আঞ্চলিক

লাশঘরের সামনে মায়ের আর্তনাদ, ছেলের রক্তাক্ত দেহ জড়িয়ে অঝোরে কাঁদলেন

Advertisement

 চট্টগ্রামের মাইলের মাথায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালো কলেজপড়ুয়া তামিম। কিছুক্ষণ আগেই মা’কে বলেছিল একটু পরই ফিরবে। আজ আশুরার দিনে সন্তানের লাশ জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন বাবা-মা।

ঘটনাস্থলে ঝরে গেল এক তরতাজা প্রাণ

চট্টগ্রাম নগরের মাইলের মাথা এলাকায় রোববার বিকেলে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন আতাউর রহমান তামিম (১৮)। সে হাজেরা তজু ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিল। বিকেলে বন্ধু সাফায়েতের মোটরসাইকেলে চড়ে বেরিয়ে পড়ে তামিম। গন্তব্য ছিল পতেঙ্গা। কিন্তু পথে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে।

শেষ কথা: “আম্মু, একটু পরেই ফিরব”

দুর্ঘটনার মাত্র ঘণ্টাখানেক আগেও মাকে বলে গিয়েছিল, “আম্মু, একটু পর বের হব, কাছেই যাচ্ছি, মাগরিবের পর ফিরে আসব।” মা রুমা আক্তার তখন নামাজে বসেছিলেন। জানালা দিয়ে দেখেন, ছেলে বাইকের পেছনে উঠছে। ভাবেন, হয়তো দূরে কোথাও যাচ্ছে। কে জানত, ওটাই ছিল মায়ের চোখে ছেলের শেষ দৃশ্য!

লাশঘরে ছেলের রক্তমাখা দেহ জড়িয়ে কান্নায় ভাঙলেন বাবা

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লাশঘরের সামনে হৃদয়বিদারক এক দৃশ্য। বাবার পাঞ্জাবিতে ছেলের রক্তের দাগ। সেই রক্তাক্ত দেহ জড়িয়ে ধরে অঝোরে কাঁদলেন বাবা নিজামুল ইসলাম। বললেন, “আজ আশুরা। সবাই বাসায় ছিলাম। ও বের হলো বিকেলে। মাত্র এক ঘণ্টার মাথায় ফোন এলো — ছেলের দুর্ঘটনা। ছুটে গেলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি — আমার ছেলে আর নেই। ও আল্লাহর কাছে চলে গেছে। আমার কোনো অভিযোগ নেই।”

মায়ের বুকফাটা কান্না: “আমার তামিম, আমার বুকের ধন!”

হাসপাতালের লাশঘরের সামনে বারবার ছেলের নাম ধরে কাঁদছিলেন রুমা আক্তার। আত্মীয়রা বারবার শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সন্তানের শোক কীভাবে সহ্য করে মা? তিনি বারবার বলছিলেন, “নামাজের আগে যেটুকু কথা বললাম, সেটাই আমার শেষ কথা ছিল আমার ছেলের সঙ্গে!” বুক চাপড়াতে চাপড়াতে মাটিতে বসে পড়ছিলেন তিনি।

ভাইয়ের মৃত্যুশোক সহ্য করতে পারছে না ছোট ভাই

তামিমের ছোট ভাই তাওফিক, স্কুলছাত্র হলেও বুকে ধারণ করেছে অনেক বড় ব্যথা। হাসপাতালে কান্নায় ভেঙে পড়া মাকে জড়িয়ে ধরে সে নিজেও কাঁদছিল। জরুরি বিভাগের পাশে চেয়ারে বসে চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করছিল সে, কিন্তু পারছিল না। বড় ভাইয়ের মৃত্যু তার বিশ্বাসেরও বাইরে।

বন্ধুদের চোখে “তামিম ছিল প্রাণচঞ্চল, মজার, ফুটবলপাগল”

তামিমের বন্ধুরা কেউই তার মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। টার্ফে ফুটবল খেলার সময়ের ছবি দেখিয়ে কোচিংয়ের বন্ধু শাহরিয়ার বলছিল, “দুই দিন আগেই একসাথে খেলা শেষে ছবি তুলেছিলাম। আজ বিশ্বাস হচ্ছে না যে তামিম নেই। ছবিটাই এখন তার স্মৃতি।”

বন্ধুদের ভিড়ে চট্টগ্রাম মেডিকেলের জরুরি বিভাগ যেন শোকবইয়ে পরিণত হয়েছিল।

পরিবারে প্রথম ছেলে, সবার স্নেহের কেন্দ্রবিন্দু

আতাউর রহমান তামিম ছিল দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বড় ছেলে। পরিবারের সব সদস্যের কাছে সে ছিল প্রিয়। বোনদের আদরের ভাই, ছোট ভাইয়ের আদর্শ। তার অকাল মৃত্যু পুরো পরিবারকে শোকস্তব্ধ করে দিয়েছে।

বন্ধুবান্ধবের ভালোবাসায় শেষযাত্রা

রোববার রাত ১১টার দিকে শবগাড়িতে তামিমকে গ্রামের বাড়ি বাঁশখালী পৌর এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। শোকস্তব্ধ শত শত বন্ধু, আত্মীয় ও শুভানুধ্যায়ী তার শেষ যাত্রায় অংশ নেয়। এক তরুণ প্রাণের এমন বিদায় অনেক হৃদয়ে ক্ষত রেখে গেল।

“আমার ছেলে আল্লাহর কাছে চলে গেছে। ওর কোনো দোষ ছিল না।”
— নিজামুল ইসলাম, তামিমের বাবা

প্রশ্নবিদ্ধ সড়ক নিরাপত্তা

তামিমের মৃত্যু শুধু এক পরিবারের স্বপ্নভঙ্গ নয়, বরং আমাদের সড়ক ব্যবস্থার অপ্রতুল নিরাপত্তা ব্যবস্থার নগ্ন বাস্তবতা। প্রতিদিন দেশের কোথাও না কোথাও ঘটে এমন দুর্ঘটনা। প্রশ্ন থেকে যায় — আর কত তামিমের রক্তে রাঙা হবে আমাদের সড়ক?

এম আর এম – ০২২০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button