বিশ্ব

যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিতের মধ্যেই গাজায় ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ, নিহত অর্ধশতাধিক

Advertisement

যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার কথা শোনা গেলেও থেমে নেই ইসরায়েলের হামলা। শনিবার সকাল থেকে গাজাজুড়ে চালানো অভিযানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৬ জন ফিলিস্তিনি। বহু শিশু ও নারী আহত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে আরও অনেকে। হামাস জানিয়েছে, তারা আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে চাই স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা।


গাজায় চলমান সংঘাতের মাঝে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনার খবর শোনা গেলেও, ইসরায়েল সেই সুযোগে বরং হামলা আরও জোরদার করেছে। শনিবার সকাল থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান ও স্থল হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৫৬ জন ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। হামলা অব্যাহত রয়েছে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস থেকে শুরু করে গাজার কেন্দ্রীয় ও উত্তরাঞ্চল পর্যন্ত।

হামলার সর্বশেষ পরিস্থিতি

শনিবার ভোর থেকেই গাজার বিভিন্ন এলাকায় একযোগে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরের পশ্চিমে আল-মাওয়াসি এলাকার বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে গোলাবর্ষণে নিহত হন কমপক্ষে ৬ জন, আহত হয়েছেন ১০ জনেরও বেশি। গাজার জেইতুন এলাকায় একটি স্কুলে বোমা বর্ষণের ঘটনায় নিহত হন আরও ৫ জন।

একই দিনে গাজার একটি পানি বিশুদ্ধকরণ কেন্দ্রে হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন ২ জন এবং আহত হয়েছেন ১৫ জন। মধ্য গাজার বুরেইজ শরণার্থী শিবিরে একটি বাড়ি লক্ষ্য করে চালানো বিমান হামলায় প্রাণ হারান আরও ২ জন।

নুসেইরাতের আল-আওদা হাসপাতাল জানায়, ওয়াদি গাজার সালাহ আল-দিন সড়কের পাশে একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে চালানো হামলায় নিহত হয়েছেন ৪ জন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে অন্তত ৭০টি মৃতদেহ ও ৩৩২ জন আহতকে। চিকিৎসা অবকাঠামো ভেঙে পড়ায় আহতদের অনেকেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না। হাসপাতালে জায়গা নেই, ওষুধ ও বিদ্যুৎ সংকট চরমে।

হামাসের অবস্থান: আলোচনায় আগ্রহ, তবে শর্তসাপেক্ষে

যুদ্ধবিরতির আলোচনা এগোচ্ছে বলে জানালেও, হামাস জানিয়েছে যে তারা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ ছাড়া চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে না।
হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতির কাঠামো মেনে নিতে প্রস্তুত, তবে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি গ্যারান্টি চায়—যাতে নিশ্চিত করা হয়, আলোচনায় ব্যর্থ হলেও যুদ্ধ আবার শুরু হবে না।

হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, “আমরা আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তুত, তবে আমাদের জনগণের স্বার্থ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই সিদ্ধান্ত নিতে চাই।”

ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া

এখন পর্যন্ত ইসরায়েল কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই শর্তগুলোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে অতীতে এই ধরনের দাবি নিয়ে আগ্রহ দেখায়নি ইসরায়েল। বরং, যুদ্ধবিরতির আভাস পেলেও তারা সামরিক অভিযান থামায়নি।

বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিতকে কৌশলগতভাবে ব্যবহার করে হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে চাইছে।

মৃতের সংখ্যা ও মানবিক সংকট: এক নজরে

  • শুধু ২৪ ঘণ্টায় নিহত: কমপক্ষে ৫৬ জন
  • আহত: ৩৩২ জনের বেশি
  • যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে:
    • নিহত: প্রায় ৫৭,৩৩৮ জন ফিলিস্তিনি
    • আহত: ২৩,৯১৬ জনের বেশি
    • বাস্তুচ্যুত: কয়েক লাখ
    • ধ্বংস: হাসপাতাল, স্কুল, পানি সরবরাহ কেন্দ্রসহ শত শত স্থাপনা

গাজার স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, আরও বহু মানুষ ধ্বংসস্তূপে আটকে আছে। ধ্বংস হওয়া এলাকার মধ্যে অনেকেই পরিবারসহ নিখোঁজ।

যুদ্ধবিরতির আলোচনার পটভূমি

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের আকস্মিক হামলার পর থেকেই গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরু হয়। এতে প্রথম দফায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলি নিহত হন এবং বহুজনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এই যুদ্ধ প্রায় ১৫ মাস ধরে চলছে। মাঝে একাধিকবার যুদ্ধবিরতির আলোচনা হলেও কোনো স্থায়ী সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এবার যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির একটি নতুন প্রস্তাব আনা হয়েছে, যার কাঠামোতে হামাস আংশিক সম্মত হলেও চূড়ান্ত নিশ্চয়তা চায়।

ভবিষ্যৎ কী দেখাচ্ছে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাস ও ইসরায়েল—দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের ঘাটতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতির নিশ্চয়তা ছাড়া চুক্তিতে যেতে রাজি নয়, অপরদিকে ইসরায়েলও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে নারাজ।

“এই অবস্থায় মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি আরও বাড়বে,” মন্তব্য করেন এক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিশ্লেষক।

সারসংক্ষেপ


যুদ্ধবিরতির ইঙ্গিত কিছুটা স্বস্তি দিলেও, বাস্তবতা হলো গাজায় আজও লাশের সারি বাড়ছে। শিশু, নারী, বৃদ্ধ—কেউই রেহাই পাচ্ছে না এই আগ্রাসন থেকে। আলোচনার দরজা খোলা থাকলেও, অস্ত্র ও হামলার শব্দ থামছে না।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—আসলে কি এই যুদ্ধের কোনো শেষ আছে? নাকি, এই আলোচনাও আরেকটি ‘ভ্রান্ত আশা’ মাত্র?

এম আর এম – ০১৭৯, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button