ইসরায়েলি হামলায় ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯৩৫

ইসরায়েলের টানা ১২ দিনের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইরানে নিহত হয়েছেন অন্তত ৯৩৫ জন। ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্রের বরাতে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছেন। যুদ্ধবিরতির পরেও ক্ষোভ থামেনি ইরানি জনগণের মধ্যে।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন দেশটির বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গীর। নিহতদের মধ্যে ১৩২ জন নারী এবং ৩৮ জন শিশু রয়েছেন বলে জানা গেছে। ইরানজুড়ে শোক আর ক্ষোভে স্তব্ধ জনজীবন।
ইসরায়েলি হামলার বিস্তারিত ও সরকারিভাবে ঘোষিত তথ্য
ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র আসগর জাহাঙ্গীর এক বিবৃতিতে জানান, ‘সর্বশেষ ফরেনসিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ইহুদিবাদী শাসকগোষ্ঠীর (ইসরায়েল) ১২ দিনের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৯৩৫ জন শহীদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে।’ এই তথ্য ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা থেকে জানানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, “নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই সাধারণ নাগরিক। তেহরানের গিশা ও মারজদারান এলাকাসহ বহু অঞ্চলে বেসামরিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
হামলার পেছনের প্রেক্ষাপট
১৩ জুন থেকে শুরু হয় ইসরায়েলের ধারাবাহিক আক্রমণ। এই হামলায় লক্ষ্যবস্তু ছিল সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানীদের বাসস্থান। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায়।
এই সংঘাত ১২ দিন স্থায়ী হয় এবং শেষপর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতিতে উপনীত হয় দুই দেশ। তবে বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধবিরতি হলেও মূল সংকট এখনো বিদ্যমান।
ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের পরিসংখ্যান
এই সংঘর্ষে শুধুমাত্র প্রাণহানিই নয়, ইরানের অবকাঠামোগত ক্ষতিও হয়েছে ব্যাপক। সরকারি তথ্যমতে:
- ৭টি হাসপাতাল সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত
- ৬টি জরুরি সেবাদান কেন্দ্র বিধ্বস্ত
- ৪টি ক্লিনিক ও ৯টি অ্যাম্বুলেন্স ধ্বংসপ্রাপ্ত
- ৪ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছেন
এছাড়া, প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ তাদের বাসস্থান ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
“আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার হামলায় ৯৩৫ জন শহীদের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়েছে”— আসগর জাহাঙ্গীর, ইরানের বিচার বিভাগের মুখপাত্র।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক বিশ্লেষণ
এই হামলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এ ধরনের হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে বিবেচনা করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠক আহ্বান করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক হাসান আজিজ বলেন, “এই সংঘাত ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বকে শুধু আঞ্চলিক সংকটেই সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং এটি এখন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ঝুঁকিতেও পরিণত হয়েছে।”
ইসরায়েলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, তারা শুধুমাত্র ইরানের সামরিক সক্ষমতা দুর্বল করতেই হামলা চালিয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি করছে, ইসরায়েলের হামলায় মূলত বেসামরিক এলাকাগুলোই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানায়, ইরানের পাল্টা হামলায় ইসরায়েলের ২৮ জন নাগরিক নিহত এবং প্রায় ৩ হাজার আহত হয়েছেন।
সামনে কী হতে পারে?
যদিও সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর রয়েছে, তবু ইরানের সাধারণ মানুষ, রাজনীতি বিশ্লেষক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশঙ্কা করছেন—এই যুদ্ধবিরতি খুবই অস্থায়ী। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ চড়ছে, এবং এই পরিস্থিতিতে পরবর্তী প্রতিক্রিয়াই নির্ধারণ করবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ভবিষ্যৎ।
তবে বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি কীভাবে মোড় নেবে তা নির্ভর করছে পরবর্তী প্রতিক্রিয়ার ওপর।
এম আর এম – ০১০৬, Signalbd.com