জনের দপ্তরের কর্মকর্তারা।

ঝুঁকি কতটা, কারা বেশি ঝুঁকিতে?

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, জিকা ভাইরাসের সংক্রমণে সাধারণ রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। কিন্তু গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এটি ভয়ংকর হতে পারে। ভাইরাসটি শিশুর মস্তিষ্কের স্বাভাবিক বিকাশে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যার ফলে মাইক্রোসেফালিসহ নানা ধরনের জন্মগত জটিলতা দেখা দিতে পারে।

বিশেষ করে, গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে যদি জিকা সংক্রমণ ঘটে, তাহলে গর্ভস্থ শিশুর মধ্যে গুরুতর সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

প্রতিরোধই এখন মূল চাবিকাঠি

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এডিস মশা থেকেই জিকা ভাইরাস ছড়ায়। তাই যেভাবে আমরা ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া রোধে সচেতন হই, সেভাবেই জিকার ক্ষেত্রেও মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করতে হবে।”

কী করতে হবে এখনই:

  • বাসাবাড়ির চারপাশে জমে থাকা পানি অপসারণ
  • ফুলের টব, ফ্রিজের ট্রে, এসির ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার
  • সকালে ও সন্ধ্যায় মশার কামড় থেকে নিজেকে বাঁচাতে সতর্কতা
  • গর্ভবতী নারীদের মশার প্রতিরোধে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন

বিশেষজ্ঞ মতামত: আতঙ্ক নয়, সচেতনতা জরুরি

ডা. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, “জিকা ভাইরাসে আক্রান্তরা সাধারণত নিজে নিজে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি ভয়াবহ হতে পারে, তাই আক্রান্ত হলে তাদেরকে তাৎক্ষণিক পর্যবেক্ষণে আনতে হবে।”

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সংক্রমণের খবর পাওয়া মাত্রই সংশ্লিষ্ট এলাকায় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা উচিত। একইসঙ্গে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে।

সামনে কী ঘটতে পারে?

চট্টগ্রামে জিকা ভাইরাস শনাক্ত হওয়া নিঃসন্দেহে জনস্বাস্থ্যের জন্য নতুন একটি সতর্কতা। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রেখেছে এবং আইইডিসিআরের রিপোর্টের ভিত্তিতে পরবর্তী নির্দেশনা আসবে।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়— চট্টগ্রামের পর দেশের অন্যান্য শহরেও কি জিকার উপস্থিতি পাওয়া যাবে? সময়ই সেই উত্তর দেবে।

“গর্ভবতী নারীদের জন্য জিকা ভাইরাস অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, তাই এখনই সচেতন না হলে বড় ধরনের বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে”—ডা. নুরুন্নবী, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।

এম আর এম – ০২২৪, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button