বিশ্ব

তেহরানে ঐতিহাসিক গণজানাজা ও শোক মিছিল, হাজারো মানুষের উপস্থিতি

তেহরান শহর আজ একত্রিত হয়েছে শোকের ছায়ায়। গত ১৩ জুন ইসরায়েলের নির্মম হামলায় নিহত হওয়া ৬০ জনেরও বেশি ইরানি নাগরিকের জন্য বড় পরিসরে গণজানাজা ও শোক মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ কালো পোশাক পরে, হাতে ফুল, তসবি ও প্রিয় নেতাদের ছবি নিয়ে এই শোকযাত্রায় অংশ নেন।

ইরানের ইতিহাসে এক গভীর শোকের দিন

আজকের দিনটি ইরানের সামরিক ও নাগরিক জীবনে এক মর্মান্তিক অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই হামলায় শহীদ হয়েছেন ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণুবিজ্ঞানী, সাংবাদিক, নারী ও শিশুসহ নানান সাধারণ মানুষ। তাদের কফিন টানা বড় বড় ট্রাকে করে শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে হাজার হাজার শোকার্ত মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাঁদের শেষ বিদায় জানান।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হওয়া এই শোক মিছিল আজাদি স্কয়ারে গিয়ে সমাপ্ত হয়। সেখানে শহীদদের কফিন রাখা হয়, আর মানুষ জনাজায় অংশ নিয়ে, তাদের আত্মত্যাগের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

শোক ও প্রতিবাদের এক অসাধারণ মিলন

শহীদদের স্মৃতিতে হাজারো মানুষের একত্রিত হওয়া কেবল শোক প্রকাশই নয়, এটি ছিল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের এক ভয়াবহ বার্তা। অনেকেই প্ল্যাকার্ড হাতে “ইসরায়েল মুছে ফেল” ও “আমরা আমাদের শহীদদের প্রতিশোধ নেব” লিখিত স্লোগান দিয়েছিলেন। তেহরানের রাস্তায় শোক আর রোষ একসাথে বুকে ধারণ করে বহু মানুষ চিৎকার করছিলেন, যাতে তাদের ক্ষোভ স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও এই শোক মিছিলে অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। তিনি বলেছিলেন, “আমাদের শহীদরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় চিরকাল স্মরণীয় থাকবেন। এ হামলা আমাদের একতাকে আরও দৃঢ় করেছে।”

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের পেছনের বাস্তবতা

গত ১৩ জুন, ইসরায়েল গোপনে ইরানের বিভিন্ন সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, যা ইরানের জন্য ছিল গভীর আঘাত। একাধিক সামরিক কমান্ডার, পরমাণুবিজ্ঞানী, সহ অসংখ্য বেসামরিক মানুষ নিহত হন। এই হামলা ইসরানের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে সম্পূর্ণ ব্যাহত করে।

তবে ইরানও পাল্টা জবাব দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সংঘাত ১২ দিন টানা চলে, যার মাঝে যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। এই সংকট দীর্ঘায়িত হওয়ায় গোটা অঞ্চলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তবে ২৪ জুন একটি যুদ্ধবিরতিতে দুই দেশ উপনীত হয়, যা সাময়িক হলেও শান্তির আলো দেখায়।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ

ইসরায়েল-ইরান সংঘাত শুধু মধ্যপ্রাচ্যের সীমাবদ্ধ নয়, এটি বিশ্ব রাজনীতিরও একটি গুরত্বপূর্ণ অধ্যায়। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য বিশ্বশক্তির এই সংঘাতে ভূমিকা এবং মধ্যস্থতা ভবিষ্যতে শান্তি স্থাপনে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা এখনো অনিশ্চিত। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সংঘাতের মূল কারণগুলো মূলত সামরিক আধিপত্য ও পারমাণবিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ।

শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা: সারা দেশজুড়ে সমবেদনার ঢেউ

তেহরানে আজকের গণজানাজা ও শোক মিছিল শুধু একটি শহরের ঘটনা নয়; এটি সমগ্র ইরানের হৃদয়ে শোক ও প্রতিরোধের অঙ্গন তৈরি করেছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও শোক জানাতে মানুষ এসেছে তেহরানে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আজ একযোগে শহীদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেছে।

নারী, শিশু, বয়স্ক থেকে শুরু করে যুবক, সকলেই কালো পোশাক পরিধান করে ছিল। তাঁদের হাতের তসবি, প্রিয় নেতাদের ছবি ও ফুল শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধার প্রতীক।

আগামী দিনগুলোর জন্য প্রস্তুতি ও শোক সারা দেশজুড়ে

ইরানের সরকার এবং সামরিক বাহিনী এই ঘটনায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে, তারা দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে। তেহরানের শোক মিছিলে অংশ নেওয়া অনেক তরুণরা বলছিলেন, “আমরা শহীদদের স্বপ্ন পূরণ করব। এ হামলা আমাদের ঐক্যকে ভাঙতে পারবে না।”

শহীদদের পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাতে এবং নিরাপত্তা জোরদারের জন্য ইরানের সরকার নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা পরিষদ ও অন্যান্য বিশ্বমঞ্চেও ইরানের পক্ষে চাপ তৈরি করার প্রচেষ্টা চলছে।

মূল বিষয় সমূহ:

  • ইসরায়েলের হামলায় ইরানের ৬০+ শহীদের জানাজা ও গণশোক
  • তেহরানে হাজারো মানুষের কালো পোশাক পরিধানে শোক মিছিল
  • শহীদদের মধ্যে সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণুবিজ্ঞানী, সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশু
  • ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পেছনে রাজনৈতিক ও সামরিক কারণ
  • দুই দেশের মধ্যে ১২ দিনব্যাপী সংঘাত ও ২৪ জুন যুদ্ধবিরতি
  • ইরানের প্রেসিডেন্টের শোক
মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button