আঞ্চলিক

ছাত্রী মোটা না চিকন হয়েছে দেখতে ইমোতে কল দেন ইবি শিক্ষক!

Advertisement


কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে উঠেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ। ছাত্রীদের মোটা না চিকন হয়েছে কিনা তা দেখার জন্য ইমোতে ভিডিও কল দিয়েছেন তিনি। আরও রয়েছে বডি শেমিং, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও হুমকির অভিযোগ।

মোটা না চিকন দেখার উদ্দেশ্যে কল!

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আজিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ছাত্রী। অভিযোগে বলা হয়েছে, শিক্ষক বিভিন্ন সময় ছাত্রীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, এমনকি একজন ছাত্রীকে ইমো অ্যাপে ভিডিও কল দিয়ে জানতে চেয়েছেন, তিনি ‘মোটা হয়েছেন না চিকন’।

ভুক্তভোগী এক ছাত্রী অভিযোগে বলেন, “স্যার ইমোতে আমাকে ভিডিও কল দেন। কল না ধরলে পরে অডিও কল করেন। বলেন—‘অনেকদিন তোমাদের দেখি না, মোটা হয়েছো না চিকন তা দেখার জন্য ভিডিও কল দিচ্ছি’। এরপর বলেন—‘তোমার কি কথা বলার কেউ আছে?’ আমি বলি, না নেই। তখন বলেন—‘এখন বলছো কেউ নেই, কিছুদিন পর দেখবো ক্যাম্পাসে ছেলের হাত ধরে ঘুরছো।’”

বিভাগের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা: কার্যক্রম থেকে বিরতি

ছাত্রীদের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগের সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দেন ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রী। একইসঙ্গে অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীরাও যুক্ত হয়ে অভিযোগ করেন।

বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিভাগের একাডেমিক কমিটির জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত হয়, অভিযুক্ত শিক্ষক ড. আজিজুল ইসলামকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিভাগের সব কার্যক্রম থেকে বিরত রাখা হবে।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. এ কে এম নাজমুল হুদা বলেন, “শিক্ষার্থীদের অভিযোগ পেয়ে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে একাডেমিক কমিটিতে বিষয়টি উত্থাপন করি। প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় তাকে দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হয়েছে।”

দীর্ঘদিনের অভিযোগ: ভয়েই মুখ খোলেননি ছাত্রীরা

শুধু একটি ঘটনা নয়, অভিযোগকারীদের ভাষ্য মতে, ড. আজিজুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রীদের সঙ্গে কুরুচিপূর্ণ আচরণ করে আসছেন। তবে অধিকাংশ ছাত্রী এতদিন ভয়ে চুপ ছিলেন।

এক ছাত্রী বলেন, “স্যার ক্লাসে উচ্চতা নিয়ে কুরুচিপূর্ণ জোকস করতেন। বিবাহিত ছাত্রীদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক নিয়েও নানা আপত্তিকর মন্তব্য করতেন। এমনকি একবার ক্লাসে দাঁড় করিয়ে পিরিয়ড নিয়ে অপমানজনক কথা বলেন, যা অত্যন্ত বিব্রতকর ছিল।”

অন্য এক ছাত্রী জানান, “স্যার হোয়াটসঅ্যাপে নোংরা মেসেজ পাঠাতেন, পরীক্ষায় ইচ্ছাকৃতভাবে নম্বর কমিয়ে দিতেন। তার কোর্সে ভালো রেজাল্ট পেতে হলে তার পছন্দের মতো আচরণ করতে হতো।”

হুমকি ও নিয়ন্ত্রণ: রেজাল্ট নিয়ে চাপে রাখার অভিযোগ

অভিযোগে বলা হয়েছে, ছাত্রীরা তার কথা না শুনলে রেজাল্ট খারাপ করার হুমকি দিতেন। কারো কারো প্রজেক্ট কাজ নিজের অধীনে করতে বাধ্য করতেন।

এক বিবাহিত ছাত্রী বলেন, “স্যার বলতেন, বিয়ের পর কীভাবে স্বামীকে নিয়ন্ত্রণ করবো তা জানো না। ব্যক্তিগত সম্পর্কের এমন বিশ্লেষণ এক শিক্ষকের কাছ থেকে অকল্পনীয়।”

এছাড়া অভিযোগ রয়েছে—ছাত্রীদেরকে ব্যক্তিগত রুমে ডেকে নিতেন, পারিবারিক জীবন নিয়ে প্রশ্ন করতেন এবং ক্লাসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিক্রিয়া: সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি

বিভাগের একাধিক ছাত্রী ইতোমধ্যে বিভাগের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও বিষয়টি জানিয়েছে। তারা অভিযুক্ত শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, একজন শিক্ষক যদি এমন আচরণ করেন, তবে ছাত্রীদের নিরাপত্তা কোথায়?

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনও ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অবস্থান নিতে পারে বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া

ড. আজিজুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংক্ষিপ্তভাবে বলেন, “আমি আপসেট আছি। এই বিষয়ে এখন কিছু বলতে চাই না।”

তবে তার নীরবতা অনেক প্রশ্ন তৈরি করছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব অভিযোগ তদন্তে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত না হলে ভবিষ্যতে ছাত্রীদের মধ্যে আস্থা হারাবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সারসংক্ষেপঃ  

এখন পর্যন্ত বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযুক্ত শিক্ষককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হলেও শিক্ষার্থীরা চায়, এর বাইরে আরও শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

বিশ্লেষকদের মতে, একাডেমিক প্রতিষ্ঠানে যদি শিক্ষক-ছাত্রীর সম্পর্ক এমন হয়, তাহলে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

এম আর এম – ০১৩৬, Signalbd.com

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button