ত্রাণের আটায় ভয়ংকর মাদক মিশিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে গাজাবাসীকে!

গাজার উপত্যকায় চলমান মানবিক সংকটের মধ্যেই নতুন আতঙ্ক—ত্রাণ হিসেবে দেওয়া আটার বস্তায় পাওয়া যাচ্ছে মারাত্মক আফিমজাত মাদক ‘অক্সিকোডোন’। গাজার সরকার বলছে, এটি শুধু স্বাস্থ্য নয়, বরং একটি জাতির অস্তিত্বকে ধ্বংসের জন্য পরিকল্পিত অপচেষ্টা।
মানবিক ত্রাণ না মরণফাঁদ?
ইসরায়েলের লাগাতার হামলার মুখে থাকা গাজাবাসী যখন ন্যূনতম খাদ্য সহায়তার জন্যও মরিয়া, তখন তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে এমন ত্রাণ যা রীতিমতো মৃত্যু ডেকে আনছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত ত্রাণ সহায়তা কেন্দ্রগুলো থেকে বিতরণ করা কিছু আটার ব্যাগে পাওয়া গেছে ভয়ংকর মাদকদ্রব্য—অক্সিকোডোন।
গাজা সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, এখন পর্যন্ত চারজন নাগরিকের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, যারা ব্যক্তিগতভাবে এসব আটার ব্যাগের ভিতরে মাদকের বড়ি খুঁজে পেয়েছেন। আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো, কিছু মাদকের বড়ি গুঁড়ো করে আটার সঙ্গে সরাসরি মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
অক্সিকোডোন কী এবং কেন এটি ভয়ংকর?
অক্সিকোডোন একটি উচ্চমাত্রার ওপিওয়েড জাতীয় ব্যথানাশক, যা মূলত ক্যান্সার বা জটিল শারীরিক যন্ত্রণার রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি অত্যন্ত আসক্তিকর ও প্রাণঘাতী হতে পারে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, বিভ্রম, অঙ্গ বিকল হওয়া এবং এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই পদার্থ কোনো অবস্থাতেই খাদ্যের সঙ্গে গ্রহণযোগ্য নয়। একজন ফার্মাসিস্ট জানান, “এই মাদক একজন সুস্থ মানুষের জন্য মারাত্মক বিষ। এটি পরিকল্পিতভাবে সমাজকে ধ্বংসের চেষ্টা।”
উদ্দেশ্য কী হতে পারে এই মাদকের?
গাজার সরকারের ভাষ্যমতে, এটি নিছক দুর্ঘটনা নয় বরং একটি ‘সামাজিক ও নৈতিক গণহত্যা’। গাজার মিডিয়া অফিস বলছে, “ইসরায়েলি দখলদাররা গাজাবাসীর সামাজিক কাঠামোকে ভেতর থেকে ভেঙে ফেলতে চাইছে। এটি কেবল সামরিক নয়, মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক যুদ্ধ।”
তাদের মতে, অক্সিকোডোনের মতো ভয়ংকর মাদক খাদ্য পণ্যের মধ্যে মিশিয়ে দেওয়ার ঘটনা মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘন এবং সরাসরি যুদ্ধাপরাধের শামিল।
মানবিক সাহায্যের আড়ালে নাশকতা?
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন কিছু বিতরণ কেন্দ্র, যারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অর্থায়নে পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি করেছে গাজার প্রশাসন। এসব কেন্দ্র থেকে আসা ত্রাণের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে এমন মিশ্রিত পণ্য।
একাধিক আন্তর্জাতিক সংস্থা এ ঘটনাকে ‘মর্যাদাহীন সাহায্য’ বলে আখ্যা দিয়েছে। তারা প্রশ্ন তুলেছে, মানবিক সহায়তার নামে কি গাজাবাসীর উপর আরও ভয়াবহ অন্যায় চালানো হচ্ছে?
চিকিৎসকদের মতামত: “এটি ধ্বংসের জঘন্যতম রূপ”
গাজার চিকিৎসকদের মতে, এটি কোনো নিছক ভুল নয়। একজন চিকিৎসক, খলিল মাজেন আবু নাদা বলেন, “এই মাদক একটি সমাজের নৈতিকতা, চিন্তাশক্তি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংস করার এক নিষ্ঠুর কৌশল।”
ফার্মাসিস্ট ওমর হামাদ বলেন, “এটি নিছক একটি ট্র্যাজেডি নয়। এটি আমাদের জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত করার একটি মরণছোবল।”
আগেও কি ঘটেছে এমন?
এই প্রথম নয়, গাজায় মানবিক সহায়তার আড়ালে বিভিন্ন সময় সন্দেহজনক কার্যক্রমের অভিযোগ এসেছে। অতীতেও ইসরায়েলি বাহিনীর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে সাধারণ ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে গুলি চালানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
এমনকি, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত এক মাসে বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে অন্তত ৫১৬ জন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটেই নতুন করে ত্রাণের মধ্যে মাদক পাওয়ার ঘটনা আরও আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কোথায়?
যদিও এখন পর্যন্ত জাতিসংঘ বা বড় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো সরাসরি কোনো বিবৃতি দেয়নি, তবে গাজার প্রশাসনের দাবি অনুযায়ী তারা এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থা ও আইনজীবী সংগঠনগুলো ইতোমধ্যেই এই ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করেছে এবং জড়িত সংস্থাগুলোর কার্যক্রম সাময়িক বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
ভবিষ্যৎ কী?
এই ঘটনার পর গাজার জনগণের মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে। তারা প্রশ্ন তুলছে—ত্রাণের নাম করে এখন আর কী কী ধ্বংস আসবে তাদের জীবনে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই ঘটনার বিচার হওয়া উচিত আন্তর্জাতিক আদালতে। কারণ, এটি কেবল একটি অঞ্চল নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধ।”
সারসংক্ষেপঃ
গাজার মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ হলো বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। অথচ সেই ত্রাণই যদি হয়ে ওঠে এক জাতিকে ধ্বংসের হাতিয়ার, তবে ভবিষ্যৎ কীভাবে বাঁচে? এই প্রশ্ন শুধু গাজার নয়, মানবতা ও ন্যায়ের পক্ষের প্রতিটি মানুষের।
এম আর এম – ০০৮১, Signalbd.com