বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমলো, ওপেক তেল উৎপাদন বাড়াচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের দাম আবারও নেমে এসেছে। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা কমে যাওয়ার পাশাপাশি তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর শক্তিশালী জোট ওপেক ও তার সহযোগীরা তেল উৎপাদন বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এসব কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রায় ১ শতাংশ কমেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য এক সুসংবাদ।
তেলের বাজারে মূল্য পতনের কারণ
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তেলের বাজারে ঊর্ধ্বগতি চলছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতি পুরোপুরি পাল্টেছে। বিশেষ করে ইরান-ইসরায়েল মধ্যকার উত্তেজনা কিছুটা শিথিল হওয়ায়, যুদ্ধের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর তেলের দাম দ্রুত কমতে শুরু করে।
বিশ্ববাজারে আজ সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৬৬ সেন্ট কমে ব্যারেলপ্রতি দাঁড়িয়েছে ৬৭.১১ ডলার। আগামী সেপ্টেম্বরে দাম আরও কমে ৬৫.৯৭ ডলারে নেমে এসেছে, যা ৮৩ সেন্ট কম। ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) ক্রুডের দাম ৯৪ সেন্ট কমে ৬৪.৫৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
জুন মাসে তেলের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি
যদিও গত সপ্তাহে তেলের দাম ব্যাপকভাবে কমেছে, জুন মাসের পুরো সময়টাই তেলের দাম ছিল তুলনামূলকভাবে উচ্চ। জুন মাসের শেষ পর্যায়ের মূল্য নিরীক্ষায় দেখা গেছে, তেলের দাম ৫ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এটা বিশ্ববাজারের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার প্রভাব ও যুদ্ধবিরতির গুরুত্ব
১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালানোর পর মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়ে। এতে তেলের দাম দ্রুত বাড়তে থাকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইরানের ওপর বিমান হামলার ঘোষণার পর দাম ব্যারেলপ্রতি ৮০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। তবে যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর দাম দ্রুত কমে আসে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে শিথিলতার ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্লেষক টনি সাইকামোর বলেন, “বাজারে যেসব আতঙ্কজনিত মূল্যবৃদ্ধি হয়েছিল, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর তা অনেকটাই কমে গেছে।” এই কারণে তেলের বাজারে দাম স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে।
ওপেকের উৎপাদন বৃদ্ধি পরিকল্পনা
অপরদিকে, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর জোট ‘অর্গানাইজেশন অফ পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কন্ট্রিজ’ (OPEC) ও সহযোগী দেশগুলো আগস্ট মাস থেকে প্রতিদিন ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। মে, জুন ও জুলাই মাসেও একই পরিমাণে উৎপাদন বাড়ানো হয়েছে।
৭ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য ওপেকের পরবর্তী বৈঠকে এই বিষয়টি নিয়ে আরও আলোচনা হবে। এ মাসের বৈঠক হবে এপ্রিল মাসে উৎপাদন হ্রাসের ধারার পর পঞ্চম দফায় উৎপাদন বাড়ানোর পদক্ষেপ হিসেবে গুরুত্ব বহন করবে।
যুক্তরাষ্ট্রে তেল খনির সংখ্যা কমেছে
একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রে তেল খনির সংখ্যা কমে এসেছে। খনিজ খাতের বিশ্লেষণকারী প্রতিষ্ঠান বেকার হিউজ জানায়, বর্তমানে দেশটিতে সক্রিয় তেল খনির সংখ্যা ৪৩২, যা অক্টোবর ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন। এই তথ্য মার্কিন তেল উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য পর্যালোচনা ও প্রভাব
বিশ্বের প্রধান তেল উৎপাদন ও রপ্তানিকারী দেশগুলো, বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি, জ্বালানি তেলের দাম ও সরবরাহ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিক যুদ্ধঝুঁকি কমে যাওয়া এবং ওপেকের উৎপাদন বৃদ্ধি বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য পুনঃস্থাপন করছে।
তেলের দাম কমার ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে সম্ভাব্য প্রভাব
তেলের দাম কমার ফলে বিশ্বের অনেক দেশেই জ্বালানি ও পরিবহন খরচ কমতে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। এর ফলে পণ্যের মূল্যও স্থিতিশীল থাকতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া শিল্প উৎপাদন খরচ কমে যায়, যা অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে সহায়ক।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
তবে তেলের বাজারে মূল্য কতটা স্থিতিশীল থাকবে তা নির্ভর করবে geopolitical পরিস্থিতি এবং উৎপাদন নীতির ওপর। মধ্যপ্রাচ্যে আবার নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে বা অন্য কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে দাম আবারও বাড়তে পারে। তাই আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নজর রাখা জরুরি।
সারসংক্ষেপ
- মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা কমে তেলের বাজারে স্বস্তি।
- ওপেক ও সহযোগীরা আগস্ট থেকে উৎপাদন বাড়াবে, মে-জুলাইয়েও বাড়ানো হয়েছে।
- ব্রেন্ট ক্রুড ও ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম আজ প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
- জুন মাসে তেলের দাম সামগ্রিকভাবে ৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
- যুক্তরাষ্ট্রে তেল খনির সংখ্যা কমে, যা অক্টোবর ২০২১ সালের পর সর্বনিম্ন।
- আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কতটা স্থিতিশীল থাকবে তা ভবিষ্যতের রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।
সিগনালবিডি ডটকম এ আমরা নিয়মিত আপডেট দিয়ে থাকি আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অর্থনীতি, জ্বালানি বাজার, এবং বিশ্ববাজারের সাম্প্রতিক পরিবর্তন নিয়ে। আমাদের সাথেই থাকুন, বাজারের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ খবরের জন্য।
