অর্থনীতি

 চলতি অর্থবছরে দেশে রেকর্ড রেমিট্যান্স: ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ালো, প্রবৃদ্ধি ২৬.৫ শতাংশ — বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০২৪–২৫ অর্থবছরের শেষ না হতেই রেমিট্যান্স ছাড়িয়েছে ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হুন্ডি প্রতিরোধ, প্রণোদনা বৃদ্ধি এবং প্রবাসী আস্থার ফলেই এই অভূতপূর্ব প্রবৃদ্ধি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ফিরেছে স্বস্তি।

ইতিহাস গড়ল রেমিট্যান্স, ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়াল প্রবাসী আয়

২০২৪–২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পেয়েছে ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যমতে, ২৮ জুন পর্যন্ত দেশে এসেছে ৩০ দশমিক ০৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই পরিমাণ গত অর্থবছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, অর্থবছরের শেষ দুদিনের হিসাব এখনো বাকি, ফলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

আগের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল ২০২৪–২৫ অর্থবছর

এর আগে ২০২০–২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল। চলতি অর্থবছর সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ।

গত অর্থবছর (২০২৩–২৪) রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ এবারের প্রবৃদ্ধি প্রায় ৬.১৩ বিলিয়ন ডলার।

মাসভিত্তিক বিশ্লেষণ: কোথায় কী হলো

চলতি অর্থবছরে মাসভিত্তিক রেমিট্যান্সের প্রবাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে মার্চ ও মে মাসে দেখা গেছে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি।

  • জুলাই: ১৯১ কোটি ডলার
  • অগাস্ট: ২২২ কোটি
  • সেপ্টেম্বর: ২৪০ কোটি
  • অক্টোবর: ২৩৯ কোটি
  • নভেম্বর: ২২০ কোটি
  • ডিসেম্বর: ২৬৪ কোটি
  • জানুয়ারি: ২১৯ কোটি
  • ফেব্রুয়ারি: ২৫২ কোটি
  • মার্চ: ৩২৯ কোটি (রেকর্ড)
  • এপ্রিল: ২৭৫ কোটি
  • মে: ২৯৭ কোটি
  • জুন (২৮ জুন পর্যন্ত): ২৫৪ কোটি ডলার

মার্চ মাসে এক মাসেই এসেছে সর্বোচ্চ ৩২৯ কোটি ডলার, যা একক মাসে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স।

কেন এই বিশাল প্রবৃদ্ধি?

অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের মতে, রেমিট্যান্স বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ এবং নীতিগত পরিবর্তন:

  1. হুন্ডি প্রতিরোধে কড়া পদক্ষেপ:
    সরকারের আইনগত ও প্রযুক্তিগত উদ্যোগ হুন্ডি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রেখেছে।
  2. প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনা:
    বৈধ পথে অর্থ পাঠাতে ২.৫ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা, উৎসাহ পেয়েছেন প্রবাসীরা।
  3. ডিজিটাল চ্যানেল সহজলভ্যতা:
    মোবাইল ব্যাংকিং ও অনলাইন ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্মে রেমিট্যান্স পাঠানো সহজ হয়েছে।
  4. রাষ্ট্রীয় নজরদারি:
    বাংলাদেশ ব্যাংক ও আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে।

রিজার্ভে স্বস্তি, ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা

রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রভাব সরাসরি পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গ্রস রিজার্ভ এখন ৩১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

আইএমএফের হিসাব (বিপিএম ৬ অনুযায়ী): ২৬ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার।
এই রিজার্ভ আমদানি ব্যয়, ঋণ পরিশোধ এবং মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।

বিশেষজ্ঞরা কী বলছেন?

অর্থনীতিবিদ এম হেলাল আহমেদ জনি বলেন,
“রেমিট্যান্সে এই সাফল্য প্রমাণ করে, সঠিক নীতি প্রয়োগ ও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকলে প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেল ব্যবহার করতে আগ্রহী হন। এটি কেবল পরিসংখ্যানগত অর্জন নয়, বরং দেশের অর্থনীতির জন্য গভীর ইতিবাচক বার্তা।”

তিনি আরও বলেন,
“এই ধারা ধরে রাখতে হলে প্রবাসী শ্রমবাজার বহুমুখীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং অভিবাসন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা জরুরি।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও করণীয়

যদিও চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্সের চিত্র আশাব্যঞ্জক, তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

  • নতুন বাজার খুঁজে বের করা দরকার (আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা)
  • দক্ষ শ্রমিক তৈরি করতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাড়াতে হবে
  • রেমিট্যান্সের টাকাকে সঞ্চয় বা বিনিয়োগে রূপান্তর করতে নীতিমালা দরকার

সংক্ষেপে সারসংক্ষেপ

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো বার্ষিক রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। সরকারের কৌশলী পদক্ষেপ ও প্রবাসীদের আস্থার কারণেই সম্ভব হয়েছে এই অর্জন।

তবে বিশ্লেষকদের মতে, এই ধারা ধরে রাখতে হলে সরকারকে আরও আগ্রাসী ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে।

এম আর এম – ০১০১, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button