
কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। মাত্র এক দিনের মধ্যে গত রোববার সকাল ১০টা থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত নতুন করে আরও ৬৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন।
এই উদ্বেগজনক তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান। তিনি জানান, বেসরকারি হাসপাতালে নতুন শনাক্ত হওয়া ৬৩ জনের মধ্যে ১৩ জন দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আতঙ্কজনক হারে
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৮ জুন থেকে ৭ জুলাই সকাল ১০টা পর্যন্ত সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ৯,৪৪১ জন রোগীর রক্ত পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় ২,৭৭০ জনের শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গুরতর অবস্থায় ৩০ রোগী, ৯ জনের মৃত্যু
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ৩০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পাঠানো হয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এদের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই মৃত্যুর ঘটনা দাউদকান্দির স্বাস্থ্য পরিস্থিতির সংকটকে আরও গভীর করেছে।
ডেঙ্গু রোগের শুরু ও পরিস্থিতি
দাউদকান্দি পৌরসভার দোনারচর গ্রাম থেকেই প্রথম ডেঙ্গুর সংকট শুরু হয়। ওই গ্রামের একজন বাসিন্দা প্রথম ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান। এরপর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
অত্যন্ত উদ্বেগজনক বিষয় হলো, আক্রান্ত ও আশেপাশের এলাকাবাসীর মধ্যে এখনও পর্যাপ্ত সচেতনতা তৈরি হয়নি। ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে অনীহা দেখা যাচ্ছে।
কীভাবে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে?
ডেঙ্গু হলো মশাবাহিত একটি সংক্রামক রোগ, যা প্রধানত অ্যাডিস ইজিপ্টি জাতীয় মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। ডেঙ্গু মশার প্রজনন স্থল হলো জলাভাস বা জমে থাকা পানি, যা মশার লার্ভার জন্ম দেয়।
এজন্য বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা জল পরিষ্কার করা, খোলা পরিবেশে পানি না রাখা, মশার ডিম ধ্বংস করার মাধ্যমে ডেঙ্গুর বিস্তার রোধ করা সম্ভব।
দাউদকান্দিতে সচেতনতা ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা এখনই জরুরি
বর্তমানে দাউদকান্দি এলাকায় ডেঙ্গু মোকাবিলায় তৎপরতা বাড়ানোর জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে। এলাকাবাসীর মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক ক্যাম্পেইন ও শিক্ষা কার্যক্রম নেওয়া আবশ্যক।
শিশু ও প্রবীণরা ডেঙ্গুর প্রতি সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল, তাই তাদের সুরক্ষায় বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ যেমন উচ্চ জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরের ব্যথা, রক্তপাত দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া জরুরি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের করণীয়
- বাড়ির আশেপাশে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করা
- পুতি, টিনের ড্রাম ও গৃহস্থালি ড্রেন পরিষ্কার রাখা
- মশার প্রজননস্থল ধ্বংস করা
- স্থানীয় জনগণকে মাস্ক পরা, মশার দংশন থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা করা
- স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের দ্রুত শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করা
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে শুধু সরকারি উদ্যোগ নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। জনগণকে সচেতন করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জল জমে থাকা যেকোন স্থানে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডেঙ্গুর ভয়াল প্রভাব ও ভবিষ্যতের করণীয়
ডেঙ্গু রোগ সাধারণত গরম ও বর্ষাকালে বেশি ছড়ায়। দাউদকান্দির এই সময়ে জলাবদ্ধতা ও আবহাওয়ার কারণে পরিস্থিতি আরও গুরুতর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অতএব, এই রোগের বিস্তার রোধে তৎপর হওয়া প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। স্বাস্থ্য সচেতনতা ছাড়া ডেঙ্গু মোকাবিলা অসম্ভব।
কী করবেন ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে?
- বাড়ির আশেপাশে পানি জমতে দেবেন না
- মশার দাঁতিতে সুরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করুন
- মশারি ব্যবহার করুন
- সময়মতো স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান
- ডেঙ্গু উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যান
দাউদকান্দিতে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সতর্কতা অবলম্বন ও দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ একান্ত জরুরি। সকলের সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে।
আপনি কি জানেন আপনার এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে? মন্তব্য করে আমাদের জানাতে পারেন।