বানিজ্য

বিশ্ব অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখতে তেল উৎপাদন বাড়াচ্ছে ওপেক

Advertisement

আগামী আগস্ট থেকে দৈনিক ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানো হবে

রাশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, ওমানসহ ৯ দেশের যৌথ সিদ্ধান্ত

বাণিজ্য ও অর্থনীতি ডেস্ক, সিগনালবিডি ডটকম

বিশ্বের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তেল উৎপাদনকারী প্রধান দেশগুলোর জোট ওপেক (OPEC) এবং তার সহযোগী আটটি দেশ আগামী আগস্ট মাস থেকে অপরিশোধিত তেলের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে তারা বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়িয়ে বিশ্ববাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবে।

গত ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল বৈঠকে ওপেক+ (OPEC Plus) সদস্য দেশগুলো একমত হয়েছে, আগামী মাস থেকে দৈনিক ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে। এর ফলে বর্তমানে তাদের স্বেচ্ছায় নিয়ন্ত্রিত তেল উৎপাদন হ্রাসের পরিকল্পনা থেকে ধাপে ধাপে সরবরাহ বাড়ানো শুরু হচ্ছে।

ওপেক+ সদস্য দেশগুলো এবং তাদের ভূমিকা

বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী জোট ওপেক+ এর মধ্যে রয়েছে:

  • সৌদি আরব
  • রাশিয়া
  • ইরাক
  • কুয়েত
  • ওমান
  • সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)
  • আলজেরিয়া
  • কাজাখস্তান

এই দেশগুলো একসঙ্গে বিশ্ব তেলের প্রায় এক তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে। তারা গত কয়েক বছর ধরে তেল বাজারে দাম স্থিতিশীল রাখতে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। তবে বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় সরবরাহ বাড়ানো প্রয়োজন।

উৎপাদন বৃদ্ধি কেন প্রয়োজন?

গত কয়েক মাসে গ্রীষ্মকালীন তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বিশ্বজুড়ে। বিশেষ করে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক সংঘর্ষ তেলের সরবরাহে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছিল। তেহরান ও হরমুজ প্রণালীর ওপর সংঘর্ষের কারণে তেল রপ্তানিতে বিঘ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বাজারে তেলের দাম সাময়িকভাবে বেড়ে গিয়েছিল।

এসব পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায়, ওপেক+ দেশগুলো সরবরাহ বাড়িয়ে বাজারে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।

ওপেক+ এর পুরনো ও নতুন উৎপাদন নীতি

ওপেক+ গত বছর দুই ধরনের স্বেচ্ছামূলক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ নীতি প্রণয়ন করেছিল:
১. দৈনিক ১৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন হ্রাস, যা ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত বজায় থাকবে।
২. ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকের শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত দৈনিক ২২ লাখ ব্যারেল উৎপাদন হ্রাস।

এই নীতির আওতায়, ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ধীরে ধীরে দৈনিক ১ লাখ ৩৭ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা ছিল। তবে এপ্রিল মাসে এই পরিকল্পনা সফল হলেও, পরবর্তীতে মে, জুন ও জুলাই মাসে উৎপাদন দ্রুত বাড়িয়ে দৈনিক ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল করা হয়েছে।

এবারের জুলাইয়ের বৈঠকে এই বৃদ্ধি হার আরও বাড়িয়ে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।

বাজারের বর্তমান দাম ও ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস

গত শুক্রবারে সেপ্টেম্বর মাসের জন্য ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৮.৩০ ডলার, যা সাম্প্রতিক সংঘর্ষ ও গ্রীষ্মকালীন চাহিদার প্রভাব।
অন্যদিকে, নিউইয়র্ক মেক্সিকোর ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম আগস্টে মেয়াদ শেষ হওয়ায় নির্ধারিত হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৬.৫০ ডলার

বিশেষজ্ঞদের মতে, তেল উৎপাদন বাড়ানোর ফলে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দাম কিছুটা স্থিতিশীল হবে। তবে বিশ্ব রাজনীতির অনিশ্চয়তা ও চাহিদার ওঠাপড়ার কারণে দাম সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

ওপেক+ জোটের ভবিষ্যত পরিকল্পনা

ওপেক+ এই মুহূর্তে তার নীতিমালা আরও নমনীয় করার দিকে এগোচ্ছে। তারা চাহিদার ওঠানামার উপর ভিত্তি করে উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করবে যাতে বাজারে হঠাৎ তেল সঙ্কট বা দাম উত্থান না ঘটে।
তেল বাজারের বিশ্লেষকরা মনে করেন, ওপেক+ এর এই ধীর-ধীরে সরবরাহ বাড়ানো পরিকল্পনা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভালো সংকেত, কারণ স্থিতিশীল জ্বালানির দাম বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করে।

বিশ্ব অর্থনীতিতে তেলের গুরুত্ব

তেল হলো বিশ্ব অর্থনীতির একটি মূখ্য চালিকা শক্তি। বিশ্বব্যাপী পরিবহন, শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও নানা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তেল অপরিহার্য। এর দাম ও সরবরাহে যে কোনো বড় ধরনের পরিবর্তন বিশ্ববাজারে বিশাল প্রভাব ফেলে। তাই তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর সমন্বিত উদ্যোগ বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সংক্ষেপে:

  • ওপেক+ আগামী আগস্ট থেকে দৈনিক ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়াবে।
  • এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে গ্রীষ্মকালীন চাহিদা বৃদ্ধির ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘর্ষের কারণে।
  • তেলের দাম সাময়িক বেড়েছে, বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য।
  • ওপেক+ তেল বাজারে স্থিতিশীলতা রক্ষায় ধাপে ধাপে উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।
মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button