আঞ্চলিক

পুরুষদের তুলনায় নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি, কিন্তু কেন?

 গবেষণায় দেখা গেছে, স্ত্রীরোগ-হরমোন পরিবর্তন থেকে মানসিক চাপ–নারীদের স্ট্রোক ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি। আধুনিক জীবনধারায় প্রাত্যহিক নজর ও সচেতনতা জরুরি।

বর্তমানে নারী ও পুরুষ উভয়ের স্ট্রোক ঝুঁকি বেড়েই চলেছে। তবে গবেষণা বলছে, নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি – বিশেষ করে নির্দিষ্ট বয়সে – পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশি।

কেন নারীদের ঝুঁকি বেশি?

  1. হরমোনীয় পরিবর্তন
    গর্ভাবস্থা, গর্ভনিরোধক ওষুধ, মেনোপজ—এই পরিবর্তনগুলো নারীদের হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
  2. মানসিক চাপ ও বিষণ্ণতা
    আধুনিক জীবনে নারীদের ওপর বাড়ছে পরিবার, কর্ম ও সামাজিক দায়িত্ব। এর সঙ্গে যুক্ত উদ্বেগ ও বিষণ্ণতা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  3. মাইগ্রেন বিশেষ করে অরা-যুক্ত মাইগ্রেন
    এই ধরনের মাইগ্রেন নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যায় এবং এটি ইস্কেমিক স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস
    নিয়মিত রক্তচাপ–ডায়াবেটিস না নিয়ন্ত্রণে রাখলে নারীদের ক্ষেত্রে স্ট্রোকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
  5. ধূমপান, স্থূলতা ও ঘুমজনিত সমস্যা
    ধূমপান ও ওজন বাড়লে স্ট্রোক ঝুঁকি দ্বিগুণও হতে পারে। অপর দিকে, ১০ ঘণ্টা বা তার বেশি ঘুম দায়িত্বরত নয়; গবেষণায় দেখা গেছে, এটি স্ট্রোকের ঝুঁকি ৬৩% পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে; উপযুক্ত ঘুম হচ্ছে রাত্রে সাড়ে ৭ ঘন্টা।
  6. অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন
    অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (AFib) নারীদের স্ট্রোক ঝুঁকি প্রায় ৫ গুণ বাড়িয়ে তোলে।

বয়স ও লিঙ্গভিত্তিক পার্থক্য

  • কিশোরী ও যুবতীদের ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি
  • মধ্যবয়সে প্রবেশের পর পুরুষদের ঝুঁকির হার বেশি হলেও,
  • ৮৫ বছরের পরে নারী স্ট্রোক ঝুঁকিতে এগিয়ে, কারণ মেয়েদের গড় আয়ু বেশি, ফলে দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও হরমোন বদল বেশি।

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া

  • স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি সেবা বিলম্ব
    অনেক নারী সময়মতো হাসপাতালে পৌঁছায় না, ফলে মূখব্যথা, অঙ্গ বিকল, প্যারালাইসিসসহ দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
  • সচেতনতা ঘাটতি
    অনেকেই মনে করেন, স্ট্রোক পুরুষদের রোগ, ফলে নারীরা সচেতনতা থেকে পরে থাকেন।
  • পারিবারিক ও সামাজিক স্তরে কম নজর
    বাড়তি দায়িত্ব ও সময় না থাকায় নারীরা তাদের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে পারেন না।

পরিসংখ্যান দ্বারা যুক্তি

  • বিশ্বে স্ট্রোক আক্রান্তের প্রায় ৬০% নারী।
  • সংস্থাগুলো জানাচ্ছে, নারীদের স্ট্রোক তিন নম্বর মৃত্যুর কারণ।
  • সিডিসি অনুসারে, তিনজন নাটকীয় উচ্চ রক্তচাপভোগীর অর্ধেকই এখনও তা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি।

বিশেষজ্ঞদের মতামত

ড. পি. এন. শৈলজা, স্নায়ুবিশেষজ্ঞ:

“নারীদের স্ট্রোক ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় অধিক কারণ দীর্ঘমেয়াদি হরমোন পরিবর্তন, উচ্চ রক্তচাপ ও মানসিক চাপের সংমিশ্রণ।”

স্থূলতা ও স্থিতিশীল জীবনধারায় নিয়ন্ত্রণে না থাকলে,

“নারীরা অনায়াসে স্ট্রোকের ঝুঁকিতে চলে যায়।” – স্থানীয় কর্ডিয়াক বিশেষজ্ঞ।

রক্ষা পন্থা (Prevention Tips)

  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
    রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস চেক, বিশেষ করে ৩৫+ বয়সী নারীদের প্রতি ছয় মাস অন্তর।
  • মানসিক চাপ মোকাবিলা
    যোগ-বায়াম ও মেডিটেশন: দিনে অন্তত ৩০–৪০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম।
  • স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
    ফল, শাক-সবজি, দানা-বাদাম ও মাছ-ভূঞা যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করা।
  • ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার
    যেকোনো স্থিতিশীলতা থাকলে তামাক ও মদ্যপানসম্পাদক অভ্যাস ছেড়ে দিন।
  • ঘুমের মান রক্ষা
    প্রতিরাতে ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম ও মধ্যরাত্রে নাক ডাকা হলে চিকিৎসা করা।

উপসংহার

নারীদের স্ট্রোক ঝুঁকির সাথে এখন আরড় নয়— এটি একটি বাস্তবতা। মানসিক চাপ, হরমোন পরিবর্তন, জীবনধারণ– সব মিলিয়ে নারীরা এই রোগে প্রবণ। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা, জীবনধারণী পরিবর্তন ও প্রাথমিক সতর্কতা জরুরি

বাংলা নারীরা নিজেদের স্বাস্থ্য পরিচালনায় মেধা, সময় ও যত্ন দানে এগিয়ে না এলে, ভবিষ্যতে বৃদ্ধাবস্থায় ভুগতে হবে স্ট্রোকজনিত বিপদে। তাই এখনই শুরু করুন সুরক্ষার ব্যবস্থা।

এম আর এম – ০০৮০, Signalbd.com

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button