আঞ্চলিক

 নাটোরে শিশু আবিরের খুনিদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

নাটোরের বড়াইগ্রামে ৯ বছর বয়সী শিশু মিনহাজ হোসেন আবিরকে নির্মমভাবে হত্যার প্রতিবাদে ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বনপাড়ায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিহত আবিরের মা-বাবার কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পুরো এলাকা, যোগ দেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক, রাজনৈতিক নেতাসহ সাধারণ জনগণ।

বনপাড়ায় আবির হত্যার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন

নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া বাজারে শনিবার বিকেলে এক হৃদয়বিদারক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। নয় বছর বয়সী শিশু মিনহাজ হোসেন আবির হত্যার বিচার ও জড়িত সকলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আয়োজিত এই মানববন্ধনে শোক ও ক্ষোভে ফেটে পড়ে এলাকাবাসী।

নিহত আবিরের পিতা মিলন হোসেন ও মা আঁখি খাতুন বুকফাটা কান্নায় বারবার বলেন, “আমার একমাত্র ছেলেকে কেন এভাবে হত্যা করা হলো? আমরা এর বিচার চাই।”

এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা। তারা সবাই একবাক্যে দাবি জানান — শুধুমাত্র একজন শিশুকে অভিযুক্ত করে পুরো ঘটনার দায় চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। ঘটনার গভীরে আরও কেউ জড়িত থাকলে তাদেরও খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।

হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর: কীভাবে ঘটলো নির্মম হত্যার ঘটনা

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেল ৩টার দিকে আবির তার সাইকেল ও মোবাইল ফোন নিয়ে বাসা থেকে বের হয়। দীর্ঘ সময় পার হলেও সে আর বাড়ি ফেরেনি। সন্ধ্যার পর থেকে পরিবার ও এলাকাবাসী খোঁজাখুঁজি শুরু করে।

রাত ৯টার দিকে বনপাড়া পাটোয়ারী ফিলিং স্টেশনের পাশে নির্মাণাধীন একটি মসলা মিলের মাঠে রক্তমাখা সাইকেল ও পরিত্যক্ত অবস্থায় আবিরের মরদেহ পাওয়া যায়। তার মাথা ও মুখে ইটের আঘাতের চিহ্ন ছিল। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করে তদন্ত শুরু করে।

ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে পুলিশ ১২ বছর বয়সী এক শিশুকে আটক করে। সে জানায়, মোবাইল গেম খেলা নিয়ে আবিরের সঙ্গে তার ঝগড়া হয়, এবং রাগের মাথায় সে ইট দিয়ে আঘাত করে, যাতে আবির ঘটনাস্থলেই মারা যায়।

অভিভাবক ও এলাকাবাসীর প্রশ্ন: ‘শুধু একটি শিশু এই নৃশংসতা ঘটাতে পারে?’

বক্তারা বলেন, “একজন ছোট শিশু একা কি এমন ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে?” এই প্রশ্নই এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে। মানববন্ধনে বক্তারা দাবি জানান, শুধুমাত্র একজন শিশুর স্বীকারোক্তির ওপর নির্ভর না করে, পুলিশকে আরও গভীর তদন্ত করতে হবে।

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা অধ্যাপক আব্দুল আলিম বলেন, “আমরা চাই এই হত্যাকাণ্ডে যারা প্রকৃতভাবে জড়িত, তারা যেন আইনের আওতায় আসে। এটা কোনো ব্যক্তিগত প্রতিহিংসার ফল কিনা, তা খতিয়ে দেখা দরকার।”

প্রাথমিক তদন্তের তথ্য ও পুলিশের বক্তব্য

বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শোভন চন্দ্র হোড় জানান, “ঘটনার প্রেক্ষিতে আমরা ১২ বছর বয়সী এক কিশোরকে আটক করেছি, যার কাছে নিহতের মোবাইল ফোনটিও পাওয়া গেছে। সে প্রাথমিকভাবে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তবে তদন্ত এখনো চলমান। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, এতে আর কেউ জড়িত কিনা।”

এছাড়াও বড়াইগ্রাম থানার ওসি গোলাম সারওয়ার জানান, “নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আমরা প্রযুক্তির সহায়তায় তদন্ত চালাচ্ছি।”

শিশু হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ ও ক্ষোভ

শুধু বড়াইগ্রাম নয়, নাটোর জুড়েই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও দুঃখ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লিখছেন, “আবিরের মতো নিষ্পাপ শিশুর এমন পরিণতি কেন হবে?”

আবিরের স্কুল ‘আদিব ইন্টারন্যাশনাল’-এর শিক্ষিকা শারমিন আক্তার বলেন, “সে ছিল খুবই মেধাবী ও ভদ্র ছাত্র। তার এমন মৃত্যু আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।”

ভবিষ্যৎ করণীয় ও স্থানীয়দের আহ্বান

মানববন্ধন থেকে স্থানীয় নেতারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দ্রুত বিচার না হলে বৃহত্তর কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে। পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে সহিংস গেম ও মোবাইল আসক্তি নিয়েও অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

 বিচার না হলে প্রশ্ন থাকবে মানবিকতার ওপর

আবির হত্যাকাণ্ড যেন আরেকটি পরিসংখ্যানে পরিণত না হয়। বিচারের আশায় পথে দাঁড়িয়ে থাকা এই শিশুর মা-বাবা, সহপাঠীরা ও সমাজের বিবেকবান মানুষদের দাবি, দ্রুত তদন্ত শেষ করে প্রকৃত দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।

তবে প্রশ্ন থেকে যায় — শিশুদের মধ্যেই যদি এমন হিংস্রতা বাসা বাঁধে, তাহলে এর দায় আমাদের সমাজের নয় কি?

এম আর এম – ০০৮৩, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button