বাহরাইনকে ৭–০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ

মিয়ানমারের মাঠে এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেক পিছিয়ে থেকেও শক্তিশালী বাহরাইনকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে দিল বাংলার মেয়েরা।
ম্যাচের সূচনা মুহূর্তেই গোল বন্যা
মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনের থুউন্না স্টেডিয়ামে রোববার অনুষ্ঠিত এএফসি নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে শুরু থেকেই দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখায় বাংলাদেশ নারী দল। দশম মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়রের গোলে গোলের সূচনা হয়। এরপর একের পর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে বাহরাইনের রক্ষণভাগ।
প্রথমার্ধেই শেষ হয়ে যায় লড়াই
ম্যাচের ১৫ মিনিটেই ঋতুপর্ণা চাকমার বাঁকানো দুর্দান্ত শটে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ২–০। ৪০ মিনিটে কোহাতি কিসকুর গোলে ব্যবধান হয় ৩–০। এরপর যোগ করা সময়ে তহুরা খাতুনের জোড়া গোল এবং শামসুন্নাহারের আরেকটি গোলে ৫–০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে বাংলাদেশ।
প্রথম ৪৫ মিনিটেই দেখা গেছে ৬টি সুনির্দিষ্ট গোলের সুযোগ, যার ৫টি কাজে লাগিয়েছে পিটার বাটলারের শিষ্যারা।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণ অব্যাহত: আরও ২ গোল
বিরতির পরেও থামেনি বাংলাদেশের গতি। ৬০ মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়র নিজের দ্বিতীয় গোল করেন। ৭৫ মিনিটে মুনকি আক্তার একক চেষ্টায় অসাধারণ গোল করে জয় নিশ্চিত করেন ৭–০ ব্যবধানে।
এই জয় শুধুমাত্র স্কোরলাইনের দিক থেকে বড় নয়, মনস্তাত্ত্বিকভাবে এটি বাংলাদেশের নারীদের ফুটবলে এক বিশাল অর্জন।
র্যাঙ্কিংকে পাত্তা না দিয়ে আত্মবিশ্বাসের ফুটবল
বাহরাইনের ফিফা র্যাঙ্কিং ৯২, যেখানে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮। র্যাঙ্কিংয়ে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা একটি দলকে এভাবে পরাস্ত করা নিঃসন্দেহে বড় চমক। র্যাঙ্কিং আর মাঠের পারফরম্যান্সের মধ্যে পার্থক্য যে কতটা হতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিলো এই ম্যাচ।
খেলোয়াড়দের সম্মিলিত পারফরম্যান্সের জয়
গোলদাতাদের তালিকায় যেমন আছেন ফরোয়ার্ডরা, তেমনি মধ্যমাঠ এবং ডিফেন্স থেকেও এসেছে গোলের সহায়তা। মনিকা চাকমার কর্নার, মারিয়া মান্দার অ্যাসিস্ট এবং শিউলি আজিমের রক্ষণভাগে নিয়ন্ত্রণ – সব মিলিয়ে এক নিখুঁত দলীয় সমন্বয়ের চিত্র দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের চোখে বাংলাদেশ: বদলে যাওয়া এক দল
ফুটবল বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দল এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি গঠনগতভাবে শক্তিশালী। পাসিং, প্রেসিং এবং ফিনিশিং – সব কিছুতেই উন্নতি চোখে পড়েছে। এ ম্যাচে বাংলাদেশ ১৩টি শট নেয়, যার মধ্যে ৯টি ছিল অন টার্গেট। দক্ষ পরিকল্পনা ও অনুশীলনের প্রমাণ মিলেছে প্রতিটি মুহূর্তে।
“এই জয় শুধু এক ম্যাচ নয়, নারীদের ফুটবলে এক নতুন সম্ভাবনার বার্তা”—মত বিশ্লেষক ও সাবেক কোচ মাহবুব হোসেনের।
আগামী লড়াই: মিয়ানমারই চ্যালেঞ্জ
২ জুলাই স্বাগতিক মিয়ানমারের বিপক্ষে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে জয় বা ড্র পেলে চূড়ান্ত পর্বে খেলার সম্ভাবনা আরও জোরদার হবে। তবে মিয়ানমার আগেই তুর্কমেনিস্তানকে ৮–০ গোলে হারিয়েছে, তাই চ্যালেঞ্জ কঠিন হবে বলেই অনুমান।
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
বাংলাদেশ নারী দল যেভাবে নিজেদের প্রস্তুত করেছে এবং মাঠে তার প্রমাণ রেখেছে, তাতে ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী হওয়াই যায়। র্যাঙ্কিং কম হলেও মাঠে দক্ষতার মাধ্যমে যেকোনো বড় দলকে হারানোর সক্ষমতা যে তৈরি হয়েছে, তা প্রমাণিত হলো।
তবে প্রশ্ন রয়ে যায় — এই ধারাবাহিকতা বাংলাদেশ কতটা ধরে রাখতে পারবে সামনের কঠিন লড়াইগুলোতে?
এম আর এম – ০০৯৯, Signalbd.com