বিশ্ব

ইসরায়েল গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মত, ট্রাম্পের বড় ঘোষণা

Advertisement

যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা সংঘাতের জন্য একটি নতুন আশার বাতাস এনেছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ‘প্রয়োজনীয় শর্তে’ রাজি হয়েছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে।

ট্রাম্পের ট্রুথ সোশাল পোস্টে বড় ঘোষণা

ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, “ইসরায়েল গাজার জন্য ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের শর্তে সম্মতি দিয়েছে। কাতার ও মিশর—যারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনবদ্য ভূমিকা পালন করেছে—তারা এই প্রস্তাব চূড়ান্ত করবেন। আমি আশা করি হামাসও এই চুক্তি গ্রহণ করবে, কারণ এর থেকে ভালো আর কোনো বিকল্প তাদের কাছে নেই। যদি তারা রাজি না হয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।”

ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির শর্তাবলী সম্পর্কে বিস্তারিত উল্লেখ না করলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষকে নিয়ে কাজ করবে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার জন্য।

২০২৩ সালের হামলা ও সংঘাতের পটভূমি

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের সন্ত্রাসী হামলার পর ইসরায়েল গাজার ওপর ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়। এই সংঘাতে ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত হন। হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এপর্যন্ত গাজার পক্ষ থেকে কমপক্ষে ৫৬,৬৪৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে অসংখ্য নারী ও শিশুরা রয়েছে।

এই দীর্ঘ এবং বীভৎস সংঘাতের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা নানা পর্যায়ে হয়েছে। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক প্রস্তাব এবং ইসরায়েলের সম্মতি নতুন আশার সঞ্চার করেছে।

হামাস কী বলে?

যদিও ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব দিয়েছেন, তবে হামাস এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। গত সপ্তাহে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে এক হামাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, “মধ্যস্থতাকারীরা নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন, তবে ইসরায়েলের সঙ্গে আলোচনা এখনো স্থবির।”

ইসরায়েলের অবস্থান ও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ভূমিকা

ট্রাম্পের মতে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার জন্য যুদ্ধবিরতি চান। তিনি বলেন, “আমার বিশ্বাস, নেতানিয়াহু গাজার জন্য যুদ্ধবিরতি চান। আগামী সপ্তাহে আমরা সম্ভবত একটি চুক্তিতে পৌঁছাব।”

স্থানীয় সময়ে ১ জুলাই, ইসরায়েলের কৌশল বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফসহ অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়, যেখানে যুদ্ধবিরতি বিষয়ক পরিকল্পনা এবং পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়।

যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তির সম্ভাবনা

গাজায় প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি আটক রয়েছেন, যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২০ জন এখনও জীবিত বলে ধারণা করা হয়। যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের সঙ্গে জিম্মি মুক্তির বিষয়টিও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। হামাস দীর্ঘদিন ধরে গাজা থেকে ইসরায়েলের প্রত্যাহার এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছে।

ইসরায়েল অবশ্য বলছে, “হামাস সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হলে এই সংঘাতের অবসান সম্ভব।” এর ফলে যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে কতটা সমঝোতা হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির সম্ভাবনা ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

কাতার ও মিশর মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করে আসছে। তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে মধ্যস্থতা করছেন। এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে, গাজার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।

বিশ্ব নেতারা যুদ্ধবিরতি ঘোষণাকে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন, এটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির সূচনা হবে। তবে অনেকেই সতর্ক করে দিয়েছেন, সংঘাতের গভীর ক্ষত এখনও রেমিডি করা বাকি এবং দুপক্ষের মধ্যে আস্থা পুনর্নির্মাণ দীর্ঘ সময় নিতে পারে।

পরবর্তী ধাপ কী হতে পারে?

ট্রাম্পের ঘোষণার পর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কূটনৈতিক আলোচনা আরও জোরদার হবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের আসন্ন বৈঠক এই প্রসঙ্গে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি থাকলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। তবে সংঘাতের গভীরতম কারণগুলি মোকাবেলা না করলে এ ধরনের সংঘাত ভবিষ্যতে পুনরায় ঘটতে পারে।

সংক্ষেপে যুদ্ধবিরতি নিয়ে বর্তমান অবস্থা

  • ইসরায়েল: গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে।
  • হামাস: প্রস্তাব গ্রহণে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
  • মধ্যস্থতাকারী: কাতার ও মিশর যুদ্ধবিরতি চুক্তির মধ্যস্থতা করছেন।
  • যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প নতুন প্রস্তাবে সক্রিয় ভূমিকা নিচ্ছেন।
  • জিম্মি: গাজায় প্রায় ৫০ জন ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছেন, যাদের জীবিত থাকার খবর আসছে।

সমৃদ্ধ শান্তির পথে: গাজার যুদ্ধে যুদ্ধবিরতির গুরুত্ব ও সম্ভাবনা

গাজার দীর্ঘদিনের সংকট ও যুদ্ধের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষ এক দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। হাজার হাজার নিহত, শতাধিক আহত ও কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি কেবল অস্ত্রবিরতি নয়, এটি একটি সম্ভাবনা যা গাজার মানুষের জন্য স্থায়ী শান্তির সূচনা করতে পারে।

এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলে গাজার পুনর্গঠন, মানবিক সহায়তা ও রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন দিগন্ত খুলবে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির পুনরুত্থান হবে।

মন্তব্য করুন
Advertisement

Related Articles

Back to top button